আজ রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ ইং

মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কে?

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৬-০২-১৭ ০০:০৯:৪৩

শাকিল জামান, মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ :: মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এমএজি ওসমানীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তাই আজকের এই দিনে একটা বহুল প্রচলিত ভুল তথ্য নিয়ে লেখার প্রয়াস করলাম।

বাংলাদেশের অনেকেই মনে করেন- ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ছিলেন জেনারেল এমএজি ওসমানী। কিন্তু তা একেবারেই ভুল; জেনারেল ওসমানী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি।

একটি দেশের তিন বাহিনীর তিনজন প্রধান থাকেন এবং তিন বাহিনী মিলে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হন ঐ দেশের রাষ্ট্রপতি।

দেশ যদি কোনো যুদ্ধে অংশ নেয় তবে তিন বাহিনী প্রধান থেকে একজনকে প্রধান সেনাপতি করা হয়, যার নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালিত হয়। কিন্তু যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক সবসময়ই রাষ্ট্রপতি।

আমরা জানি, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ মুজিবনগর সরকারের অধীনে পরিচালিত হয়। তৎকালীন অবসরপ্রাপ্ত লেফট্যানেন্ট কর্নেল এমএজি ওসমানীকে মুজিবনগর সরকার কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি নিয়োগ করা হয়। আর মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই এ নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকা উচিত নয় যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক।

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রণীত হয় যেটি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে সংবিধান হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলো। এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে গঠিত সরকার দ্বারাই ওসমানীকে কমান্ডার ইন চিফ, এম এ রব কে চীফ অব আর্মি স্টাফ এবং এ কে খন্দকার কে ডেপুটি চীফ অব স্টাফ  নিয়োগ করা হয় এবং পুরো দেশকে ১১ টি সেক্টরে বিভক্ত করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করা হয়। সেই ঘোষণাপত্রের কিছু অংশ আপনাদের তুলে ধরছি-
Do hereby affirm and resolve that till such time as a Constitution is framed, Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman shall be the President of the Republic and that Syed Nazrul Islam shall be the Vice-President of the Republic, and

That the President shall be the Supreme Commander of all the Armed Forces of the Republic......

মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কে ছিলেন? এমন প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাজ উদ্দিন আহমদ। তার ব্যাখ্যায়- "commander in chief এর বাংলা তরজমা সর্বাধিনায়ক নয়; প্রধান সেনাপতি।  আমাদের সরকার সামরিক সরকার নয়। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় তিন বাহিনীর তিনজন প্রধান থাকেন। রাষ্ট্রপতি তিন বাহিনীর সমন্বয়ক হিসেবে তিনিই হন সর্বাধিনায়ক।

সূত্র: একাত্তরের রণাঙ্গন অকথিত কিছু কথা (১৯৯১)।

মুক্তিযুদ্ধের এস ফোর্সের প্রধান ও সেক্টর কমান্ডার কেএম সফিউল্লাহ বলেন- অনেকেই এই ভুলটা করেছেন। এর কিছুটা ইচ্ছাকৃত, কেউ ভুল করে করেন। একটি দেশ ও যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক সব সময় রাষ্ট্রপতি। এমএজি ওসমানী ছিলেন মুক্তিফৌজের প্রধান সেনাপতি।

যেহেতু রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাই তিনিই মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক (Supreme Commander)।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর একটি কুচক্রিমহল ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দেয়ার অপচেষ্টা করে। যার ধারাবাহিকতায় কখনো জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক, কখনো জেনারেল ওসমানীকে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বানিয়ে দিয়েছে। এমনকি প্রাথমিক পাঠ্যপুস্তকেও ভুল তথ্য পরিবেশন করেছিলো। যার দরুন অনেকেই ছোটবেলায় ভুল পড়ার  কারণে জেনারেল ওসমানীকে সর্বাধিনায়ক মনে করে।

ধীরে ধীরে সব অন্ধকার কেটে যাচ্ছে, নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা করছে, সত্যকে খুঁজে নিচ্ছে।

আসুন, জেনারেল ওসমানীর মৃত্যুবার্ষিকীতে এই বিতর্কের অবসান টানি। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীকে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/এসজে/এএস

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন