আজ শনিবার, ১১ মে ২০২৪ ইং

সিলেটের ইফতার বাজারের রাজত্বে নরম খিচুড়ি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৫-২০ ১৭:৩০:৩৫

মো. এনামুল কবীর :: ইফতারির বাজারে প্রতি বছর নতুন নতুন আইটেম যুক্ত হলেও সিলেটবাসীর ঐতিহ্যের ইফতারি নরম খিচুড়ির রাজত্বটা চিরকালীন। কতশত আইটেমের ভিড়ে এবারও রমজানে যথারীতি নরম খিচুড়ির ব্যবসা জমজমাট। হোটেল রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে বাসাবাড়ি- কোথায় নেই চাল ও ডালের সংমিশ্রণে গরমাগরম এই অমৃত!

অবশ্য নরম খিচুড়ির সাথে সিদ্ধ ছোলা আর জিলাপিও যথারীতি ধরে রেখেছে নিজেদের আসন। ইফতারিতে সিলেটবাসীর পছন্দের তালিকায় এ দুটি উপাদানের অবস্থানও উপরের দিকে।

সিলেটের ইফতারি বাজারে সর্বশেষ সংযোজন নার্গিস কাবাব। প্রতি পিস ২০ টাকা দামের এই উপাদানটি কেউ কেউ এবারই প্রথম সংযোজন বললেও কোন কোন হোটেল ব্যবসায়ী বলছেন গতবারও তা ছিল। ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ নামক ইফতার উপাদান সিলেটে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে গত কয়েকবছর থেকে। রীতিমতো সিলেটের ইফতারির বাজারে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে এই মাংস-মসল্লার সংমিশ্রণ। হোটেল রেস্তোরাঁ ভেদে এবার এ উপদানটি বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ১১৫০ টাকা থেকে ১২৫০ টাকা পর্যন্ত।

এছাড়া সিলেটের ইফতারির বাজারে আরও যেসব উপাদান মোটামুটি জনপ্রিয় সেগুলো হচ্ছে পাকুড়া, প্রতি কেজি ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা, জালি কাবাব প্রতি পিস ৩০টাকা, চিকেন বল প্রতি পিস ৬০ টাকা, চিকেন চপ প্রতি পিস ৩০ টাকা, চিকেন নাগেট প্রতি পিস ২০ টাকা, চিকেন টিক্কা, প্রতি পিস ২০ টাকা, চিকেন কাটলেট প্রতি পিস ৩০ টাকা, বিফ কাটিকাবাব প্রতি পিস ৬০ টাকা, চিকেন ললিপপ, প্রতি পিস ৪০ টাকা, ফ্রাইড চিকেন প্রতি পিস ৭০ টাকা, ফিরনি নান প্রতি পিস ৫০ টাকা, দই বুন্দিয়া প্রতি কেজি ২২০ টাকা, জর্দ্দা বিরানী, প্রতি কেজি ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন কয়েকটি হোটেল রেঁস্তোরা কর্তৃপক্ষ। ইফতারির সময় মাংসও কারও কারও প্রিয়।

সিলেটের হোটেল রেঁস্তোরাগুলোতে মোটামুটি প্রতি হাফ ভূনা খাসি-১৫০ টাকা, মোরগ মোসল্লা প্রতি পিস ১৮০ টাকা, কোয়েল পাখি প্রতি পিস ১১০ টাকা, আস্ত মোরগের রোস্ট ৩২০ টাকা, প্রতি হাফ গরুর মাংস ৯০ টাকা, বাসমতি কাচ্চি বিরানীও সিলেটে বেশ জনপ্রিয়। এ উপাদানটি প্রতি হাফ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা।

সিলেট নগরীর প্রায় সব অভিজাত হোটেলে উপরোক্ত উপাদানগুলো চলছে দেদার। প্রতি বছর এগুলোই চলে। তবে এই আভিজাত্যের সাথে পাল্লা দিয়েই চলছে নরম খিচুড়ি। প্রায় প্রতিটি হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে ফুটপাতেও সহজ পাচ্য এই উপাদান চলছে সবচেয়ে বেশি। দাম ও গুণগত মানেও অন্যান্য উপাদানের চেয়ে খিচুড়ি যথেষ্ট সহজলভ্য। চিকিৎসকরাও ইফতার হিসাবে এই উপাদানটি গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

মুড়িও ইফতারিতে বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে একেবারে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য মুড়ির সাথে সিদ্ধ ছোলা ও পিঁয়াজু সিলেটসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও খুব ভালো চলে।

জিন্দাবাজার এলাকায় এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপ হয় নগরীর বারুতখানা এলাকার ব্যাবসায়ী সাহান আহমদের (৪০)। হোটেল থেকে কিনেছেন বেশ কিছু ইফতার। কথায় কথায় বললেন, ‘নয়া নয়া আইটেমোর নাম হুনিয়া খানির লোভ অয় ঠিক। বাসা থাকিও বার বার ফোন আয়, অতা আনো হতা আনো। এরলাগি কিছু নিয়ার। তবে বাসাত রান্দা নরম খিচুড়িউ আমরার সব থাকি বেশি চলে।’

তবে দাম নিয়ে আরও অনেকের মতো সন্তুষ্ট নয় সাহান। বললেন,‘ইফতারির দাম হুনলেরে ভাই মনে হয়, ইতা ইফতার খাইয়ার না নগদ টেকা খাইয়ার।’

ইফতারে অবশ্য ফলমুলও খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এবার রমজান মাস পড়েছে মধুমাস হিসাবে খ্যাত জৈষ্ঠ মাসে। আর তাই বাজারে আসছে আম-আনারস ইত্যাদি ফলমূল। তবে দাম এখনও সাধারণ ক্রেতাদের নাগালে আসেনি। বিভিন্ন ধরনের আম বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ২০০ টাকায়।

আনারসের দামও চড়া। প্রতি জোড়া বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। কাঁঠাল এখনও বাজারে তেমন একটা আসতে শুরু করেনি। আরও সপ্তাহখানেক পর থেকে আসতে পারে। তবে রমজানে ফলের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেজুর। সুন্নত’ হিসাবে ব্যাপক পরিচিত মিষ্টি এ ফলটি সবসময় সবার পছন্দের শীর্ষে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২০ মে ২০১৮/এক /আরআই-কে

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন