আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

করোনাকালে গৃহবন্দি শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব যেন না পড়ে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৩-২৯ ০০:১৮:৩৭

জসিম উদ্দিন :: বিশ্বব্যপী মহামারী রুপ নিয়েছে করোনাভাইরাস। দিনদিন ভয়াবহ আকার ধারন করছে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটি। বিশ্বব্যাপী প্রতিদিনই কেড়ে নিচ্ছে হাজার হাজার প্রাণ। যেহেতু এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষেধক বা টিকা আবিষ্কার করা যায়নি। তাই উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন পৃথিবীর সব বাঘা বাঘা চিকিৎসক এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানী। প্রাণপণে চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা কিভাবে এই ভয়ানক ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অস্ত্র তৈরি করা যায়।

যেহেতু এখন পর্যন্ত কোনো টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার করা যায়নি। তাহলে এই পরিস্থিতিতে আমাদের করনীয় কি? কিভাবে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে পারি আমরা? বলা হচ্ছে, বাড়িতে থাকতে হবে, সামজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, মাস্ক পড়তে হবে, বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে, সর্দি-কাশি শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু যে বিষয়টি কম প্রচার হচ্ছে সেটা হল ‘রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।’ বলা হয় ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দেন কিউর।’ করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে হলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। যেহেতু বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদেরকে দীর্ঘ সময় গৃহবন্দি থাকতে হচ্ছে। তাই গৃহবন্দি শরীরে কমে যেতে পারে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা।

ব্রিটিশ সোসাইটি ফর ইমিউনোলজির অধ্যাপক আর্নে আকবর জানিয়েছেন, শারীরিক ভাবে ফিট থাকলেই রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হবে। আমাদের শরীরের রক্ষণ-প্রাচীর বলা হয় রক্তের শ্বেত কণিকাকে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে রক্তসঞ্চালন এই শ্বেত কণিকাকে সক্রিয় করে তোলে। শরীরের মধ্যে ঢুকে পড়া জীবাণুকে খুঁজে বের করে এই শ্বেত কণিকা।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে গৃহবন্দী জীবনে শরীরে ওপর যাতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ ব্যাপারে আমাদের কি করণীয় তা জানাচ্ছে জীবন যাপনের বিজ্ঞান কোয়ান্টাম মেথড। এই পরিস্থিতিতে সংক্রমণ এড়াতে গৃহবন্দি মানুষজনকে সচেতন থাকতে হচ্ছে। পাশাপাশি দীর্ঘ সময় ঘরে থাকার ফলে শারীরিক ও মানসিক দিকেও বিশেষভাবে সচেতন হতে হবে। কেননা সবাইকে দীর্ঘ সময় ঘরে থাকতে হচ্ছে কিন্তু খুব বেশি নড়াচড়া করা হচ্ছে না। শারীরিক পরিশ্রমও গেছে কমে। এভাবে থাকলে মানুষের শারীরিক-মানসিকভাবে বিভিন্ন রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

বয়স্করা, যাদের ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, গেঁটে বাত রয়েছে, তাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারণ তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। আর এমনিতেই ৬৫ বছর বয়সের পর থেকে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে।

• পরিবেশগত ও শারীরিক কারণে আমরা সঠিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারি না। ফলে শরীর প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পায় না। কারো কারো মাস্কের কারণে অক্সিজেনের জোগানও স্বাভাবিক থাকে না। এতে শরীরের উপর প্রভাব পড়তে পারে।
• ঘরে বসে থাকলে শরীরের বিষাক্ত জিনিস শরীরেই থেকে যায়, ঘাম হয়ে বের হয়ে যেতে পারে না। ফলে শরীরে বিপত্তি ডেকে আনার সম্ভাবনা থাকে।

• যারা বাইরে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করেন বা বিভিন্ন পরিবহনে যাতায়াত করেন, দুলুনি বা ঝাঁকুনিতে তাদের পাচনযন্ত্র বাড়তি কাজ করে। তাই লকডাউনের সময় শারীরিক নাড়াচাড়া কম হওয়ার ফলে হজমশক্তি স্বাভাবিক নাও হতে পারে।
• বিচ্ছিন্নতা মানুষকে আরও বিপন্ন করে তোলে। এসময় মানসিক ভারসাম্যের হেরফের হতে পারে।

• যারা প্রাতঃভ্রমণ বা সান্ধ্যভ্রমণ করতেন, তাদের শরীর ঠিক রাখাই এখন একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা বাইরে রাস্তায়, পার্কে বা মাঠে ভ্রমণ করতেন; তাদের শরীরের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে।

• ফলে নিয়মিতঃ শারীরচর্চা খুবই প্রয়োজনীয়। বয়স্করা ঘরের ভেতরে, বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করুন। প্রয়োজনে হালকা ব্যায়াম করুন যেন শরীরে কোনো নেতিবাচক কোনো প্রভাব ফেলতে না পারে। উৎফুল্ল থাকুন।

• প্রাণায়াম বা দমচর্চা করুন নিয়মিত। বুক ভরে অক্সিজেন নেয়ার অভ্যাস করুন।
• ঘরের ভেতরেই প্রতিদিন যোগব্যায়াম করুন। পরিবারের সবাই মিলে একসাথে আনন্দের সাথে শরীরচর্চা করুন।
• বিছানায় বেশিক্ষণ শুয়ে থাকবেন না। ঘরের কাজ করুন। ঘরের কাজে সাহায্য করুন। ঘরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানোর এটি মোক্ষম সময়।

• ভার্চুয়াল ভাইরাস নয়, এসময়ে পরিবারের সদস্যদের কোয়ালিটি সময় দিন। গল্প করুন। পুরনো দিনের গল্প শেয়ার করুন। পারিবারিক গেম খেলুন। পারিবারিক একাত্মতা বাড়ানোর বিরল এই সুযোগকে কাজে লাগান।
• পারিবারিকভাবে সবাই মিলে মেডিটেশন চর্চা করুন। আতঙ্ক-অস্থিরতা দূর হয়ে এতে মানসিক প্রশান্তি মিলবে।

লেখক: প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ, বানিয়াচং আইডিয়েল কলেজ।

সূত্র: কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, ঢাকাটাইমস।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন