আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং
লিনু ফারজানা :: চুরি চামারি এখন শিল্পের পর্যায়ে। লুটা, বদনা রেখে আমরা এখন লিখা চুরিতে কলম শান দিচ্ছি। হায়া শরমের মাথা খেয়ে এক প্রবাসী লেখিকার লিখা চুরি করে একজন পুরো একটা বই বের করেছেন।
কি দুর্দান্ত প্রতিভা! প্রশংসা না করে পারা যায় না।
ভুক্তভোগী লেখিকা এই নিয়ে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। উল্টো রাতারাতি তারকা বনে যাওয়া সেই ‘চুরনি লেখিকা’ অটোগ্রাফ দিচ্ছেন ভক্ত পাঠকদের। পত্র পত্রিকা ও টেলিভিশনে নাকেমুখে ইন্টারভিউ দিতে দিতে দম ফেলারও নাকি ফুসরত পাচ্ছেন না তারকা খ্যাত লেখিকা। আর সত্যিকারের লেখিকা চুরি যাওয়া লিখা ফিরে পেতে নাকের জল চোখের জল এক করে প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন।
এইসব প্রতিবাদের তোয়াক্কা না করে চুরনি লেখিকা নির্মলেন্দু গুণ ও অসীম সাহার মতো বরেণ্য কবিদের সাথে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড দিচ্ছেন।
সরেজমিনে চুরির ঘটনা শুনে এমনিতেই ব্রহ্মতালু উত্তপ্ত। তার উপর দুর্দান্ত সেই দাঁত কেলানো ছবি দেখে ব্রহ্মতালুর বিস্ফোরণ ঠেকানো দায়।
প্লেজারিজম বা কুম্বীলকবৃত্তি অতি বড় মাপের গর্হিত অপরাধ। সেই অনেক কাল থেকেই কুম্বীলকবৃত্তি নিয়ে বচসা চলে আসছে। কোন কোন বচসা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। বচসা মেটাতে ও কুম্বীলকবৃত্তি হাতেনাতে প্রমাণ করতে আদালতেরও নাকানিচুবানি খাওয়ার নজির আছে।
কুম্বীলকরা আজকাল আবার পুকুর চুরির পাশাপাশি সিঁদেল চুরিতে সক্রিয়। ফেসবুকের কোন জনপ্রিয় স্টেটাস কিংবা লিখা কার্টেসি উল্লেখ না করে শেয়ার দিয়ে নিজের নামে অবলীলায় চালিয়ে দেয় কুম্বীলকেরা। একই লিখা একাধিক জনের ওয়ালে পড়ে বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়, আদৌ স্টেটাসটা কার?
গত কয়েকদিনের সর্বাধিক জনপ্রিয় কিছু স্টেটাসের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে খাটের তলা থেকে বুয়ার বই বের করার স্টেটাস ও ফেসবুকের জনপ্রিয় লেখিকা রাখী নাহিদের ফাতেমা বুয়া ছুটি নিয়ে বইয়ের মোড়ক উন্মোচনে যাওয়ার স্টেটাস দুটি চুরি হয়েছে ব্যাপকভাবে।
নেকি আর বদির লেখক দুই কাঁন্দের দুই ফেরেশতার কথা আমরা ভূলে বসে আছি সেই প্রাগৈতিহাসিক কালেরও আগে। বিবেকের ঘরে তালা লাগিয়েছি কবে তাও মনে করতে পারি না। চক্ষু লজ্জ্বাও এখন তলানিতে।
চোরের মায়ের বড় গলার কারণেই সৃজনশীল কাজের অবমূল্যায়ন বেশি হচ্ছে আর চুরি চামারিতে মূল্যায়ন হচ্ছে বেশি। তাইতো কোনটা নকল, কোনটা আসল চিনতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে।
ফারজানা ইসলাম লিনু
১৯শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সাল।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০/আরআই-কে