আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

মেয়রের সাথে দ্বন্দ্ব নিয়ে যা বললো উইমেন্স মেডিকেল কর্তৃপক্ষ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-০৭-১৮ ১৯:২০:৩১

সিলেট :: সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে দ্বন্দ্ব নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একটি বিবৃতি দিয়েছে মীরবক্সটুলাস্থ বেসরকারী মেডিকেল ‘সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল’ কর্তৃপক্ষ।

বিবৃতিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলেন- ১১ জুলাই সিসিক এর প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) নুর আজিজুর রহমান নয়াসড়ক থেকে চৌহাট্টা পর্যন্ত রাস্তা প্রশ্বস্তকরণের স্বার্থে জায়গা ছেড়ে দেয়ার জন্য কলেজের এমডি বরাবারে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি কলেজের নিজস্ব জায়গা থেকে জায়গা ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে উইমেন্স মেডিকেল কলেজের পরিচালনা পরিষদের মধ্য থেকে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন। যে কমিটি সিসিক কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
 
বিবৃতিতে জানানো হয়- গত সোমবার দুপুরে সিসিকের একজন প্রকৌশলী অফিসে এসে দেয়াল ভাঙ্গার কাজ শুরুর অনুমতি চান। তখন মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠাতা কোম্পানীর ভাইস চেয়ারম্যান বশির আহমদ বলেন- এ ব্যাপারে আমাদের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। শীঘ্রই তারা সিদ্ধান্ত জানাবে। অতপর তিনি চলে যান। বেলা ২টার দিকে সিসিকের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কোম্পানীর এমডি ডা. আব্দুল আহাদকে টেলিফোনযোগে কলেজের ভেতরে দেয়ালের ভাঙ্গার কাজ শুরু করতে না দেয়ার কারণ জানতে চান। তখন ডা. আব্দুল আহাদ বিনয়ের সাথে মেয়র মহোদয়কে বলেন- এ ব্যাপারে আমাদের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আপনাদের সাথে আলোচনা করে করণীয় ঠিক করবেন।

উইমেন্স মেডিকেলের ভাইস চেয়ারম্যান বশির আহমদের নামে প্রেরিত বিবৃতিতে দাবি করা হয়- ‘তখন মেয়র প্রশ্ন করেন- এই কমিটির সদস্য কারা। তাদের তালিকা আমাকে দেয়া হয়নি কেন? প্রতিউত্তরে এমডি বলেন- এটা অভ্যন্তরীণ বিষয় তাই জানানো হয়নি। তখন মেয়র ফোন কেটে দেন। এর ১০/১৫ মিনিট পর তিনি কয়েকজন কাউন্সিলরসহ ১৫/২০ জন লোককে সাথে নিয়ে সরাসরি এমডির অফিসে চলে আসেন। মেয়র তখন একটু উত্তেজিত হয়ে কথা বলেন। এমতাবস্থায় তার সাথে আসা জনৈক কাউন্সিলর কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রতিষ্ঠানের এমডি মহোদয়কে চড়থাপ্পড় মারা শুরু করেন। তখন কোম্পানীর ভাইস চেয়ারম্যান বশির আহমদ ও পরিচালক এমদাদ হোসেন চৌধুরী ব্যাপারটি শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং মেয়র মহোদয়কে অপর কক্ষে নিয়ে বসিয়ে কথা বলেন। কথাবার্তার এক পর্যায়ে মেয়র মহোদয়ের সাথে আসা জনৈক ব্যক্তি হঠাৎ বলে উঠলেন এটার সমাধান এভাবে হবেনা চলেন আমরা চলে যাই। সাথে সাথে উনারা বেরিয়ে যান। কিছু সময় পর দেখা গেলো একটি বুলডোজার কলেজের গেইটে প্রবেশ করছে এবং পার্কিংয়ে থাকা গাড়ী সরানোর জন্য বলা হচ্ছে। তখন কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসলে বুলডোজার বেরিয়ে যায়, তাৎক্ষণিকভাবে উদ্যোক্তা কোম্পানীর একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত পরিচালকবৃন্দ এই ঘটনার একটি সম্মানজনক সমাধানের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। যদি এমনটি না হয় তবে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহনেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ইতোমধ্যে রাত সাড়ে ৮টার দিকে মেয়রের পক্ষ থেকে দুইজন রাজনৈতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তি সৃষ্ট ঘটনা নিরসনের প্রস্তাব করেন। মেয়রকে সাথে নিয়ে এসে চিকিৎসাধীন এমডি ডা. আব্দুল আহাদকে দেখার পরিবেশ সৃষ্টির আহবান জানান। কর্তৃপক্ষ এ প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করেন ও মেয়রকে আসার আমন্ত্রণ জানান। এর প্রেক্ষিতে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মেয়র কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যাক্তি ও ৪ জন কাউন্সিলরকে সাথে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এমডিকে দেখতে আসেন এবং তার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। সৃষ্ট অনাকাংখিত ঘটনার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন।

কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি মেয়র তখন বলেছেন- আমি মর্মাহত ও অনুতপ্ত। বিভিন্নভাবে আমি চিকিৎসক সমাজের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আমরা অত্যন্ত দুঃখের সহিত লক্ষ্য করলাম যে, এই ঘটনাকে নিয়ে কয়েকটি প্রচার মাধ্যমে মেয়র ও কলেজ কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। যার সাথে প্রকৃত ঘটনার কোন মিল নেই।’

কর্তৃপক্ষ বলেন- রাস্তা সম্প্রসারণে আমাদের কোন আপত্তি নেই। জায়গা ছাড়তে আমরা প্রস্তুত। তবে তা যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সম্পন্ন হবে। সিসিক থেকে আমাদের যে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিটি দেশের বিদ্যমান জমি অধিগ্রহণ (ভূমি মন্ত্রণালয়) আইনবিধি মোতাবেক ইস্যু করা হয়নি। তাড়াহুড়ো করে দেয়াল ভেঙ্গে দেয়ার সিদ্ধান্তের কারণেই এই ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আশাবাদী এ ব্যাপারে আর তেমন সমস্যা হবেনা। মেয়র মহোদয়ের উপস্থিতির কারণে  সৃষ্ট অনাকাংখিত ঘটনাটি নিরসনের পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে। তা শীঘ্রই নিষ্পত্তি হবে।

বিবৃতিতে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন মহলকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন- ‘সৃষ্ট ঘটনার প্রেক্ষিতে যারা কলেজ কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, বিশেষ করে রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবিসহ সাংবাদিক সমাজ যে সহযোগিতা করেছেন সেজন্য আমরা কৃতজ্ঞ।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ১৮ জুলাই ২০১৭/ প্রেবি/ এমজেএইচ/ এমইউএ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন