আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

যেমনি বুনো ওল তেমনি বাঘা তেতুল

পূর্ণদৈর্ঘ্য জীবনের স্বল্পদৈর্ঘ্য রোজনামচা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৩-২৪ ১২:৪০:২০

ফারজানা ইসলাম লিনু :: বিভিন্ন কারণে এই দেশে বহুবার আর্মি নেমেছে রাস্তায়। যুদ্ধ বিধ্বস্ত স্বাধীন দেশে সামরিক শাসন জারি হয়েছে। দুইজন সামরিক শাসক ক্ষমতা দখল করে একসময় বেসামরিক সরকার গঠন করেছেন। সেইসব বাস্তব কাহিনি আমাদের কাছে ইতিহাস।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনে মাঠে থাকা আর্মির ভুমিকা আমাদের কাছে আবার নিরেট বাস্তবতা।

দেশের প্রয়োজনে স্বল্প সময়ের জন্য ব্যারাক থেকে বেরিয়ে আর্মি খালি নির্বাচন নয় দেশের সব বাঁকা নিয়ম সিধা করতে তৎপর। আর্মির তদারকিতে কিছুদিনের জন্য সবকিছু অতিমাত্রায় সিধা সাবুদ হওয়ার কাহিনিও রয়েছে।

সাধারণ মানুষ যারা কারো বাড়া ভাতে ছাই দেয় না, তাদের কাছে গনতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র ও ফ্যাসিজম কেবলই একটা সংজ্ঞা। আর্মিতেই তাদের স্বাচ্ছন্দ্য বেশি।

রংচটা জিন্সের প্যান্ট পরা লম্বা চুলের পাংকু ছেলেরাই বেশি আর্মির টার্গেট। চোখের সামনে পড়লেই সেরেছে। ধরে নিয়ে গলার চেইন, হাতের ব্রেসলেট খুলে পাছায় জালি বেতের দুই ঘা বসিয়ে চুলে একেবারে বাটি ছাট দিয়ে ছেড়ে দিতো। সন্ধ্যার পর আর্মির টহলের ভয়ে সবাই গৃহকোনে। টিনএজ পোলাপাইন সামলাতে ভুক্তভোগী মা বাবারা জায়নামাজে বসে আর্মির জন্য খাস দিলে দোয়া করেন।

একবার ভোটের আগে আর্মিরা রাস্তায়। রিক্সাযাত্রী তিন তরুণের বচসা বেঁধেছে বুড়ো চালকের সাথে। উত্তেজিত তরুণরা তেড়ে গিয়েছেন পিতার বয়সী রিক্সাওয়ালার দিকে। পথযাত্রী একদল আর্মির চোখ এড়ায় না বিষয়টা। এগিয়ে এসে তরুণদের মৃদু ভৎর্সনা করে এমনটা না করতে আদেশ দেন। শাসনের অংশ হিসেবে তিনজনকে কান ধরে উঠবসও করানো হয়।

আর্মিরা চলে গেলে অপমানিত ক্ষুব্ধ ছেলেরা বুড়ো রিক্সা চালককে পেটাতে থাকে ইচ্ছামতো। আর্মি দলনেতার কেন জানি সন্দেহ হয়। গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে আসে তারা। এইবার আর মৃদু ভৎর্সনা নয়, পিঠের উপর লাঠির বাড়ি পড়ে সপাং, সপাং। এতোক্ষণ যারা রিক্সাওয়ালাকে প্রহারের দৃশ্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছিলেন তারাও নিরাপদে সরে যেতে কালক্ষেপণ করলেন না।

উৎসুক জনতার এগিয়ে আসা দূরে থাক, তফাতে দাঁড়িয়ে মজা দেখারও অবকাশ নেই। আর্মিরা পাছায় পিঠে দুই ঘা দিয়ে যদি জিজ্ঞেস করে, তুই দাঁড়িয়ে এইখানে কি দেখোছ?

উপদেশ অপেক্ষা দৃষ্টান্ত ভালো। এক কাহিনিতে সবার কান খাড়া।

নিত্য ন্যায্য ভাড়া চেয়ে পিটুনি খাওয়া রিক্সা ড্রাইভার আর্মিকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে দ্রুত প্রস্থান করে। মনে মনে ভাবে এই হয়েছে।

আর্মির এমন অগনতান্ত্রিক আচরণে আমরা সুশীলরা ত্যক্তবিরক্ত নিঃসন্দেহে। কারণ কারো প্রতি অবিচার করার অধিকার যদি ব্যক্তির না থাকে, তবে সে অধিকার রাষ্ট্রেরও থাকতে পারে না।

আধুনিক সভ্য রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য।

কিন্তু ছেচরা বাঙালির জন্য যেমন বুনো ওল তেমনি বাঘা তেতুলের বিকল্প নেই।

আর্মি দেখলেই তাদের বাঁকা লেঞ্জুড় সোজা হইতে সময় লাগে না।

করোনা নিয়ে পুরো বিশ্ব এখন বেসামাল। খালি বাঙালির কাছে করোনা মানে বিরাট বিনোদন, বিরাট আনন্দ। বলে কয়ে, বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাদের সোশ্যাল ডিস্টেন্সের আওতায় আনা যাচ্ছে না। স্কুল কলেজ বন্ধের সুযোগে তারা আরো বেশি মরিয়া। তাদের অবিবেচনাপ্রসূত আচরণে মরণঘাতী মহামারি করোনা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের হার। মৃত্যুও ঠেকানো যাচ্ছেনা।

আমাদের করোনা টেস্টের কীট নেই, আইসোলেশন সেন্টার নেই, প্রশিক্ষিত মেডিকেল টিম নেই, ডাক্তার নার্সদের সুরক্ষা প্রদানকারি ইকুইপমেন্ট নেই, এয়ারপোর্টে থার্মাল স্ক্যানার নেই।

কিন্তু ব্যারাক ভর্তি আর্মি তো আছে আমাদের। দেশের দুর্দিনের অতন্দ্র প্রহরী তারা সদা প্রস্তুত দুর্যোগ মোকাবেলায়।

মহামারী করোনার বিস্তার রোধে আর মাত্র কয়টা দিন আগে আর্মির চেহারা দেখালেই হতো !! লোক জমায়েত করে ওয়াজ, মাহফিল, শিরনি, বিয়া শাদি, হরিনাম কীর্তন নিয়ন্ত্রণে আর্মি যথেষ্ট ছিলো। একবার চেহারা প্রদর্শন করলেই সারতো।

আজ মঙ্গলবার থেকেই জনগণের আইসোলেশন নিশ্চিত করতে ও করোনা প্রতিরোধে আর্মি মাঠে থাকবে, এই খবরে সবকিছু সুনসান। আর্মি সশরীরে নামার পর কি হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

যদিও স্বভাবে কৌতুহলি বাঙালি!! কোয়ারেন্টিন ভেঙে খোলা বাতাসে হাওয়া খেয়ে দুপুরের রোদ মাথায় নিয়ে বড় রাস্তার পাশে গিয়ে অপেক্ষা করবে, আর্মি কি করে দেখার জন্য।

দুর্যোগে, দুর্বিপাকে উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসা আর্মির করোনা অভিযান অব্যাহত থাকুক এই প্রত্যাশায়....।


‌সি‌লেট‌ভিউ২৪ডটকম/২৪ মার্চ ২০২০/শা‌কির/ডিজেএস

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন