আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটের রুবার হাতে দেশসেরার পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-০৭-১৬ ১৭:৪১:১৪

প্রনঞ্জয় বৈদ্য অপু, বিশ্বনাথ :: মৎস্যচাষে অবদান রাখার জন্য নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার-১৪২২’ পেলেন সিলেটের বিশ্বনাথের রুবা খানম। ২০১২ সালে একান্ত শখের বসে বাড়ির পুকুরে মায়ের শুরু করা মাছচাষের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে যোগ্যতা ও পরিশ্রম দিয়ে রুবা নিজেকে আজ নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে দেশসেরার এ পুরস্কার গ্রহণ করে রুবা খানম বিশ্বনাথ উপজেলা তথা সিলেটবাসীকে করেছেন আলোকিত।

ঢাকা ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আজ রবিবার দুপুরে রুবা খানমকে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার-১৪২২’ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রুবা বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের রামধানা গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী দম্পতি জয়নাল আবেদীন ও আফিয়া খানমের কনিষ্ঠা কন্যা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পংকি খানের ভাগ্নি।

জানা গেছে, শখের বসেই বাড়ির পুকুরে ২০১২ সালে মাছচাষ শুরু করেন রুবা খানমের মা প্রবাসী আফিয়া খানম। অল্প পরিশ্রমে তিনি এতে ব্যাপক সফলতা পান। সফলতা পাওয়ার কারণে আফিয়া খানম ২০১৩ সাল ৬ বিঘা জমিতে ২টি পুকুর করে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন মাছচাষ। প্রথম বছরেই মাছচাষ থেকে আফিয়া খানম আয় করেন প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। সফলতা তাঁর (আফিয়া) সঙ্গী থাকায় তাঁকে আর পেছনে থাকাতে হয়নি। তিনি মাছচাষের পাশাপাশি সবজি চাষও শুরু করেন। এতেও তিনি সফলতা পান।

মায়ের এমন সফলতা দেখে উৎসাহিত হয়ে মাছ ও সবজি চাষের সকল দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন রুবা খানম। ২০১৪ সাথে রুবা খানম দায়িত্ব গ্রহণের পর পূর্বের ৬ বিঘার সাথে আরোও ৪ বিঘা যোগ করে নতুন আরেকটি পুকুর তৈরী করে শুরু করেন মাছচাষ। আর এতে মায়ের মতো রুবা খানমও মাছচাষে পেতে শুরু করেন একের পর এক সফলতা। মাছচাষে সফলতা হিসেবে ২০১৫ সালে উপজেলা পর্যায়ে ও ২০১৬ সালে জেলা পর্যায়ে ‘সফল সমন্বিত মাছচাষ উৎপাদনকারী’ হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার পান ‘আফিয়া খানম ফিসারিজ’র সত্ত¡াধিকারী রুবা খানম।

মাছচাষের পাশাপাশি নিজেদের বাসা-বাড়ি ও পুকুর পাড়সহ প্রায় ২ বিঘা জমিতে রুবা খানম করেছেন সবজি চাষ। এতে রয়েছে শিম, বর্ষাকালীন টমোটো, নাগা মরিচসহ নানান ধরনের মৌসুমভিত্তিক সবজি। আর সবজি চাষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করছেন জৈব পদ্ধতি তৈরী ‘ভার্মি কম্পোস্ট’ সার। এর পাশাপাশি বাবা জয়নাল আবেদীনের প্রতিষ্ঠিত করা গরুর খামার নিজের দায়িত্বে আনার পর থেকে বছর প্রায় ১ লাখ টাকার দুধ বিক্রি করছেন রুবা খানম। তাঁর খামারে রয়েছে উন্নতমানের ১০টি গরু। এর মধ্যে ৪টি আছে গাভী।

রুবা খানম ফিজারিজের দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৪ সালে মাছ বিক্রি থেকে আয় করেন প্রায় ৫ লাখ টাকা ও ২০১৫ সালে আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় সাড়ে ৫ লাখ টাকায়। সবজি চাষ থেকে প্রতি বছর রুবা খানমের আয় রয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। ২০১৬ সালে মাছচাষ থেকে করা আয় গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৮ লাখ টাকায়।

মায়ের সফলতা দেখে মাছ ও সবজি চাষের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে আজ দেশসেরার পুরস্কার পাওয়ায় বিশ্বনাথ উপজেলা তথা সমগ্র সিলেটবাসীকেই যেন আলোকিত করেছেন রুবা খানম। নিজের ভবিষ্যৎ সফলতার জন্য তিনি সবার কাছে সহযোগীতা ও দোয়া কামনা করেছেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে ‘রেণু পোনা উৎপাদন ও মৎস্যচাষে অবদান’র জন্য ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার-১৪১৮’ পান বিশ্বনাথের আরেক কৃতি সন্তান বেলাল আহমদ ইমরান। তাঁর বাড়িও উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের রামধানা গ্রামে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৬ জুলাই ২০১৭/পিবিএ/আরআই-কে

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন