আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

করোনায় দুশ্চিন্তামুক্ত ও সুস্থ থাকতে করণীয়

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৩-২৮ ১২:২৬:৪৪

শেখ আব্দুর রশিদ :: কথায় বলে 'বনের বাঘে খায় না- মনের বাঘে খায়'।চীনের উহানে গত ২০১৯ সালের ৩১ ডিসে ম্বরকরোনা ভাইরাস প্রথম সনাক্ত হয় কভিড-১৯ নামে। যা ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশ সহ প্রায়সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষের মধ্যে আতংক, পেরেশানী, ভয়এমনভাবে জায়গা করেনিয়েছে যে, কাজ করার স্বাভাবিক শক্তিটুকুও অনেকে পাচ্ছেনা।

এই করোনা নিয়ে নানারকম কথা উঠেছে যে, এটা মানবসৃষ্ট? নাপ্রাকৃতিক। এ নিয়ে গবেষণা বাত দন্তের সময় এখন নয়, বরং এখন উপস্থিত সময়ে আমরা করণীয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই। আতংকিত না হয়ে বরং সে ব্যাক্তির মতো হতে চাই, এক ব্যাক্তি তিনি যখন বুঝতে পারলেন হার্ট সচল থাকলেও তাঠিক ভাবে পাপ করছেনা ফুসফুসে দমনিতে চাইলেও দম নিতে পারছেন না, এমতাবস্থায় তিনি ৩০/৪০ সেকেন্ড দম বন্ধ রেখে এই সময়টুকু ও কাজেলা গিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চাইলেনএবং তিনিতাকরলেন। আমরাও সকল পরিস্থিতিতে সময়কে পুরোপুরি কাজে লাগাতে চাই।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, শতকরা ৭০ ভাগ রোগের কারণই হচ্ছে মানসিক। অর্থাৎ কোনঘটনার প্রেক্ষিতে মানসিকপ্রতিক্রিয়াই ৭০ ভাগ রোগসৃষ্টিরকারণ। শতকরা ২০ ভাগ রোগের কারণ হচ্ছে ইনফেকশন, ভাইরাস আক্রমন, ভুলখাদ্য গ্রহণ ও ব্যায়ামনাকরা। শতকরা১০ ভাগ রোগের কারণ হচ্ছে দৈহিকআঘাত, ঔষুধ ও অপারেশনেরপ্রতিক্রিয়া।

বর্তমানপৃথিবীতেসমস্যা দুইদিক থেকে, একদিকে করোনাভাইরাস আক্রমন আরেক দিকে এরফলে মানসিক প্রতিক্রিয়া। আমরা যদি মানসিক প্রতিক্রিয়ার দিকটা সামলে নিতে পারি তাহলে ৭০ভাগ রোগ থেকে বেঁচে যাই আর ২০ ভাগের মধ্যে ইনফেকশন, ভূলখাদ্য গ্রহন ও ব্যায়ামনাকরার ক্ষতি যদি পুষিয়ে নেয়া যায় তাহলে শুধু ভাইরাস আক্রমনে মানুষের ক্ষতিকতটুকুইবা থাকে?

মানব দেহ এক অপূর্ব সৃষ্টি। এই দেহে রয়েছে ৭০ থেকে ১০০ ট্রিলিয়ন কোষ। প্রতিটি কোষেখাবার পৌছানোরজন্য রয়েছে ৬০ হাজার মাইল পাইপ লাইন,রয়েছে ফুসফুসের মত রক্ত শোধনাগার, হার্টেরমত শক্তিশালী পাপযা জীবদ্দশায় সাড়ে ৪ কোটি গ্যালনের চেয়ে বেশী রক্ত পা¤পকরে। আর এই দেহের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রয়েছে সার্কুলেটরী, নার্ভাস, এন্ড ক্রাইন, ইমিউন সিষ্টেমের মতঅসংখ্য সিষ্টেম।

প্রতিদিন কোটি কোটি ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া, এলার্জেন, ফাঙ্গি ইত্যাদির মুখোমু খিহচ্ছি আমরাএবংএর অতি ক্ষুদ্রাংশই রোগ পর্যন্ত গড়ায়। কারণ; মানুষের প্রত্যেকেরই রয়েছে দৈহিক ও মানসিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা দীর্ঘ গবেষণার পর বলেছেনমন সেরা ডাক্তার আরমানব দেহ সবচেয়ে সেরা ফার্মেসী। যেকোনঔষধ কো¤পানীর চেয়েমানব দেহ বেশি ভালো ভাবে পেইনকিলার, ট্রাঙ্কুলাইজার, এন্টিবায়োটিক ইত্যাদি তৈরী করতে এবংসঠিক মাত্রায় সঠিক সময়ে ব্যবহার করতে পারে।

বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সমস্ত প্রাণীর বিকাশের মূলে নিহিত রয়েছে জেনেটিক কোড তথাডিএনএ। ডিএনএ-কে আরেক অর্থে বলা যায় জেনেটিক স্মৃতিভান্ডার। মানুষ ঠান্ডাবা অন্য যে কোন রোগ থেকে নিরাময় লাভ করতে পারছে, কারণ লক্ষ বছরআগে থেকে যে এন্টিবডিব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করতেশিখেছে, সেইএন্টিবডির স্মৃতি ও তথ্য মানুষের থাইমাস গ্লান্ডে সংরক্ষিত আছে এবং ইমিউনসিষ্টেম হচ্ছে পূর্ব পুরুষেরা যেসব রোগেআক্রান্ত হয়েছেনতারপ্রতিটির তথ্য সম্বলিত এক বিশ্বকোষ।

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। আশরাফুল মাখলুকাত। প্রথমত,স্রষ্টার প্রতিআস্থা ও বিশ্বাস থাকা। আমরা মহাজাগতিক মুসাফির অর্থাৎ কসমিক ট্রাভেলার।তাঁরকাছ থেকে, তাঁর ইচ্ছায় এসেছি, তাঁর নির্ধারিত একটা সময় পৃথিবীতে থাকবো এবং তাঁর ইচ্ছায় পৃথিবী থেকে চলে যেতেহবে। শ্রষ্ঠায় বিশ্বাসী কখনো আতংকিত হতে পারেনা। কারণমৃত্যু  থেকে কি কেউ পালাতে পারে কখনো! যার যে রোগে মৃত্যুএটাউসিলা মাত্র। সুতরাং জীবন যেরকম বীরের মতো মৃত্যু ও সেরকম বীরের মতো হওয়া উচিত।

শ্রষ্টা মহাবিশ্বে তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষকে এমনি এমনি ছেড়ে দেননি, বেঁচে থাকারসকলউপকরণ ও দিয়েছেন। করোনাভাইরাস নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা  যা বলেছেন এরসার সংক্ষেপ হচ্ছে প্রথমতঃ সতর্কতা অবলম্বন ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাই মিউনসিস্টেমকে শক্তিশালী করা।

করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাইমিউনসিস্টেম শক্তিশালী তাদের বেশীরভাগই আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক ষ্টেজেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। কারণ এই প্রাথমিক ষ্টেজেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাইরাসের সাথে লড়াইকরে সেটিকে প্রতিহত করে ফেলে। তারপরও ব্যতিক্রম যে নেই তা নয় তাই প্রয়োজন সতর্কতা।

সাবান দিয়ে বার বার হাত ধোয়া, হাঁচি, কাশি ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনেচলাএজন্য সব সময় একটা রুমাল ব্যবহার করা। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাবাড়াতে এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণ জনিত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাএবং মানসিক প্রতিক্রিয়ার কারনে ৭০ ভাগ রোগ অবসানেহার্ভাড মেডিকেল স্কুল ১২ মার্চ ২০২০ এ যোগব্যায়াম, প্রানায়াম ও মেডিটেশন করার পরামর্শ দিয়েছে।

শব্দবাকথা এক প্রচন্ড শক্তি। কথা শুধু বাস্তবতার বিবরণই দেয়না, বাস্তবতা সৃষ্টিকরে। ফ্রান্সেরডা. এমিল কোঁয়ে ১৯১০ সালেতিনি অটোসাজেশনের মাধ্যমে রোগমুক্তির জন্যে ক্লিনিক স্থাপন করেন। তিনি রোগীদের নিজে নিজে রোগমুক্ত হওয়ার উপায় শিক্ষা দিতেন। প্রত্যকে রোগীকে একটানা বিশবার বলতে হতো “ডে বাই ডে ইন এভরিওয়ে, আই’এম গেটিং বেটার এন্ড বেটার।” সকালে বিশবার, বিকালে বিশবার ব্যস রোগ উধাও। আমরা নিজেকে প্রতিদিন শতবার এই অটোসাজেশনটি দিতে পারি”সুস্থ দেহ প্রশান্ত মনকর্মব্যস্ত সুখীজীবন।”
সকালেনাশতার সাথে এক কোষকাঁচারসুন ও ২৫/৩০ টিকালোজিরার দানাখাওয়া, পর্যাপ্ত পরিমান বিশুদ্ধ গরম পানি পান করুন।

সম্প্রতি জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কোয়ান্টামফাউন্ডেশন প্রকাশিত ‘শুদ্ধাচার’ বইটি অন্তর্ভুক্ত করাহয়েছে। তাই যতক্ষণ ঘরে থাকতে হচ্ছে ততক্ষণ টিভি, মোবাইল, ফেসবুক, ইন্টারনেট ইত্যাদিতে সময় নষ্ট না করে এই সময়ে ‘শুদ্ধাচার’ বইটি পড়তে পারেন এবং নিজ নিজ ধর্মমতে বিপদ মুক্তির জন্য প্রার্থনাকরুন। স্রষ্টা সকলের সহায় হউন, আমিন।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান- রাষ্ট্রবিজ্ঞান, লতিফা-শফি চৌধুরী মহিলা ডিগ্রি কলেজ, দক্ষিণ সুরমা, সিলেট।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ২৮ মার্চ, ২০২০/ ডালিম

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন