আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

গাজীপুর-খুলনা সিটি নির্বাচনের আচরণবিধি সংশোধন করা হতে পারে!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৪-১৯ ১০:১৫:১০

সিলেটভিউ ডেস্ক :: গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনি আচরণবিধি সংশোধন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য বৃহস্পতিবার জরুরি কমিশন সভা ডেকেছে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্যদের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারণার সুযোগ দেওয়ার দাবি তোলার পরিপ্রেক্ষিতেই এই সভা ডাকা হয়েছে বলে ইসির কার্যপত্রেও উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে গত ১৩ এপ্রিল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা সঙ্গে বৈঠক করে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের প্রচারণার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়ে এসেছে। এদিকে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে আচরণবিধির সংশোধনে আইনে কোনও ব্যত্যয় ঘটবে বলে মনে করছেন না নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তবে, বিষয়টি নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে বলেও তারা মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকালে কমিশন সভা ডাকা হয়েছে।’ বৈঠকের এজেন্ডায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধি রয়েছে বলে তিনি এক প্রশ্নের জবাবে জানান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আস্মিকভাবে  একদিনের নোটিশে কমিশন সভা ডাকা হয়েছে।কমিশনারদের অনেকেই এ বৈঠকের বিষয়টি জানেন না। ’

প্রসঙ্গত, বুধবার (১৭ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর একটি ৫ তারকা হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান ও ভোটাধিকার বিষয়ে একটি বড় আকারের সেমিনার রয়েছে কমিশনের।

গত ৩১ মার্চ গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনের তফসিল ঘোষণা করেছে কমিশন। এ দুই সিটি করপোরেশনে মনোনয়নপত্র দাখিলের পর তা যাচাই-বাছাই হয়ে গেছে। আগামী ১৫ মে এই দুই সিটিতে ভোট হবে। এরইমধ্যে গত ১৩ এপ্রিল ইসিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক করে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এমপিদের প্রচারের সুযোগ দিতে আচরণবিধি সংশোধনের দাবি জানায়। একইসঙ্গে সংসদীয় আসনের সীমানা ও জাতীয় সংসদের নির্বাচনি আইন ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’ বড় কোনও সংশোধনী না আনারও প্রস্তাব করে দলটি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ বৈঠক ডাকা হয়েছে। এতে এজেন্ডা হিসেবে রাখা হয়েছে ‘সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর সংশোধন’ ও ‘বিবিধ’।

জানা গেছে, কমিশন বৈঠকের জন্য ইসির যুগ্মসচিব মো. আবুল কাশেম স্বাক্ষরিত কার্যপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল ইসির সঙ্গে একটি বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা কয়েকটি বিষয়ের ওপর কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সেগুলো হচ্ছে—বর্তমান সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধি সংশোধন করা; আরপিও সংশোধনের বিষয়টি আরও যাচাই-বাছাইপূর্বক উপস্থাপন করা; ২০০৮ ও ২০১৩ সালের মতো জাতীয় সংসদের নির্বাচনি এলাকার সীমানা পুনঃবহাল রাখা।’

এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন ও বিধিমালাগুলো যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে একটি কমিটি রয়েছে। ওই কমিটি বিদ্যমান নির্বাচনি সব ধরনের আইন ও বিধিমালা  যাচাই-বাছাই করে যুগোপযোগী ও সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করার বিষয়ে সুপারিশ করবে। এমতাবস্থায় সিটি করপোরেশনের আচরণবিধি অধিকতর সংশোধনের বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তের জন্য উপস্থাপন করা হলো।’

বৈঠকের বিষয়ের এখনও জানেন না নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘একটি সভা হবে, এমনটি  শুনেছিলাম। তবে, এটা বৃহস্পতিবার হবে,  তা জানি না।’ তিনি বলেন, ‘আমার অন্য একটি বৈঠক থাকায় সেটা শেষ করে তাড়াহুড়া করে কমিশন থেকে বেরিয়ে এসেছি। বৈঠকের কোনও নোটিশ আমার দফতরে এসেছে কিনা, তা দেখে আসতে পারিনি।’

এক প্রশ্নের জবাবে এই কমিশনার বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের আচরণবিধি সংশোধন নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে। বৈঠকে হয়তো আচরণবিধি পর্যালোচনা করে কোনও সংশোধনী আনা হতে পারে।’

এদিকে, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনি আচরণবিধি সংশোধনে আইনি কোনও বাধা নেই বলে মনে করছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, দরকার হলে তফসিল ঘোষণার পরও আচরণবিধি সংশোধন আনা যেতে পারে। তবে, এই সংশোধনের বিষয়টি যেন বিতর্কিত না হয় বা ভোটে প্রভাব না পড়ে, সেই বিষয়টি বিবেচনায় রাখা জরুরি বলে তারা মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, ‘কমিশন তাদের প্রয়োজনে যেকোনও সময়ে আচরণবিধিতে সংশোধন আনতে পারে।তবে, তফসিল ঘোষণার পর কোনও ধরনের সংশোধন বিতর্ক তৈরি করতে পারে। তাই এই সময় সংশোধন না করাই শ্রেয়। আমাদের সময় কোনও নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর আচরণবিধি সংশোধনের প্রয়োজন পড়েনি।’

জানতে চাইলে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আচরণবিধি পরিবর্তন যেকোনও সময়ে হতে পারে। তবে, সেটা যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে না করে কোনও বিশেষ গোষ্ঠী বা দলের স্বার্থে হয়, তা হবে দুঃখজনক। আর এটা হলে সেটা নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে।’

ইসি সূত্রে জানা গেছে, সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬-এর ২(১৩) ও ২২ ধারায় সংশোধনী আসতে পারে। ২(১৩) ধারায় ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’র এর সংজ্ঞা দেওয়া আছে। এতে বলা হয়েছে—‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ অর্থ প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, সরকারের মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমপদমর্যাদার কোনও ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়রকে বোঝাবে। আর ২২ ধারায় ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’দের নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেওয়ার ওপর বিধিনিষেধ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে- ১. সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং কোনও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচন পূর্ব সময়ে নির্বাচনি এলাকায় প্রচারণায় বা নির্বাচনি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, এ ধরনের ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার ভোটার হলে তিনি কেবল ভোট দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে যেতে পারবেন।’

উল্লেখ্য, দলীয়ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর সংসদ সদস্যসহ রাষ্ট্রীয় সুবিধাভোগীদের নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেওয়ার বিষয়টি সামনে আসে।দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত ২০১৫ সালে পৌরসভা নির্বাচনেরে আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টি রাষ্ট্রীয় সুবিধাভোগী বিশেষ করে দলের সংসদ সদস্যরা যেন দল মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারে, ইসির কাছে সেই দাবি তোলে। বিষয়টি নিয়ে ইসিও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। পরে অবশ্য দুই দলের দাবি উপেক্ষা করে এমপিসহ রাষ্ট্রীয় সুবিধাভোগী সবাইকে নির্বাচনি প্রচারণার বাইরে রেখে পৌরসভা নির্বাচনি আচরণবিধি চূড়ান্ত করে কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় এসব সুবিধাভোগীকে নির্বাচনি প্রচারণার সুযোগের বাইরে রেখে সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আচরণবিধি তৈরি করা হয়। ওই আচরণবিধির আলোকে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু গত ৩১ মার্চ গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সংসদ সদস্যদের নির্বাচনি প্রচারণার সুযোগ দেওয়ার দাবি তোলেন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৯এপ্রিল২০১৮/ডেস্ক/আআ

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন