আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

মহসীন আলীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আজো অশ্রু ঝরে তার জন্য

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-০৯-১৪ ১১:৪৭:৩৪

শিমুল তরফদার, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি :: প্রয়াত বীরমুক্তিযোদ্ধা সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর ২য় মৃতু্যুবার্ষিকী আজ (১৪ সেপ্টেম্বর)। ২০১৫ সালের এই দিনে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা, নিরঅহংকারী, সর্বোপরি এক উদার হৃদয়ের মানুষ ছিলেন প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী। ১৯৭১ সালে জীবন বাজী রেখে লড়েছেন দেশ স্বাধীন করতে। যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করার প্রয়াসে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রচুর কাজ করেছেন তিনি। তৃণমূল থেকে উঠে আসা কর্মপ্রিয়, সদাহাস্যোজ্জ্বল ও বন্ধুবৎসল সৈয়দ মহসিন আলী সাধারণ মানুষের হৃদয়ে তাই দ্রুত স্থান করে নিতে পেরেছিলেন।

গণমুখী রাজনীতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র সৈয়দ মহসিন আলী নিজের নেতা কিংবা মন্ত্রী পরিচয়কে ভুলে কাছে টেনে নিতেন তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। এই মহসিন আলীর জন্য কেউ ভাইকে বাঁচাতে পেরেছে। কেউ মায়ের চিকিৎসা করাতে পেরেছে। আবার কেউ খাবার খেয়েছে মহসিন আলীর বাড়িতে। সৈয়দ মহসিন আলী নেই একথা মনে হলে অনেকে আজো কাঁদছেন অঝোরে। অসহায় ও নিঃস্বদের চোখে মুখে স্পষ্ট হয়ে উঠছে মহসিন আলীর জন্য হাহাকার।
সংসদ সদস্য হওয়ার আগে মৌলভীবাজার পৌরসভায় পরপর ৩ বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন মহসিন আলী।

২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি বিএনপি নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানকে বিপুল ভোটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় একই আসন থেকে আবারও নির্বাচিত হন। সে বছর তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সে দায়িত্ব পালন করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ছাত্র জীবনেই রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ২৩ বছর বয়সে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। দেশমাতৃকার প্রতি তার মমত্ববোধের কারণে স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। সম্মুখসমরে যুদ্ধচলাকালে গুলিবিদ্ধও হয়েছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি সিলেট বিভাগে সিএনসি স্পেশাল ব্যাচের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীন বাংলার বঞ্চিত সব মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কাজ করেছেন তিনি। সমাজকল্যাণে তিনি এভাবেই তার নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে গেছেন।

মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে জেলা আওয়ামী লীগেরও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতাত্তোরকালে তিনিই একমাত্র জননেতা যিনি পৌরসভায় পর পর ৩ বার বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে তাকে শ্রেষ্ঠ পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করে। ২০১৪ সালের ১২ই জানুয়ারি তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলোকে ঢেলে সাজিয়েছেন। সেখানে এখন বহুমুখী বাস্তবসম্মত প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সমাজসেবায় অবদান রাখার জন্য তিনি ভারতের নেহেরু সাম্য সম্মাননা ও আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন সম্মাননা স্বর্ণপদক লাভ করেন। সাহিত্য ও সাংবাদিকতা ছিলো তার পছন্দের বিষয়। অবসরে তিনি বই পড়তে ভালবাসতেন। কবি-লেখকদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডা দিতেন। দেশের বড় বড় সাংবাদিকদের অনেকেই ছিলেন তার ব্যক্তিগত বন্ধু। তিনি এক সময় বাংলাদেশ টাইমসের প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গান তার প্রিয় একটি বিষয়। ধ্রুপদী, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরণের গানই তার মুখস্তছিলো। তার স্মৃতিতে প্রায় ৫ হাজার গানের সংগ্রহ ছিলো। তার প্রিয় সংগীত ছিলো মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য।

সংস্কৃতিমনা ও প্রগতিশীল সৈয়দ মহসিন আলী এক সময় বেতারের শিল্পী ছিলেন। শেষ জীবনে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে গলার সুর, তাল, লয় হারিয়ে গিয়েছিল। তবুও মজলিশি আড্ডায়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এমন কি সংসদেও শিশুর সারল্যতা নিয়ে গান গাইতেন।

সৈয়দ মহসীন আলীর বাবার নাম সৈয়দ শরাফ আলী। তিনি ব্যবসায়ী ছিলেন। সৈয়দ মহসীন আলীর মায়ের নাম আছকিরুনন্নেছা খানম। মৌলভীবাজার থেকে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে তিনি কলকাতা চলে যান। কলকাতার আলীপুরে ছিলো তার বিশাল  বাড়ি। আলীপুরের সেই বাড়িতে ১৯৪৮ সালের ১২ই ডিসেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ৫ ভাইদের মধ্যে তিনি সবার বড় ছিলেন। সৈয়দ মহসিন আলীর শিক্ষা জীবন শুরু হয় কলকাতায়। তিনি কলকাতার সেন্ট জেবিয়ার্স স্কুলে জুনিয়র কেম্ব্রিজ ও সিনিয়র কেম্ব্রিজ পাস করেন। পরবর্তীকালে আবার বাংলাদেশে এসে বাংলা মাধ্যমে কিছুদিন পড়াশুনা করেন। পরে আবারও তিনি কলকাতা থেকে ম্যানেজমেন্টে ডিপ্লোমা করেন। মহসিন আলী স্বপ্ন দেখতেন আধুনিক মৌলভীবাজার গড়ার। মৌলভীবাজারে সমাজকল্যাণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও জেলা সদরের ২৫০ শয্যার হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজে উন্নীত করার কথা বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সুধী সমাজের সঙ্গে আলোচনায় প্রায়ই  বলতেন। অথচ শত শত মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নে যিনি কাজ করে গেছেন আমৃত্যু তার স্বপ্নই রয়ে গেছে অপূর্ণ।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭/এসটি/এমকে-এম

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন