আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

পরাজয়ে শেষ কামরানের ‘নির্বাচনী রাজনীতি’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৮-১৪ ০০:০৮:০৩

রফিকুল ইসলাম কামাল :: তিনি তখন ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র। সময়টা ১৯৭৩ সাল। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে ওই সময় প্রথমবারের মতো হয় পৌরসভা নির্বাচন। সে নির্বাচনে একেবারে তরুণ বয়সে ওয়ার্ড কমিশনার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। জয়ও পেয়েছিলেন তিনি। জীবনের প্রথম নির্বাচনে কামরানের সুখকর যে অভিজ্ঞতা, ‘শেষ নির্বাচনে’ এসে তা হতাশায় রূপ নিল।

সিসিকের চতুর্থ নির্বাচনে বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হার মেনে শেষ হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ‘নির্বাচনী রাজনীতি’।

সিসিক নির্বাচনের আগে, গেল ২৫ জুলাই বিকেলে সিলেট নগরীর একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে নিজের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন কামরান। ইশতেহার ঘোষণাকালে আবেগাপ্লুত হয়ে কামরান বলেছিলেন, ‘এটাই আমার জীবনের শেষ নির্বাচন।’

নিজের ‘শেষ নির্বাচনে’ নগরবাসীর ভালোবাসা চেয়েছিলেন কামরান। কিন্তু নির্বাচনে কামরান ৬ হাজার ১৯৬ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। তিনি যদি নিজের কথায় অনড় থাকেন, তবে পরাজয়েই শেষ হলো তার বর্ণাঢ্য নির্বাচনী রাজনীতি।

এবার দলীয় প্রতিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নৌকা প্রতিকে প্রথমবারের মতো নির্বাচন করেন কামরান। নির্বাচনে ৮৬ হাজার ৩৯২ ভোট পেয়েছেন তিনি। ধানের শীষ প্রতিকে তার চেয়ে বেশি, ৯২ হাজার ৫৮৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আরিফুল হক চৌধুরী।

প্রায় ৬৭ বছর বয়সী কামরান নির্বাচনী রাজনীতিতে জড়িয়ে আছেন প্রায় ৪৫ বছর ধরে। ১৯৭৩ সালে ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচন দিয়ে শুরু, নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে মেয়র নির্বাচন দিয়ে শেষ হচ্ছে তার এই নির্বাচনী রাজনীতি।

১৯৫১ সালে জন্ম নেয়া বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ১৯৭৩ সালে সিলেট শহরে তৎকালীন সময়ে ৫টি ওয়ার্ডের একটি, ৩নং তোপখানা ওয়ার্ড থেকে নির্বাচনে কমিশনার পদে ৬৪৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। ১৯৮৩ সালে আবারও ওয়ার্ড কমিশনার পদে নির্বাচনে জয়লাভ করেন তিনি। ১৯৮৮ সালেও ওয়ার্ড কমিশনার পদে বিজয়ী হন কামরান। ১৯৯৫ সালে সিলেট পৌরসভা নির্বাচনে প্রথমবারের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন তিনি।

সিলেট শহর ২০০১ সালের ৯ এপ্রিল পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়। ২০০৩ সালের ২০ মার্চ প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচন। ওই নির্বাচনে বিএনপি নেতা এম এ হককে ২২ হাজার ৫৩১ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা কামরান।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৬ এপ্রিল গ্রেফতার হন কামরান। এক মাস কারাভোগের পর মুক্তি পেয়ে ২৮ মে ফের গ্রেফতার হন তিনি। কারাগারে থাকা অবস্থায় ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট সিসিকের দ্বিতীয় নির্বাচনে মেয়র পদে ফের বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের এই নেতা। বিএনপি নেতা আ ফ ম কামালকে প্রায় ৮৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন তিনি। ওই নির্বাচনে কামরানের ভোট ছিল এক লাখ ১৫ হাজার ৪০৯, কামাল পেয়েছিলেন মাত্র ৩২ হাজার ৯৭ ভোট। এছাড়া বিএনপি নেতা এম এ হক ২৩ হাজার ৪৮৭ ভোট এবং যুবদল নেতা সালাউদ্দিন রিমন ৪৭০ ভোট পেয়েছিলেন।

২০১৩ সালের ১৫ জুন সিসিকের তৃতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। টানা তৃতীয়বারের মতো মেয়র পদে লড়েন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। মেয়র পদে হ্যাটট্রিক জয়ের হাতছানি থাকলেও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে প্রায় ৩৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরে যান কামরান। নির্বাচনী রাজনীতিতে এই প্রথমবারের মতো পরাজয় বরণ করেন তিনি। ওই নির্বাচনে আরিফ পেয়েছিলেন এক লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট, কামরানের ভোট ছিল ৭২ হাজার ২৩০।

এবার সিসিকের চতুর্থ নির্বাচনে জয়ের ধারায় ফিরে আসার সুযোগ ছিল কামরানের। তবে শেষপর্যন্ত সেই সুযোগও হাতছাড়াও হয়েছে তার।

প্রসঙ্গত, ১৯৬৮ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়ান বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। এরপর বিভিন্ন সময়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দীর্ঘদিন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন শেষে ২০০২ সাল থেকে এখনও অবধি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বর্তমানে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য পদেও আছেন কামরান।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৪ আগস্ট ২০১৮/পিডি/আরআই-কে

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন