আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

জগন্নাথপুরের বেহাল সড়ক, জনসাধারনের ভোগান্তি চরমে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-০৭-১৬ ১৩:৪২:১৮

সানোয়ার হাসান সুনু, জগন্নাথপুর ::   সরকার দলীয় ঠিকাদারদের হাতে জগন্নাথপুর উপজেলাবাসী জিম্ম হয়ে পড়েছেন। ঠিকাদারদের খামখেয়ালীপনার কারণে জগন্নাথপুর উপজেলার কয়েকটি সড়কের নির্মান কাজ আটকে আছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। মন্ত্রীর এলাকার রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশার বিষয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

প্রায় অর্ধযুগ ধরে জগন্নাথপুরের অধিকাংশ রাস্তা-ঘাটই যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রাস্তাগুলোর এমন দশা হয়েছে পায়ে হেটে চলাফেরা করাও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে অবাক কান্ড হচ্ছে, যে ঠিকাদাররা হাওরের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে হাওর ডুবিয়েছে, এরাই সড়ক নির্মানের কোটি কোটি টাকার কাজ ভাগিয়ে নিয়েছে। এরা কোটি কোটি টাকার কাজ ভাগিয়ে নিলেও রহস্যজনক কারণে রাস্তার সংস্কার কাজ করছে না। এই টেন্ডারবাজ যুবলীগ নেতাদের হাতে অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছেন উপজেলাবাসী।

জগন্নাথপুরে প্রতিমন্ত্রী এম.এ মান্নানের প্রচেষ্টায় বিভিন্ন সড়কে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও টেকসই কোন উন্নয়ন হচ্ছে না, এর সুফল উপজেলাবাসী পাচ্ছেন না এবং বরাদ্দকৃত টাকার অধিকাংশই সরকারি দলের নেতাকর্মীরা লুটপাট করে নিচ্ছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। সৎ সৎজন ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত অর্থ পরিকল্পনা প্রতি মন্ত্রী এম.এ মান্নানের উন্নয়ন ম্লান করতে সড়কগুলোর কাজ অসমাপ্ত রেখে জনগনকে অবনর্ণীয় দূর্ভোগে ফেলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় হাওড়ের বোরো ফসল ডোবানো এক ঠিকাদারের বিরোদ্ধে। এ নিয়ে জগন্নাথপুর উপজেলাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের অন্ত নেই। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক ও আইনগত জটিলতার কারণে দুর্ভোগ থেকে রেহাই মিলছেনা জগন্নাথপুরবাসীর।

অন্যদিকে সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা দেওয়ার পরও রাস্তার কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে না, ফলে এ নিয়ে জনমনে বিরোপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতি মন্ত্রী এম.এ মান্নানের প্রচেষ্টায় জগন্নাথপুরের শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন কার্যক্রম হচ্ছে। কিন্তু সুযোগ সন্ধানী কিছু দলীয় ঠিকাদারের কারণে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড ম্লান করতে দিনের পর দিন সড়কের কাজ অসমাপ্ত রেখে জনসাধারনকে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে।

জগন্নাথপুর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, স্থানীয় সংসদ সদস্য অর্থ পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম.এ মান্নানের নির্দেশে জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ-সিলেট সড়কের কেউনবাড়ী পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার অংশে ৩ কোটি টাকার সংস্কার কাজ চলছে। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ৮ মাসে ৩০ ভাগ কাজও সম্পন্ন হয়নি। এরিমধ্যে ঠিকাদারদের খামখেয়ালীপনার কারণে তিন জন ঠিকাদার বদল করা হয়েছে। বর্তমান ঠিকাদারও কাজ ফেলে চলে গেছে। দলীয় ঠিকাদারদের ফ্রিট্রাইল দুর্নীতিতে স্থানীয় এলজিইডি অফিসও হতাশা প্রকাশ করেছে।

অপরদিকে ভবের বাজার-সৈয়দপুর-নয়াবন্দর-কাঠালখাইড় সড়কের ১১ কিলোমিটার অংশে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকার কাজের ঠিকাদারী পায় যুবলীগ নেতা সজিব রঞ্জন দাস সল্টু এর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ঐ ঠিকাদাররা জগন্নাথপুরের নলুয়া ও মই হাওরের ফসল রক্ষা বেঁরী বাধ নির্মান কাজের বরাদ্দ নিয়ে সময়মত কাজ না করায় হাওর তলিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। ইতিপূর্বে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক মিছিল মিটিং ও সমাবেশ করেছে এলাকাবাসী।

আশ্চর্যজনক ভাবে জগন্নাথপুরের হাওর ডুবীর খলনায়ক ঠিকাদার সজিব রঞ্জন দাসের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবার জগন্নাথপুরের মানুষকে ভবের বাজার-সৈয়দপুর-নয়াবন্দর-কাঠালখাইড় সড়কের কাজ না করে অবনর্ণিয় দূর্ভোগে ফেলে দিয়েছে। অথচ শুরুতেই তারা ৪ কোটি টাকার এই কাজটি ভাগিয়ে নেয়।

অভিযোগ উঠেছে, সজিব রঞ্জন দাসের ব্যবসায়ীক অংশীদার উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা সৈয়দ মাছুম আহমদ কাজ নিয়ে কিছু কাজ করে অধিকাংশ কাজ ফেলে রেখেছেন। ২০১৬ সালের ১০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ঐ সময়ে কাজ করতে তারা ব্যর্থ হয়। নিয়মানুযায়ী ৫০০ মিটার ভাঙ্গার পর ৫০০ মিটারের  কাজ শেষ করে আরও নতুন ৫০০ মিটার ভাঙ্গার কথা থাকলেও মেশিনের টাকা বাছাতে পুরো সড়কের অংশ ভেঙ্গে রেখেছেন তারা।

এলজিইডির ঐ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান জানান আমরা চারবার ঠিকাদারকে তাগিদপত্র দিয়ে কাজ শেষ করানোর চেষ্টা করে প্রায় ৩৫ শতাংশ কাজ করিয়েছিলাম। গত বছরের অক্টোবর মাসে চুক্তি বাতিলের চিঠি দিলে ঠিকাদার ২০১৬ সালে ১৭ নভেম্বর হাইকোর্টের স্মরনাপন্ন হয়ে কাজের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য রিট পিটিশন দায়ের করেন। যার প্রেক্ষিতে ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ঐ সময়ে আরও কিছু কাজ করেন। পরবর্তীতে আরও ৩ মাস সময় বৃদ্ধির আবেদন করেন। আদালত আরও ৩ মাস সময় বাড়িয়ে দেন। যার সময়সীমা উত্তীর্ণ হয় চলতি বছরের ৩০ শে মে ঐ সময়ের কাজের বিল উত্তোলন করেন ১ কোটি ৯৭ লাখ ৯২ হাজার ৫৪২ টাকা।  কিন্তু আদালতে সময়সীমা ও নির্দেশনার সময় পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদার কাজ ফেলে এলাকার লাখ মানুষকে জনদুর্ভোগে ফেলে রেখেছেন।

মন্ত্রীর সমর্থদের অভিযোগ উক্ত ঠিকাদার সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট ও জেলা যুবলীগের আহবায়ক খায়রুল হুদা চপলের ঘনিষ্ঠজন ও ব্যবসায়ীক অংশীদার হওয়ায় শুধু মাত্র রাজনৈতীক প্রতিহিংসার কারণে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম.এ মান্নানের ভাবমুর্ত্তি ক্ষুন্ন করতে ইচ্ছে করে কাজ ফেলে রেখেছেন।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য অর্থ পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম.এ মান্নানের সাথে আলাপ হলে তিনি বলেন, জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন মূলক কাজ হয়েছে। রানীগঞ্জের কুশিয়ারা সেতু, পাগল-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি-ঢাকা আঞ্চলিক সড়কে নতুন ৮টি ব্রীজসহ সড়ক মেরামতের জন্য ব্যাপক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদাররা যথাসময়ে রাস্তাগুলোর কাজ না করে সরকারের ভাবমুর্ত্তি ক্ষুন্ন করছে। এরা সরকারকে জিম্মি করার চেষ্টা করছে। এদের বিরোদ্ধে কটোর ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে।  

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সাথে আলাপ হলে তিনি বলেন, ঐ ঠিকাদাররা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ না করলে তাদেরকে একাধিকবার আমরা তাগিদপত্র দেই। কিন্তু আমাদেরকে তারা বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখায় এবং আমাদের কোন কথাই তারা শুনেনি। ফলে বাধ্য হয়ে চুক্তির কার্যাদেশ বাতিল করি। পরে হাইকোর্টে রিট করলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কের কাজটি করার নির্দেশনা দেওয়ার পরও ঐ ঠিকাদার হাইকোর্টের নির্দেশ মানছেন না।

এ ব্যাপারে যুবলীগ নেতা সজিব দাস সল্টু’র ঠিকাদারী ফার্মের অংশীদার আওয়ামীলীগ নেতা সৈয়দ মাছুম আহমদের সাথে আলাপ হলে তিনি জানান, এ কাজ পাওয়ার পর তৎসময়ে জুন মাসে বন্যা দেখা দিলে কাজটি যথাসময়ে করা যায় নি। উপজেলা প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলীর চাহিদা মেটাতে না পারায় হঠাৎ করে তারা আমাদের কাজের চুক্তির কার্যাদেশ বাতিল করেন। এরপর আমরা হাইকোর্টে রিট করলে বিচাপতি সালমা মাসুদ ও মোঃ ইজহারুল হক আকন্দ এর দ্বৈত বেঞ্চ কার্যাদেশ বাতিল স্থগিত ঘোষনা করেন এবং নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপজেলা প্রকৌশলীসহ কর্তৃপক্ষকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে কেন এই সিদ্ধান্ত অবৈধ হবে না এই মর্মে রুল জারী করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা এর জবাব দেন নি। রুলের জবাব না দেওয়ায় হাইকোর্ট থেকে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় রাস্তার কাজ বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া বন্যার কারণে সড়কের কাজের ধরনও পাল্টে গেছে। এ অবস্থায় কাজ করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, আমি প্রায় ২ কোটি টাকা উত্তোলন  করেছি এবং রাস্তার অর্ধেকের বেশী কাজ হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।        

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৬ জুলাই ২০১৭/এমএসএইচএস/এসডি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন