আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বিশ্বের বৃহত্তম গাড়ির নিলামে একদিন

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০২-২৩ ২২:০১:২০

জুয়েল সাদত :: ফ্লোরিডায় ২ জানুয়ারি থেকে ১২ জানুয়ারি ছিল বিশ্বের বৃহত্তম সংগ্রহযোগ্য গাড়ির নিলাম অনুষ্ঠান। সপ্তাহের তিন দিন হাইস্কুল পড়ুয়া মেয়েকে স্কুলে দিতে যাই। তাই ডিসেম্বরে মাসে দেখেছিলাম বিশাল প্যান্ডেল তৈরি হচ্ছ। আধা মাইল জায়গা জুড়ে একেকটি প্যান্ডেল। প্রায় প্রতি বছর গাড়ির নিলাম হয় এই কিসিমি ফ্লোরিডা শহরে।

কিসিমি ফ্লোরিডায় আমার বাস প্রায় ১৯ বছর। এখানকার প্রায় সব শোতেই যাওয়ার চেষ্টা করি। আমার বাসার পাশেই গ্যাটরল্যান্ড বা কুমিরের পার্ক। এই শহরের অনেকেই হয়তো তা দেখেননি।

১১ জানুয়ারি দুপুরের পর গেলাম সেই গাড়ি নিলামের জায়গায়। ৩০ ডলারের টিকিট কেটে ভেতরে যেতে হয়। এরপরও ঘোরার পরিধি সীমাবদ্ধ। এখানে অংশ নিতে সারা বিশ্বের ধনকুবেরেরা হাজার হাজার ডলার দিয়ে মাস তিনের আগে নিবন্ধন করে নেন।

এখানে আমেরিকান বড় লোকদের শখের কারবার দেখার জায়গায় গিয়ে হোঁচট খাই। এখানে মিডিয়া বুথ রয়েছে। সেখানে গিয়ে নানা ঝক্কি পেরিয়ে আগামী কয়েক দিনের জন্য মিডিয়া পাস পাওয়া গেল।

মিডিয়া পাসের বিশেষত্ব হলো এটা থাকলে মূল বিডিং এরিয়ায় যাওয়ার সুযোগ হয়, ছবি তোলা যায়।

অবশেষে নিলামে যাওয়ার সুযোগ হলো। এখানে মূল ফটক আটটি। ৩৫ হাজার সংগ্রহযোগ্য গাড়ি নিলামের জন্য প্রস্তুত। চলছে কোটিপতিদের কারবার। ১০ দিনে সাড়ে তিন হাজার গাড়ি নিলাম হবে। ভেতরে ঢুকে আমেরিকার সম্পর্কে নতুন ধারণা হলো। কারণ ভেতরে যারা আছেন তাঁরা সাধারণ কেউ নন। তাঁরা দৈনন্দিন ব্যবহারের গাড়ি কিনতে আসেননি। এসেছেন শখের গাড়ি কিনতে। এক একটা প্যাভিলিয়ন দেখছি আর অবাক বিস্ময়ে নতুন এক আমেরিকা আবিষ্কার করছি। ঘণ্টা তিনেক পর মূল স্থানে গেলাম। ‘বিডার অনলি’ লেখা স্থান যারা গাড়ি কিনবেন তাঁদের জন্য বরাদ্দ।

দেখা গেল, ১৯৫৮ সালের প্লাইমাউথ ফিউরি গাড়ির দাম ৫ লাখ ডলার, ১৯৭১ সালের ফেরারি ৩৬৫ জিটিবি ৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার, ২০০৬ সালের ফোর্ড জিটি হ্যারিটেজ এডিশন ৪ লাখ ২৫ হাজার ডলার, ১৯৬৫ সালের পোরশে ৩৬৫ স্পিডার ৫ লাখ ডলার, ১৯৭২ সালের ফেরারি ৩৬৫ জিটিবি ৫ লাখ ৭৫ হাজার ডলার, ১৯৬৯ সালের ডডজ ডেয়টন ৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার, ২০১২ সালের পোরশে ৯১১ জিটিথ্রি কাপ ৪.০ দাম ৪ লাখ ডলার, ২০১৮ সালের ফেরারি ৪৮৮ স্পাইডার ৭০ অ্যানিভার্সারি ৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার, ২০১৬ সালের পোরশে ৯১১ আর ৪ লাখ ডলার, ১৯৬৭ সালের ফোর্ড মাসটাং এলিনর ৬ লাখ ডলার, ২০১৯ সালের ম্যাকলারেন সেনার মূল্য ১৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার, ২০১৬ সালের পোরশে ৯১৮ স্পাইডারের দাম ১৬ লাখ ডলার।

গাড়িগুলো ন্যূনতম বিড শুরু হচ্ছে ২৫ হাজার ডলার থেকে সর্বোচ্চ পৌনে দুই মিলিয়ন। একেকটি গাড়ি নিলামে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় নেয়। ধনকুবেররা ক্যাটালগ দেখে আগেই গাড়ি সার্চ করে রাখেন। ফ্লোরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তা বিক্রি হয়ে যায়। একজন থেকে আরেকজন বিড করছেন এক লাখ, দেড় লাখ বেশি দিয়ে। মনে হচ্ছিল এক দেড় লাখ ডলার ১০০ ডলারের সমান।

যারা বিলিয়নিয়ার মানে গোল্ড ডায়মন্ড সিটে বসেছিলেন, তাঁদের জন্য খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। পুরো প্যাভিলিয়নে বড় লোকদের আনাগোনা। ফ্লোরে গাড়িগুলো বিক্রেতারা নিজে চালিয়ে আসছেন। অনেক গাড়িতে স্বামী-স্ত্রী এক সঙ্গে। আমি রেড কার্পেট ফ্লোরে ছিলাম অনেকক্ষণ।

প্রতিদিন কোন কোন গাড়ির নিলাম হবে তা আগেই নির্ধারণ করা থাকে। তাই যারা কিনবেন তাঁরা ফ্লোরে আসার আগেই তা বাইরে দেখার সুযোগ পান। যিনি বিড করবেন তিনি গাড়ি ‍ পরীক্ষা করারও সুযোগ পান, তবে চালাতে পারবেন না। ৩ হাজার ৫০০ কারের এই বিশাল নিলামের সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার ভেন্ডর, ড্রাইভার, ক্লিনার ও পলিশার। সবাই ১০ দিনের জন্য কিসিমি ফ্লোরিডায় থাকেন।

অনেক সুন্দর এই ইভেন্টে গিয়ে মনে হলো, রাস্তার পাশে যে হোমলেস ব্যক্তি ‘গিভ মি চেঞ্জ’ এর জন্য দাঁড়িয়ে আছেন তিনি বড় বেমানান এই আমেরিকায়। সন্ধ্যায় যখন ফিরছিলাম তখন কানে বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল কত কম সময়ে লাখ ডলারের গাড়িটি বিক্রি হয়ে যায় বিডারের সমন্বিত চিৎকারে।

সৌজন্যে : প্রথম আলো
সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০/জিএসি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন