আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটে চৌধুরীদের কান্ডে বিব্রত বিএনপি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০১-২০ ০০:২১:৩৭

এনামুল কবীর :: সিলেটে চৌধুরীদের কর্মকান্ডে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। চারদিকে নানা গুঞ্জন ডালপালা মেলছেতো মেলছেই। কেউ কেউ দলটিতে যেমন ভাঙনের শব্দ শুনছেন তেমনি দেখছেন সরকারি দলে যোগদানের ছবিও। যদিও এখনও সেরকম কিছু ঘটেনি। তবে চৌধুরীদের কর্মকান্ডে সদ্যঅনুষ্টিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে পরোক্ষভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে বলেও হতাশা প্রকাশ করছেন তারা। এমনকি সরকার ও নির্বাচন নিয়ে সমালোচনার পথও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলেও মনে করছেন তারা।

বিব্রতকর পরিস্থিতির শুরু সাবেক সচিব ও বিএনপির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ইনাম আহমদ চৌধুরীকে দিয়ে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে যৌথভাবে বিএনপি থেকে তিনিও প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলেন। মনোনয়নপত্র জমা দিয়েই তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বি, বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সাথে দেখা করতে তার বাসায় গিয়েছিলেন। সেখানে ড. মোমেনের ভাই ও সদ্যসাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সাথেও সাক্ষাৎ করেন তিনি। বিএনপির বিব্রতকর পরিস্থিতির শুরু তখন থেকেই। এনিয়ে কঠোর আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত বিএনপি থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পাননি ইনাম চৌধুরী। বঞ্চনার জন্য এঘটনাকে দায়ী করেছেন অনেক নেতাকর্মী।

এর রেশ কাটতে না কাটতে আরও বড় বিস্ফোরণ ঘটান ইনাম। নির্বাচনের আগে আগেই দলত্যাগ করে চলেযান সরকারি দল আওয়ামী লীগের আশ্রয়ে। শুধুই কি দলত্যাগ? ইনাম চৌধুরী ড. মোমেনের পক্ষে প্রচারযুদ্ধও চালিয়েছেন। একারণে মারাত্মক বিপাকে পড়তে হয়েছিল দেশের অন্যতম প্রধান এই রাজনৈতিক দলটিকে।

এত গেলো নির্বাচনের আগের পরিস্থিতি। নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি আরও বেশি বিব্রতকর। ভরাডুবির ব্যাপারটি বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট মানতে নারাজ। বরং তারা এই নির্বাচনকে একটি প্রহসনের নির্বাচন হিসাবে অভিহিত করে নতুন নির্বাচন দাবি করছেন। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ দলটির দায়িত্বশীল পদে থেকে আরও ৪ চৌধুরী নতুন মন্ত্রীদের ফুলের শুভেচ্ছায় সিক্ত করেছেন।

এই ৪ জনের প্রধান সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন মন্ত্রী হয়ে সিলেট সফরে এলে আরিফ তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তার একাজের যেমন কঠোর সমালোচনা হচ্ছে, তেমনি সমালোচনা চলছে মন্ত্রীসভায় স্থান না পাওয়া সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সাথে সাক্ষাতের বিষয়টি নিয়েও।

বিএনপিকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছেন শফি আহমদ চৌধুরীও। সিলেট জেলা বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সিলেট-৩, দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে নির্বাচিত সাবেক এ সাংসদ এবারও বিএনপি থেকে মনোনীত প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর কাছে ধরাশায়ী শফিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

সিলেট জেলা বিএনপির আরেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের দুই মেয়াদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরীও পিছিয়ে নেই। গত সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএপি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ভোটের মাঠে তার প্রবল প্রতিপক্ষ ইমরান আহমদ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে সিলেট ফিরলে আব্দুল হাকিম চৌধুরী তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির বিব্রত নেতাকর্মীদের মতে, যে নির্বাচনকে তারা অস্বীকার করছেন, সেই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মন্ত্রী হওয়াদের শুভেচ্ছা জানানোটাতো নির্বাচনকেই স্বীকৃতি দেওয়া। যারা এসব করছেন, তারা কি জেনে-শুনে বা বুঝে করছেন? এমন প্রশ্নও উঠছে জাতীয়তাবাদী শিবিরে।

এদিকে আরেক চৌধুরীকে নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে, যদিও তিনি অনেক আগেই বিএনপির রাজনীতি থেকে সরে গিয়েছেন। দলটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মোবিন চৌধুরী বছর কয়েক আগে শুধু বিএনপিই নয়, রাজনীতি থেকেই সরে গিয়েছিলেন। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হঠাৎ আবারও রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করেন তিনি। যোগদেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারায়। দলটি এবার মহাজোটের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছিল। শমসের মোবিন সিলেট-৬ আসনে মহাজোটের মনোনয়ন আদায়ের প্রাণপণ চেষ্টা করলেও কোন লাভ হয়নি।

সিলেটের দায়িত্বশীল বিএনপি নেতা হয়েও মন্ত্রীদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্তকরণ ও নেতাকর্মীদের হতাশা-বিভ্রান্তি প্রসঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ সিলেটভিউকে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নামে ইতিহাসের জঘন্যতম এক প্রহসন হয়েছে বাংলাদেশে। সেই প্রহসনে জিতে মন্ত্রী হওয়াদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর বিষয়টি ভালোভাবে নেওয়ার কথা নয় নেতাকর্মীদের। তারা তা নিচ্ছেনও না। নেতাকর্মীরা এখন মারাত্মক বিব্রতকর পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন।

এ ব্যাপারে তিনি আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২০ জানুয়ারি ২০১৯/এক

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন