আজ মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪ ইং

নজরুলগীতি শুনছেন কি?

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০৫-২৫ ২০:২৩:৫২

পার্থ তালুকদার :: বিশ্বায়নের এই যুগে, ব্যস্ততার এই দিনে, রক-ব্যান্ড-ধামাকা গানের তুমুল বাজারজাতের কারণে আমরা আমাদের প্রিয় নজরুলগীতি শুনকে যেন ভুলতেই বসেছি। এ গান অসাম্প্রদায়িকতার গান, সাম্যের গান, প্রেমের গান, আমাদের প্রাণের গান; সর্বোপরি আমার বাংলার গান। কিন্তু আদৌ কি আমরা পাশ্চাত্যের রক ও হিন্দি গানের ভিড়ে এই গানগুলোর মর্যাদা সঠিকভাবে দিতে পারছি ? আমাদের মন-মানসে কি নজরুল চর্চা অব্যাহত আছে?  

সেই ছোট্ট বেলা। পারিবারিক নিয়মেই গান শিখার একটা অলিখিত নিয়ম ছিল আমাদের মধ্যবিত্ত সংসারে। আমার মা খুব সুন্দর করে নজরুলগীতি গাইতে পারতেন। একটা সময় আমিও মায়ের সাথে হারমোনিয়াম বাজনা আয়ত্ত করে ফেলি। শুরু হয় মায়ের সুরেলা কন্ঠের সাথে আমার বেসুরা কণ্ঠের নজরুলগীতি চর্চা। ‘খেলিছ এই বিশ্ব লয়ে....’ এই গানটির মাধ্যমেই আমার নজরুলগীতির সাথে পরিচয়। গানটির তাল-লয় কী যে কঠিন তখন তা হারে হারে টের পেয়েছি। তবে মায়ের কন্ঠে যখন শুনতাম তখন হৃদয় ছুঁয়ে যেত।

এখন ইংরেজী মিডিয়ামে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী যদি বলে নজরুলের গান ‘ভেজাগান’, তখন নজরুলপ্রেমী হিসাবে আপনার অনুভূতি কেমন হবে, তার আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই  ইংরেজী মিডিয়ামে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী তথা তথাকথিত রকগান শ্রোতাদেরকে মন-প্রাণ শান্ত করে, নিরবে প্রাণের নজরুলগীতি শুনার জন্য অনুরোধ রাখছি। আর সাথে বলে রাখছি- নজরুলগীতির সাথে আজকের আধুনিক গানের তুলনা, অতি বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়।

কী নেই তাঁর গানে ? প্রেম, বিরহ, প্রকৃতি, আরাধনা-প্রার্থনা, চাঁদনী রাঁত, সাথে হৃদয় হরণ করা সুমধুর সুর। মোটকথা যা চাই,তাই আছে। আকাশের রঙ যেমন বদলায় তেমনি বদলায় মানুষের মন। বদলায় মানুষের জীবন ধারনের চাহিদা, জীবনের গল্প। নজরুল মানুষের জীবনের রং পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে শত শত গান লিখে রেখেছেন। যা রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আর কোন কবি লিখেছেন কিনা সন্দেহ।

ধরুন আপনার মনে আধ্যাত্মিক ভাবের উদয় হয়েছে। তখন আপনি শুনে নিতেন পারেন নজরুলের এই গানটি- ‘অঞ্জলী লহ মোর সঙ্গীতে’ অথবা ‘ব্রজগোপী খেলে হরি’। সাথে হৃদয় আকুল করা সেই গান ‘হে গবিন্দ রাখো চরণে’ আপনার উত্তপ্ত প্রাণকে সঞ্জীবিত করবে। আরও আছে-                 মোর ঘুম ঘোরে এলে মনোহর,       নমঃ নমঃ নমঃ নমঃ ।

এই গানগুলো তো আমাদের প্রাণের গান, প্রতিদিনের প্রার্থনার গান, আবেগের গান। তাছাড়া মন আন্দোলিত করা অসংখ্য শ্যামা-সংগীত তো রয়েছেই। তাই মনদিয়ে শুনুন, ভাল লাগবেই।

আপনার মনে প্রেম জেগেছে ? দেহে আবদ্ধ ব্যকুল মন উচাটন করছে ? চিন্তা করবেন না। আপনার জন্য আমাদের নজরুল এই গানটি লিখে রেখেছেন-
            উচাটন মন ঘরে রয় না, প্রিয়া মোর,
            ডাকে পথে বাঁকা তব লয় না।

বসন্তের গান শুনতে চাইলে শুনতে পারেন এই গানটি- ‘বসন্তে মুখর আজ’। আর আমাদের রণ সংগীতের কথা তো সবারই জানা। সেই গানটি-‘চল্ চল্ ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’ আমাদের হৃদয়ে সাহস জাগায়, শক্তি যোগায়।

প্রিয়তমা আপনার সান্নিধ্যে আসবে তাই অপেক্ষার প্রহর কিছুতেই কাটছেনা। তাই প্রিয়তমা কাছে আসার এবং না আসার সন্ধিক্ষণে শুনতে পারেন বিখ্যাত এই গানটি-
            ভরিয়া পরান শুনিতেছি গান
            আসিবে আজ বন্ধু মোর।

আপনার প্রাণের মানুষটি আপনার কাছে আসার পর আবার ফিরে যাবার জন্য উদগ্রীব, তখন প্রিয় মানুষটিকে শুনিয়ে ফেলুন এই গান-
            প্রিয় যাই যাই বলনা
            আর করো না ছলনা।

আপনার ছোট্ট সোনা বাবুটি সকাল বেলা ঘুমে কাতর। কিছুতেই তার নরম ঘুম ভাঙ্গতে পারছেন না। তখন সাহায্য নিতে পারেন এই গানের-
            ভোর হলো, দোর খোল
            খুকু মনি উঠরে।

এখন আসি বিরহ পর্বে। আপনি যদি প্রিয়তমাকে হারিয়ে বিরহ যন্ত্রনায় কাতর হয়ে থাকেন তখন নজরুলের  বিরহের গানগুলো হৃদয়ে সুঁচের মত আঘাত করবে। আপনার মনের অব্যক্ত কথাগুলো তাঁর গানের কথা মালায় খোঁজে পাবেন অনায়াসেই। তাই বিরহক্ষণে শুনুন এই গান গানটি-
            হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে
            কুড়ায় ঝরা ফুল, একেলা আমি।

অথবা

            ভুলি কেমনে        আজও যে মনে
                বেদনা সনে রহিল আকা,
            আজও সজনী               দিন রজনী
                সে বিনে....সকলি ফাঁকা।

তাছাড়া গ্রামীণ আবহে আচ্ছন্ন এই গানটি শুনলে বিরহের সাথে গ্রামীণ কিছু চিত্রপট আপনার হৃদয় মাঝে ফুটে উঠবে-
            গাঙ্গে জোয়ার এলো ফিরে, তুমি এলে কই
            খিরকি দুয়ার খুলে পথ পানে চেয়ে রই।

এই জীবনে প্রিয় মানুষটির সাথে দেখা না হলেও পরজনমে তাঁর দেখা পাওয়ার তীব্র বাসনা নজরুলের এই গানে ঠাই পেয়েছে-
            পর জনমে দেখা হবে প্রিয়
            ভুলিও মোরে হেথা ভুলিও।

তাছাড়া বিদায়ের সেই বিখ্যাত গান আপনার হৃদয়ে দাগ কাটবেই।
            আমার যাবার সময় হল দাও বিদায়
            মোছ আঁখি দুয়ার খোল দাও বিদায়।

২৪শে মে ছিল গণমানুষের কবি, সাম্যবাদী কবি, অসাম্প্রদায়িকতার কবি, কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন। ‘নজরুলের দেশপ্রেম ও অসাম্প্রদায়িকতার বাণী আমরা মন-মানসে লালন করবো’- এই হোক তাঁর জন্মদিনে আমাদের অঙ্গীকার। শুভ জন্মদিন হে বিদ্রোহী কবি।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন