আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

‘গরীবের ঘোড়ারোগ না অন্য কিছু?’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৪-০৬ ০২:০৩:০৬

শাহাদত চৌধুরী :: ‘ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একবার ঢুঁ মেরে আসুন। তারপর বলুন আবুসিনা হোস্টেলের স্থানে জাদুঘর হবে না হাসপাতাল হবে? গরীবের ঘোড়ারোগ যত্তসব।’ কথাগুলো আমার নয়, আমার বেশ ঘনিষ্ট একজন প্রতিবেশীর। আজ এক সামাজিক অনুষ্ঠানে খেতে বসে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে সিলেটে জাদুঘর স্থাপনের কথা উঠতেই প্রায় তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন তিনি।

শিক্ষিত এবং মার্জিত প্রকৃতির মানুষ, অনেক দিনের পরিচয়। দেশ ও সমাজের অসংগতির নানা বিষয় নিয়ে কথা হয় বিভিন্ন সময়। যুক্তি বুঝেন ভালো। তবে মাঝে মাঝে বুঝতে সময় নেন, এই আর কি। যেমন আজকে লেগেছে প্রায় এক ঘন্টা, অর্থাৎ ঘন্টাখানেক বিতর্কের পর তাঁকে এটা বুঝাতে সক্ষম হয়েছি যে জাদুঘর কোন গরীবের ঘোড়ারোগ নয়।

আমার মত ক্ষুদ্র একজনের মতামত কর্তা ব্যক্তিদের সিদ্ধান্ত গ্রহনে কোন প্রভাব ফেলবে না, এটা সত্য। তবে মনের শান্তনা হিসেবে বিষয়টি নিয়ে আমার ভাবনাগুলো প্রকাশের জন্য আমি উপরের কথোপকথনটির, আমার অংশটুকু তুলে ধরছি।

আমি বললাম ‘দেখুন, হাসপাতাল একটা কেনো? দু’টি বা তিনটি হলেও চাহিদা মিটবে না। কথা হলো এটা কোথায় হবে? একটা হাসপাতালের সামনে কেমন ভীড় লেগে থাকে, ভেবে দেখেছেন! একে তো চৌহাট্টাতে ট্রাফিকের চাপ অনেক বেশি, তার উপর ওসমানী হাসপাতাল আর উইম্যান মেডিকেল হাসপাতাল দু’টি তো একই রাস্তার দুই মাথায়। এর মাঝখানে আরেকটি হলে এই রাস্তা দিয়ে চলতে পারবেন? এমনিতেই সিলেটের রাস্তাগুলো ছোট, ফ্লাই ওভারের চিন্তা চলছে বলে শুনেছি।’

এসময় তিনি পাল্টা কিছু যুক্তি দাড় করালেন। কিছুক্ষণ তাঁর কথা শুনার পর আমি বলে চললাম, ‘শহর থেকে বের হওয়ার চারটি বড় রাস্তা আছে যেগুলো দিয়ে মানুষ সিটিতে প্রবেশ করে। একটা হাসপাতল স্থাপিত হলেই এটা একেবারে কেন্দ্রস্থলে হতে হবে কেন? গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষেরা তো এতে বিড়ম্বনার শিকার হবেন বেশি। আর সরকারী হাসপাতালে গ্রাম থেকে আসা রোগীর সংখ্যা সম্পর্কে ধারনা আছে আপনার? তাই উক্ত রাস্তা চারটির কোন একটিতে শহরের কাছাকাছি সুবিধামত কোন স্থানে হাসপাতালটি স্থাপন করা যেতে পারে। এতে গ্রাম ও শহর দু’টিরই বাসিন্দাদের উপকার হবে নিশ্চয়।

এ বিষয়ে তিনি সামান্য কিছু বলার পর আমি বললাম, ‘সিলেট কারাগারকে’ শহরতলীতে স্থানান্তর, সিলেট বিভাগীয় অফিস ও পাসপোর্ট অফিসকে মূল শহর থেকে কিছুটা দূরে স্থাপন করা যদি সমর্থনযোগ্য হয়, তবে সিলেটের নবনির্মিত হাসপাতালকে একটু দূরে স্থাপন করাটাকেও সমর্থন করা উচিৎ।’

এবার তাঁর কথার ধার কিছুটা কমেছে বলে মনে হলো। আমি বললাম, ‘চৌহাট্টা ঘেঁসেই দাঁড়িয়ে আছে আমাদের প্রাণের স্পন্দন শহীদ মিনার। তার সামান্য সামনে সমৃদ্ধ একটা পাঠাগার। ঠিক তার পরপরই আছে কাজী নজরুল অডিটোরিয়াম এবং বহু স্মৃতি বিজড়িত সিলেট স্টেডিয়াম। এর মাঝখানে একটি জাদুঘর হলে তো মন্দ হয় না। সাহিত্য-সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের একটা বলয় তৈরি হবে ঐ স্থানটায়। আর হাসপাতালের বিরোধিতা তো কেউ করছে না, শুধু স্থান পরিবর্তনের কথাই বলছেন তাঁরা।’

তিনি বললেন, ‘এখানে হাসপাতাল না হলে প্রজেক্টের টাকাগুলো ফেরৎ যাবে, এমন কথাই বলেছেন আমাদের মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী।’

আমি বললাম, ‘আমাদের (সিলেটী) মন্ত্রীর সংখ্যা সম্ভবত পাঁচ। তাঁদের মধ্যে অন্তত দুই জনের তো আমার জানা মতে কেবিনেটে যথেষ্ট প্রভাব আছে। আর সদ্য সাবেক অর্থমন্ত্রীর প্রভাবের কথা নাই বা বললাম। তাঁরা সকলে মিলে সম্মিলিত চেষ্টা করলে আগামী বাজেটে ২৫০ শয্যার নয়, ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতালের বরাদ্ধ নেওয়া কি খুব কষ্টকর হবে?\'

মনে হলো এবার কাজ হয়েছে। দেখলাম তিনি মাথা নাড়ছেন আর বলছেন, ‘কিছুটা তো বটেই।’

তারপর শিক্ষায় পিছিয়ে পাড়া সিলেটে একটা সমৃদ্ধ জাদুঘরের প্রয়োজনিয়তা, আর ইতিহাস ঐতিহ্যয্যকে শিশু-কিশোরদের কাছে কাগজে-কলমে তোলে ধরতে এর ভূমিকা সম্পর্কে আমাকে প্রায় দশ মিনিটের নাতিদীর্ঘ একটা বক্তৃতা দিতে হলো।বলাই বাহুল্য শেষ পর্যন্ত তিনি আমার সাথে একমত হয়েছেন।

আমাদের এই দুইজনের একমত হওয়াটা অন্যদের কাছে কোন গুরুত্ব বহন করে না জেনেও ব্যাপারটি সবাইকে কেনো জানাতে গেলাম জানি না।

লেখক : শিক্ষাবীদ

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন