আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

খাদিজা, কয়েকটি কুকুর আর জীব-প্রেম (ভিডিওসহ)

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৩-১২ ১৮:৩৫:৩১

এমরাজ চৌধুরী :: প্রেম ও  ভালোবাসার মানে কি? এর সঠিক ব্যাখ্যা আমরা কি জানি? প্রেম-ভালবাসা বলতে শুধু নারী-পুরুষের আকর্ষণকেই বুঝতাম এতোদিন। কিন্তু সেই ধারণা পাল্টে দিল খাদিজা নামের ছোট্ট মেয়েটি। সে আমাদের এমসি কলেজ এলাকায় থাকা পথশিশুদের মধ্যে একজন।

কাল বিকাল ৩টার দিকে নাটকের রিহার্সাল শেষে আমরা সবাই (আমি, বিধান দা, ইয়াকুব ভাই, আসাদসহ নাটকের অন্যসব সদস্য) যখন বের হচ্ছি, ঠিক তখন দেখি ছোট একটা মেয়ের সাথে কয়েকটি কুকুর। অবাক হয়ে দেখছি সে কুকুরগুলোকে আদরের চলে থাপ্পড় দিচ্ছে, শাসনের সুরে কথা বলছে, নাম ধরে গলায় বার বার জড়িয়ে ধরছে। তাকে দেখে ইয়াকুব ভাই বললেন, ‘তোমার নাম কিতা গো?’ সে জবাব দেয়, ‘খাদিজা’। আবারও ইয়াকুব ভাই জিজ্ঞেস করেন, ‘এরা কারা? তোমার কি হয় এরা?’

খাদিজা উত্তর দেয়, ‘এরা আমার বন্ধু।’ এই কথাটাই আমার হৃদয় স্পর্শ করে। আসলেই কি এই দুয়ের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধুত্ব ভাবা যায়?

খাদিজাকে কুকুরগুলোকে যেভাবে গলার সাথে লেপ্টে ধরছিল, আদরের চলে এদেরকে মারছিল, তা দেখে মনে হয়েছে জগতে এই পশুগুলোর পরম মায়ার, ভালবাসার একমাত্র মানুষ এই খাদিজা। খাদিজার বেলায়ও একই কথা খাটে। আমরা মুগ্ধ হয়ে দেখেছি খাদিজা কুকুরগুলাকে বলছে, ‘দে দে, আমার গালে মায়া দে’। কুকুর মুখ আর জিহবাটা খাদিজার গাল স্পর্শ করছিল, খাদিজা হি হি করে আসছিল। আহ, কি নিষ্পাপ হাসি! দেখে মনে হয় কতো জনমের কতো মায়া, কতো বন্ধন খাদিজা আর কুকুরগুলোর মাঝে, যা আমাদের জাগতিক ভালোবাসা, মায়ার ঊর্ধ্বে।

আসার সময় দেখলাম কুকুরগুলোর নাম ধরে সাঁই করে দৌড় দিচ্ছে খাদিজা। কুকুরগুলো তার পিছু পিছু দৌড়াচ্ছে। যেন কুকুরগুলোও বলছে, ‘দাঁড়াও বন্ধু, আমাদের খেলার সাথী, আমাদের নিয়ে যাও।’ আমার মনে বেজে উঠে ‘আহ, জীবন এতো সুন্দর হয় কিভাবে!’

অনেকেই বলেন, দুনিয়া থেকে নাকি প্রকৃত প্রেম, ভালোবাসা, মায়া বিদায় নিয়েছে। কিন্তু খাদিজার সাথে কুকুরগুলোর এই অলিখিত সম্পর্ক প্রমাণ করে, প্রকৃত মায়া আমাদের আশপাশেই আছে। শুধু দেখার চোখ দিয়ে খোঁজে নিতে হয়।

আমি ফিরে যাচ্ছি আর ভাবছি, ‘জীবে দয়া করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’। স্বামী বিবেকানন্দের এই বিখ্যাত উক্তি আমরা সবাই ছোট বেলায় পাঠ্যপুস্তকের ভাবসম্প্রসারণে পড়েছিলাম। সেই জীবে দয়ার মর্ম বা ধারা বা তার প্রকাশ্যরূপ দেখতে পাই ছোট্ট খুকি খাদিজার মাঝে।

এমসি কলেজেই এক খাদিজার প্রতি আমরা মানুষের হিংস্রতা দেখেছি। আরেক খাদিজার কারণে জীবের প্রতি প্রেমের নিষ্পাপ চিত্র দেখছি। সে যেন আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, হিংস্রতা না পৃথিবীময় শান্তি ও ভালবাসা ছড়িয়ে দাও। এতে এই জঞ্জালভরা পৃথিবী আর সুন্দর হবে, শান্তিময় হবে।

*লেখক: নাট্যকর্মী।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১২ মার্চ ২০১৯/আরআই-কে

@

ভিডিও : ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন>>>>

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন