আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং
:: মুনজের আহমেদ চৌধুরী ::
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার সাংবাদিকদের সাথে প্রশ্নোত্তরে, কিভাবে সংঘটন তৈরী করেছেন- তার বিলেতের স্মৃতির অংশটুকু থেকে কিছু কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর লন্ডন, লুটন, ব্রাডফোর্ড, ম্যানচেস্টার সহ যুক্তরাজ্যে শত শত মাইল দুরের শহর ঘুরে কিভাবে আওয়ামীলীগকে সংগঠন হিসেবে তৈরী করেছেন সেই দিনগুলির
কথা বলেছেন।
তার কথাগুলি এরকম, তখন তো আওয়ামীলীগের সদস্যও ছিলাম না, কোনদিন ভাবিও নি দলের সভানেত্রী হব। সারা ইংল্যান্ড ঘুরেছি। প্রথম ১৫ই আগস্টের জনসভা করলাম লন্ডনের ইয়র্ক হলে। আন্তর্জাতিক কমিশন করলাম বঙ্গবন্ধু হত্যার তদন্তের জন্য যেখানে দুজন নোবেল লরিয়েট ছিলেন। ১৯৮০ সালে স্যার টমাস উইলিয়াম কিউসি ভিসা নিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার তদন্তে বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলেন। তখন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকার তাকে ভিসা দেয়নি।
পাঠক, আশি সালে আওয়ামীলীগের অবস্থা কী ছিল, সরকারের অবস্থান কোথায় ছিল একবার ভাবুন তো। আর আজকের বিএনপির অবস্থান।
বাংলাদেশের এখনকার বড় দুটি দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপির। দুটি দলের দুই মূল নেতা সন্তান শেখ হাসিনা ও তারেক রহমান। দুজনের একজন লন্ডন শহরে নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছেন। সে সময়টাও খুব দুঃসময় সময় ছিল তার দলের জন্য, তার নিজের জন্য। সে দুঃসময় শেখ হাসিনা দেখেছেন, পার করেছেন। ভেঙ্গে যাওয়া দলকে এক করেছেন। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে পুনর্জন্ম দিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু তার কন্যা শেখ হাসিনাকে দলের সদস্য করেও রেখে যেতে পারেন নি। কিন্তু, বেগম খালেদা জিয়া তার পুত্রকে দলের নেতৃত্বের গঠনতান্ত্রিক মালিক বানিয়ে যেতে পেরেছেন জেলে যাবার আগে। সেসময়কার শেখ হাসিনা আজকের তারেক রহমানের চেয়ে বয়সেও ছোট ছিলেন। তখনকার শেখ হাসিনার লন্ডনে নিজের একটা গাড়িও ছিল না। আওয়ামীলীগের প্রবাসী কোন এক কর্মীর গাড়িতে চার পাচঁজন গাদাগাদি করে বসে শেখ হাসিনা বিভিন্ন শহরে যেতেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত দুটি নির্বাচনের সিস্টেম নিয়ে, তাঁর সরকারের নানা ন্যায়হীন আচরন নিয়ে আমি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে আমি সব সময় প্রতিবাদ জানাই, জানাব। সেটা ভিন্ন আলোচনা।
গতকাল গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলে ড. কামাল হোসেনের পাশের আসনে তার দলের সিদ্বান্ত অমান্য করা এমপি মোকাব্বির খান বসা ছিলেন। দলের সংক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা এ কারনে দল ছাড়বার ঘোষনা দিলেও নীরব ছিলেন ড. কামাল হোসেন। জোটের, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে মোকাব্বির শপথ নিয়ে মিষ্টি আর ফুল নিয়ে কামাল হোসেনের বাসায় গিয়েছিলেন। কামাল হোসেন তাকে ফিরিয়ে দেন নি।
কথার পিঠে কথা বলা যায়। বাহাস করা যায়। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গে দেশে দেশে রাজনীতির চলতি সংস্কৃতি এখন আমাদের তাই শেখায়। কিন্তু, একটা সময়ে একটি দেশের বুড়ো-জোয়ান সব রাজনীতিবিদ যখন নীতিহীন, দ্বিচারী আর নৈতিকভাবে অসৎ হয়ে যান সেই সময়ে জনগন অসহায় হয়ে পড়েন। রাজনীতি তখন সাধারন মানুষকে দুঃখই দেয়।
দেশে এখন সংগীতশিল্পী মিলাকে তার স্বামী অন্য নারী দ্বারা ছিনতাইয়ের (!)বিচারও সংবাদ সম্মেলন করে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাইতে হয়। রাস্তার গর্ত থেকে সমস্ত নাগরিক অভিযোগে সংকটে দেশের মানুষকে এখন শুধু প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাইতে শোনা যায়। মানুষের বিচার চাইবার জায়গাটা কতটুকু সংকীর্ন হয়ে গেছে, ভাবুন তো।
লেখক :: যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক