আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটের শপিংমলে ঈদের আমেজ নেই

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৮-১৯ ০৯:৪৪:৫৬

আব্দুল আহাদ :: ‘সকালে দোকান খুলছি, এখন পর্যন্ত একটা শাড়ি বিক্রি করতে পারি নাই। মনে হচ্ছে দোকান খোলাটাই লস হইছে। ঈদের বিক্রিতো দূরের কথা ঘর ভাড়াই উঠে না। কর্মচারীদের বেতন  দিমু কেমনে বুঝতে পারতাছি না। বিক্রি হোক আর না হোক হেগো বেতনতো দেওয়া লাগবে। খুব চিন্তায় আছি রে ভাই।’কথাগুলো বলছিলেন নগরীর আল-হামরা শপিং সেন্টারের  শাড়ি বিতানের মালিক আজহারুল ইসলাম মানিক। তার দোকানে জামদানি, কাতান, লেহেঙ্গা, গাউন থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের শাড়ি থ্রিপিসে ঠাসা।

ঈদুল আজহা সামনে রেখে দেশি-বিদেশি পোশাক ও প্রসাধনীতে সেজেছে নগরীর শপিং মলগুলো। কোরবানির ঈদের মাত্র দুই দিন বাকি থাকলেও এখনও জমে উঠেনি কেনাকাটা। স্বাভাবিক দিনের মতোই শপিং মলগুলাতে চলছে কেনাকাটা। ঈদের কোনো আমেজও নেই।

শনিবার জিন্দাবাজারের বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে একই চিত্র পাওয়া যায়। বেশিরভাগ দোকানি ও তাদের কর্মচারীরা বসে বসে অলস সময় পার করছেন। জিন্দাবাজার মাড়িয়ে হাসান মার্কেটে, মধুবন সুপার মার্কেট, হকার্স মার্কেটসহ নগরীর বিভিন্ন মার্কেটেও একই চিত্র দেখা যায়।

মধুবন সুপার মার্কেটের পাঞ্জাবি বিতানে ঈদ কেনাকাটা নিয়ে কথা হচ্ছিল মালিক ইসহাক আহমদের সঙ্গে। আলাপচারিতার মাঝখানে তার দোকানে পাঞ্জাবি কেনার জন্য এক ক্রেতা ঢুকলেন। ইসহাক আহমদ ওই ক্রেতার কাছে একটি পাঞ্জাবি বিক্রি করার জন্য কত অনুনয়-বিনয়ই না করলেন। শেষ পর্যন্ত ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার জন্য দাম কম রাখার প্রস্তাবও দেন ইসহাক। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হলো না।

ইসহাক আহমদ সিলেটভিউকে বলেন,  ‘ভাই বিক্রি নাই। সকাল দশটায় দোকান খুলছি এখন আসরের আজানের সময় হয়ে আসছে, কিন্তু যাত্রা হয় নাই। তবে আশা করতেছি সন্ধ্যার দিকে কিছু কাস্টমার আসবে। আর ঈদের কেনাকাটা করার মতো আরও সময়  আছে, এখন সেই আশা দিয়েই মনেরে বুঝ দিচ্ছি।’

জিন্দাবাজার রোডের আরও কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলে তারাও একই হতাশার গল্প শোনান। তারা প্রতিনিয়ত অপেক্ষা করেন, আশায় থাকেন, ক্রেতা আসবে। কিন্তু ক্রেতা আসে না। বিক্রিও হয় না।

সরেজমিনে রিচম্যান, স্মাটেক্স, আড়ং, ইজি, মনোরমা, গোল্ডেন হ্যান্ড, বটমসহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের দোকান ঘুরে ঈদে বিক্রির যে আমেজ সেটা দেখা যায়নি।

নগরীর নয়াসড়কের আড়ং এর  সেলসম্যান মাহিদুল হাসান সিলেটভিউকে বলেন, ‘এই ঈদে প্রত্যেক বছরই কেনাকাটা কমই করে মানুষ। মূলত এই ঈদে পশু কেনায় মানুষের সব টাকা চলে যায়। যার কারণে জামাকাপড় কেনাকাটা করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। যারা স্বচ্ছল তারা সাধারণত এই ঈদে কেনাকাটা করে। আমাদের বিক্রি হচ্ছে, তবে ঈদে বিক্রির যে আমেজ সেটা নেই।’

উপশহর থেকে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে কেনাকাটা করতে আসা মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি সিলেটভিউকে বলেন, ‘আর বলেই না, এবার ঈদে ভাবছি পরিবারের কাউকে কিছুই কিনে দেব না। কারণ এই ঈদে গরু কিনতেইতো সব টাকা খরচ হয়ে যায়। কিন্তু ছেলেটা জামা নিবে বলে বায়না ধরেছে, নতুন জামা না হলে সে ঈদই করবে না। তাই ওকে জামা কিনে দিতেই আসছি।’বিক্রেতাদের মন্দা গেলেও ক্রেতা-বিক্রেতা সবার মুখে একই সুর। কোরবানির ঈদের আনন্দ পশুর হাটে, শপিং মলে নয়।

সাধারণত ঈদুল আজহায় কেনাকাটা কোনো সময়ই তেমন জমে না।কারণ মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম এই উৎসবে প্রধান আকর্ষণ থাকে কোরবানির পশু কেনা। পশু কিনতে মোটা অংকের টাকা লাগে বলেই কেনাকাটা সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। ফলে শপিং মলগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনাও কম থাকে। তবে সামর্থ্যবানরা কোরবানি ঈদেও যথারীতি নতুন জামা কিনেন। যদিও এই সংখ্যাটি খুব কম।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ১৯ আগস্ট ২০১৮/আআ

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন