আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটে সাধারণ কাউন্সিলর পদে আ.লীগের নতুন-পুরনো অর্ধশত মুখ

প্রার্থীতায় বিএনপি-জামায়াত থেকে এগিয়ে আছে আওয়ামী লীগ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৭-১৯ ০০:০৯:৩১

মিসবাহ উদ্দীন আহমদ :: সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। সিটি কর্পোরেশনের ৪র্থ নির্বাচনকে ঘিরে নগরে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। ব্যস্তসময় পার করছেন কাউন্সিলরপ্রার্থীরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা।

সিসিক নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর ১২৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছেন ৫১ জন। এদের অনেকেই সরাসরি দলের পদ-পদবিধারী। কেউ কেউ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতাকর্মীদের আধিক্য চোখে পড়েছে। অন্যদিকে ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে কয়েকটি ওয়ার্ডে বিএনপির কোনপ্রার্থীই নেই। বিএনপি সমর্থক প্রার্থী সংখ্যা হচ্ছে ৪০ জন। এছাড়া এবারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সিলেটে জাতীয়পার্টির কোন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন না। যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ইসলামী রাজনৈতিক দল জামায়াত সমর্থক ১৩ জন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে জমিয়ত-হেফাজত সমর্থক একজন প্রার্থীও অংশ নিচ্ছেন।

নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ডে অংশ নিচ্ছেন ৯ জন কাউন্সিলর। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাত্র ১ জন। তিনি হচ্ছেন সৈয়দ আনোয়ারুস সাদাত। ২ নম্বর ওয়ার্ডে ৩ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। বিক্রম কর সম্রাট আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। ৩ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডে লড়ছেন ৬ জন। আওয়ামী লীগ সমর্থক কাউন্সিলরপ্রার্থীরা হচ্ছেন এস.এম আবজাদ হোসেন, আব্দুল খালিক ও আবুল কালাম আজাদ লায়েক।

৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৬ জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত প্রার্থীরা হচ্ছেন জাবের আহমদ চৌধুরী, মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বাবু ও শেখ তোফায়েল আহমদ সেপুল। ৫ নম্বর ওয়ার্ডেও লড়ছেন ৬ প্রার্থী। আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত দুই প্রার্থী হচ্ছেন রিমাদ আহমদ রুবেল ও আমিনুর রহমান পাপ্পু। রুবেল যুবলীগ নেতা আর পাপ্পু ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে শাহীন মিয়া শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সমর্থক।

৭ নম্বর ওয়ার্ডে লড়ছেন মাত্র দু’জন। এদের মধ্যে আফতাব হোসেন খান সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৭ প্রার্থীর মধ্যে ৬ জনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। এরা হচ্ছেন জগদীশ চন্দ্র দাশ, ইলিয়াছুর রহমান ইলিয়াস, বিদ্যুৎ দাস, শাহাদত খান ও শাহেদ আহমদ। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে বিধান কাপালী ও মখলিছুর রহমান কামরান আওয়ামী লীগ নেতা।

১০ নম্বর ওয়ার্ডে ৬ জনের তারেক উদ্দিন তাজ ও শফিকুল ইসলাম শফি দু’জনেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের আত্মীয়। তারা আওয়ামী সমর্থক হিসেবে পরিচিত। তবে নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্রভাবে। এরমধ্যে শফি সাংবাদিকতার সাথেও জড়িত। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ জন রকিবুল ইসলাম ঝলক ও আব্দুর রকিব বাবলু দু’জনই মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা। ১২নং ওয়ার্ডে ৬ প্রার্থীর মধ্যে পিষুষ কান্তি দে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আজহার উদ্দিন জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগ নেতা।

১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ৪ জনই আওয়ামী লীগ সমর্থক। এরা হচ্ছেন বিশ্বজিৎ দাস, শান্তুনু দত্ত সনতু, মো. এবাদ খাঁন দিনার ও সুমন আহমদ। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৬ জনের মধ্যে হাবিবুর রহমান মজলাইয়ের ব্যাপারে রাজনীতির মাঠে ডিগবাজির ঘটনা রয়েছে। তিনি আগে বিএনপি সমর্থক ছিলেন। এখন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত। তবে প্রচারণা চালাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। ১৫ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডে ৫ জন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থক ছয়ফুল আমিন বাকের।

১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থী কুমার গনেশ পাল ও সাব্বির আহমেদ চৌধুরী। একমাত্র ব্যতিক্রম ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে। এখানে কোন রাজনৈতিক দল সমর্থিত প্রার্থী নেই। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৬ জন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থীরা হচ্ছেন মো. নজরুল ইসলাম এহিয়া, সাজেদ আহমেদ চৌধুরী, মো. সাজুওয়ান আহমদ।

১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে মো. জমসেদ সিরাজ কৃষকলীগ নেতা। ২০ নম্বর ওয়ার্ডে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ। তাকে সমর্থন জানিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়ায় তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ প্রার্থী। তন্মধ্য গোলাম রহমান চৌধুরী ও মুহিব উস সালাম রিজভী দু’জনই স্বেচ্ছাসেবকলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।

২২ নম্বর ওয়ার্ডে ৬ জন আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থীরা হচ্ছেন ছালেহ আহমদ সেলিম, মো. ফজলে রাব্বী চৌধুরী, মো. ইব্রাহিম খান সাদেক। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে মোস্তাক আহমদ ও ছাব্বির আহমদ। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৩ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে মোহাম্মদ শাহজাহান।

২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে আশিক আহমদ ও তাকবির ইসলাম পিন্টু। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৫ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থক একমাত্র প্রার্থী হচ্ছেন মোহাম্মদ তৌফিক বক্স লিপন। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থীরা হচ্ছেন থেকে মো. আজম খান, চঞ্চল উদ্দিন।

বর্তমানে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে সাধারণ ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০টি কাউন্সিলর পদ আওয়ামী লীগের দখলে আছে। ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে ৩, ৭, ৮, ৯, ১১, ১৩, ২০, ২৩, ২৫ ও ২৬। আওয়ামী লীগ সমর্থক বর্তমান কাউন্সিলরবৃন্দ হচ্ছেন এস.এম আবজাদ হোসেন, আফতাব হোসেন খান, ইলিয়াছুর রহমান ইলিয়াস, মখলিছুর রহমান কামরান, রকিবুল ইসলাম ঝলক, শান্তনু দত্ত সনতু, ছয়ফুল আমিন বাকের, আজাদুর রহমান আজাদ, মোস্তাক আহমদ, তাকবির ইসলাম পিন্টু ও তৌফিক বক্স লিপন।

অন্যদিকে নগরীতে আওয়ামী লীগের সমান সংখ্যক কাউন্সিলর আছেন বিএনপিতেও। ১০টি ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থক কাউন্সিলর দায়িত্ব পালন করছেন। ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে ১, ৪, ৬, ১০, ১২, ১৪, ১৮, ১৯, ২১ ও ২২। কাউন্সিলরবৃন্দ হচ্ছেন সৈয়দ তৌফিকুল হাদি, রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, ফরহাদ চৌধুরী শামীম, অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ, সিকন্দর আলী, নজরুল ইসলাম মুনিম, এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল, দিনার খান হাসু, আব্দুর রকিব তুহিন ও সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন- ‘ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচনে প্রার্থীতার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ কঠোর নয়। আমরা এ বিষয়টি অনেকটা উন্মুক্ত রেখেছি। তারপরও যেসব ওয়ার্ডে একাধিক প্রার্থী আছেন দলের পক্ষ থেকে তাদের কিছু নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। শেষমুহুর্তে আরোও নির্দেশনা দেয়া হবে।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ১৯ জুলাই ২০১৮/ এমইউএ

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন