আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

খালেদার ‘চিরকুটে’ অারিফের দুয়ারে থামলো সেলিমের বাসগাড়ী

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৭-২০ ০০:০৮:২১

মিসবাহ উদ্দীন অাহমদ :: দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা থেকে দূরে। ২০১৪ সালের ‘বিতর্কিত’ জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে দলটি তাদের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অান্দোলন করে অাসছে। কিন্তু সরকার এখনো নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল। কোনভাবেই তারা বিএনপি-জামায়াতকে ছাড় দিতে রাজি নয়।

এমন অবস্থা ও দশম জাতীয় নির্বাচন বর্জনের কারণে জাতীয় সংসদে কোন প্রতিনিধিত্বই থাকেনি বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের। উল্টো সংসদে বিরোধীদল হিসেবে অাবির্ভূত হয় এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয়পার্টি। রওশন এরশাদ হন সংসদে বিরোধীদলের নেতা।

দেশের রাজনীতিতে ক্রমশ কোনঠাসা হতে থাকা বিএনপি ‘ট্রাকে’ ফিরতে মরিয়া। সেকারণেই সাম্প্রতিককালে দেশের স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে তারা অংশ নিচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৪র্থ নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থী ও সদ্য সাবেক মেয়র অারিফুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয় দলটি।

দলের হাইকমান্ড থেকে দেয়া মনোনয়ন না মেনে বিদ্রোহ করেন দলের সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। তিনি নাগরিক কমিটির ব্যানারে বাসগাড়ী প্রতীকে মেয়রপদে প্রার্থী হন। গত ১০ জুলাই কেন্দ্রের নির্দেশে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় সেলিমকে। ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব নিয়ে সেলিমের স্থলাভিষিক্ত হন নগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক অাজমল বক্ত সাদেক।

গত বৃহস্পতিবার বিকাল পৌণে ৩টা পর্যন্ত ৩৯ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকা বদরুজ্জামান সেলিম ছিলেন নির্বাচনের মাঠে। বাসগাড়ী প্রতীকে ভোট চেয়ে বুধবার রাত পর্যন্ত চালিয়েছেন প্রচার-প্রচারণা। সে রাতেরই এক সভার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবারে সকালে এসে পাল্টে গেছে পটভূমি। অনঢ় সিদ্ধান্ত থেকে সরে অাসেন বিদ্রোহী সেলিম।

দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম অালমগীরের নির্দেশ নিয়ে বুধবার সেলিমের বাসায় অাসেন কেন্দ্রীয় একটি প্রতিনিধি দল। এ দলে ছিলেন চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম।

তারা সেলিমসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে রাজি করান দলের জন্য, ধানের শীষের জন্য কাজ করতে। সেলিমের বৃদ্ধা মা ছেলেকে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে না দাঁড়াতে চূড়ান্ত নির্দেশ দিয়েছিলেন। ৯৪ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা বলেছিলেন প্রয়োজনে সকল সম্পত্তি, সোনাদানা বিক্রি করে দিবেন-তারপরেও ছেলেকে নির্বাচনে থাকতে। মায়ের নির্দেশ পালনে সেলিমও ছিলেন দৃঢ়চেতা। কোনকিছুতেই সরানো যাচ্ছিলো না তাকে। ব্যস্ত ছিলেন প্রচার-প্রচারণায়। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলটি অবশেষে বুঝিয়ে-শুনিয়ে সেলিমের মা ও স্ত্রীকেও রাজি করান।

বৃহস্পতিবার সকালে এসে সিদ্ধান্ত হয় সেলিম সিটি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন। দলের প্রার্থী ও তার বন্ধু অারিফুল হক চৌধুরীর স্বপক্ষে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করবেন। বিকালে শাহী ঈদগাহ হাজারীবাগে নিজের বাসাতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীককে সমর্থন জানিয়ে সরে দাঁড়ানোর কথা জানাবেন ঠিক হয়। তবে বিভিন্ন সরকারী বাহিনী তাকে সরিয়ে নেয়ার তৎপরতা চালাচ্ছে দাবি করে বেলা পৌণে ৩ টায় সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় নগরীর কুমারপাড়ায়, অারিফের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে।

জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর অানুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন বদরুজ্জামান সেলিম। এমন ঘোষণার পরপর তাৎক্ষনিক সেলিমের দলীয় পদ ফিরিয়ে দেয়া হয়। এখন তিনি অাবার সিলেট নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।

কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান ও খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, কেন্দ্রীয় সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কলিম উদ্দিন মিলন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, ডা. শাহরিয়ার হোসেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগর বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত সাদেক প্রমুখ। ছিলেন সেলিমের বৃদ্ধা মা ও সহধর্মিণীও।

এসময় বদরুজ্জামান সেলিম বলেন- ‘‘অামার বৃদ্ধা মাকে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ‘কনভিন্স’ করেছেন। পরে তার নির্দেশে; পাশাপাশি অামার অারেক মা বেগম খালেদা জিয়া কারাগার থেকে ‘চিরকুট’ পাঠিয়েছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কথা বলেছেন এবং মহাসচিব মীর্জা ফখরুল কথা বলেছেন- তাদের নির্দেশ অামি মেনে নিলাম। অামি সিটি নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীককে সমর্থন জানিয়ে নিজে সরে দাঁড়ালাম।’’

এসময় তিনি দলীয়প্রার্থী অারিফুল হক চৌধুরীর সাথে কোলাকুলি করেন। এবং ধানের শীষ প্রতীক অারিফের হাতে তুলে দেন।

মেয়রপ্রার্থী অারিফুল হক চৌধুরী বলেন- ‘‘ঘরের মানুষ ঘরে ফিরে এসেছেন। এতে সরকারীদলের লোকদের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। তারা অামাদের হয়রানী করার চক্রান্তে লিপ্ত। বারবার নেতাকর্মীদের হয়রানী করা হচ্ছে। এমনটি অব্যাহত থাকলে কোন ছাড় দেয়া হবে না। জনগণকে সাথে নিয়ে সকল ষড়যন্ত্র রুখে দেয়া হবে। প্রয়োজনে মরবো না হয় বাঁচবো।’’

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অামান উল্লাহ অামান বদরুজ্জামান সেলিম ও অারিফুল হক চৌধুরীর নিরাপত্তা দাবি করেন। তিনি ‘প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রশাসনের দায়িত্ব’ উল্লেখ করে অযথা হয়রানী না করার অাহ্বান জানান।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ২০ জুলাই ২০১৮/ এমইউএ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন