আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

জামাত-শিবিরের হরতাল, সিলেটের রাজপথ ছিল আ. লীগ-ছাত্রলীগের দখলে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-১০-১৩ ০০:০৮:৪৩

মারুফ খান মুন্না :: অস্ত্র ও বিস্ফোরক এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনের পৃথক দুই মামলায় জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান আমির মকবুল আহমাদ ও সেক্রেটারি জেনারেলসহ আট নেতার রিমান্ডের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছিল জামায়াতে ইসলামী। আটক ও রিমান্ড প্রাপ্তদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল সিলেটের শফিকুর রহমান থাকায় হরতাল নিয়ে ঝুকিতে ছিল সিলেট বিভাগ। জামায়াতের ডাকা হরতালে নাশকতার আশঙ্কায় নগরীতে কঠোর অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্রসাশন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ মাঠে থাকায় সিলেটে হরতাল ডেকে মাঠেই নামতে পারেনি জামায়াত-শিবির।

সিলেট মহানগরীতে হরতাল বিরোধী মিছিলে রাজপথে তৎপর ছিলো ছাত্রলীগ। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মিছিলটি সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে শুরু হয়ে নগরীর কোর্ট পয়েন্টসহ বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌহাট্টা পয়েন্টে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল বাছিত রুম্মান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষার এবং সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাস অনিক।

এছাড়াও জামায়াতের ডাকা হরতালকে প্রত্যাখান করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ এবং মদনমোহন কলেজ ছাত্রলীগ শাখা। শাবিতে বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. রুহুল আমিনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি ফুডকোর্ট থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে চেতনা একাত্তরের পাদদেশে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় সদস্য ও শাখা যুগ্ম সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম সবুজের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সদস্য ও শাখা সিনিয়র সহসভাপতি আবু সাঈদ আকন্দ। অপরদিকে, মদন মোহন কলেজ ছাত্রলীগের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার জামায়াতের ডাকা হরতালের প্রতিবাদে দুপুর সাড়ে ১২টায় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে একটি হরতাল বিরোধী মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি রিকাবীবাজার ও লামাবাজার সড়ক প্রদক্ষিণ করে কলেজ শহিদ মিনারে এক সমাবেশে মিলিত হয়।

এদিকে, সিলেটের সকল জেলা ও উপজেলায় সাধারণ মানুষের মধ্যে হরতালের কোন প্রভাব ছিলনা। হরতালের সমর্থনে নগরীতে কিংবা সিলেট বিভাগের কোথাও মিছিল অথবা পিকেটিংয়ের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। হরতালে কদমতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে নির্দিষ্ট সময়েই দূরপাল্লার বাস গন্ত্যব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিল। দোকান-পাঠ, স্কুল-কলেজ স্বাভাবিক নিয়মেই খোলা ছিল। ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল সন্তোষজনক।

বিভিন্ন উপজেলা থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা জানান, কোন উপজেলায়ই হরতালের কোন প্রভাব পড়েনি। আমাদের জকিগঞ্জ প্রতিনিধি আল হাসিব তাপাদার জানান, ‘উপজেলার কোথাও জামায়াত শিবির নেতাকর্মীরা হরতালের সমর্থনে প্রিকেটিং, মিছিল সমাবেশ করতে পারেনি। হরতালের প্রভাব পড়েনি সাধারণ মানুষের মধ্য। জামায়াত শিবিরের ডাকা হরতাল প্রতিহত করতে বিভিন্ন এলাকায় যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের দখলে ছিলো রাজপথ। ’

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি ওমর ফারুক নাইম জানান, ‘পরিবহন শ্রমিকরা হরতাল প্রত্যাখ্যান করে গাড়ি চালাচ্ছে। বাস-ট্রাক চলাচল করছে। রিকশা-ভ্যান, সিএনজি-অটোরিক্সা স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করছে। মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি সোহেল আহমদ জানান, শহরে হরতালের কোনো প্রভাব নেই। ’

কানাইঘাট প্রতিনিধি মাহবুবুর রশীদ জানান, ‘দেশব্যাপী ডাকা জামায়াত-শিবিরের হরতালে কানাইঘাটের রাজপথে ছিলো ছাত্রলীগের দখলে। ফলে জামায়াতের ডাকা হরতাল কর্মসূচী কানাইঘাটের কোথাও পালিত হয়নি। জনজীবন স্বাভাবিক ছিল। ’

এছাড়াও সিলেটের সুনামগঞ্জ এবং হবিগঞ্জ জেলা, ও বিয়ানীবাজার, কুলাউড়া, বড়লেখা, বিশ্বনাথ, জগন্নাথপুর, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগরসহ সকল উপজেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে কোথাও হরতাল পালনের খবর পাওয়া যায়নি।

সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক বলেন, ‘আমাদের পরিবহন শ্রমিকরা এই হরতাল প্রত্যাখ্যান করে গাড়ি চালিয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেনি। বাস-ট্রাক চলাচল করছে। রিকশা-ভ্যান, সিএনজি-অটোরিক্সা স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করছে। চলছে ট্রেন। শ্রমিকেরা হরতালকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ’

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা সিলেটভিউ২৪ডটকমকে জানান, ‘হরতালে সিলেটের কোথাও কোন অপ্রিতীকর ঘটনা ঘটেনি। কোথাও পিকেটিং, ভাংচুর কিংবা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ সংঘটিত হয়নি। আর এটি সম্ভব হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্কতা এবং কঠোর অবস্থানে থাকার কারণে। নগরীর প্রতিটি পয়েন্টে পয়েন্টে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর ছিলেন। ’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৩ অক্টোবর ২০১৭/এমকে-এম

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন