আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

করোনার ছুটিতে অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালানো যায় যেভাবে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৩-৩০ ০৯:৩৪:৪৫

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেদওয়ান :: করোনা থেকে আমরা মুক্তি পাব একদিন ইনশাআল্লাহ। করোনা পরবর্তী একটি বিশ্বমন্দা যে আসছে তা অনেকেই ধারণা করছেন। জানমাল ও অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হবে দেশ-জাতি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট লাগবে। এ অবস্থায় উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনলাইন ক্লাস নেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। এটা খুবই সম্ভব বলে আমি মনে করি।

সেটা কিভাবে করা যায়?

অনলাইনে ক্লাস নেয়ার বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত  জনপ্রিয় একটি সফটওয়্যার হচ্ছে যুম (zoom)। বর্তমানে বহির্বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যুম ব্যবহার করে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে তৎপর হচ্ছে। আমরাও সেটা করতে পারি। সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা বাদে অন্য পরীক্ষা/টার্মটেস্টগুলো আমরা এসাইনমেন্ট আকারে জমা নিয়ে মারকিং/গ্রেডিং করতে পারি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার পরে দ্রুত ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে সেমিস্টার শেষ করতে পারি। সেক্ষেত্রে সেশনজট লাগবে না। এ কাজে যুম ছাড়াও আরেকটি সফটওয়্যার লাগবে, আর তা হল গুগল ক্লাসরুম (উইথ গুগল ড্রাইভ)।

ক্লাস কীভাবে নিবেন?

যুম একটি ফ্রি সফটওয়্যার। প্রো ভার্সনও আছে। যুমে একসাথে ১০০ জন কানেক্ট করা যায়। শিক্ষক সে ক্ষেত্রে মডারেটর বা হোস্ট হবেন ও ইমেইল ইনভাইটেশন পাঠাবেন ছাত্রছাত্রীদেরকে। সবাই যুক্ত হলে প্রত্যেকের ল্যাপটপ/ট্যাব/মোবাইল একেকটি ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে পরিণত হবে। সবাই সবাইকে দেখতে পাবে ও ইন্টারেক্ট করতে পারবে। শিক্ষক স্লাইডশোসহ কনটেন্টের উপর লেকচার দিতে পারবেন। স্লাইড না থাকলে ভিডিও কনফারেন্সের মতো লেকচার দিয়ে যাবেন। অন্যরা বাসায় বসে নিজ নিজ ডিভাইসের স্ক্রিনে তা দেখতে পারবে ও প্রশ্ন থাকলে জিজ্ঞেস করতে পারবে। ১০০ জনকে একসাথে ম্যানেজ করতে অসুবিধা হলে শিক্ষক যুমের ব্রেক অপশন ইউজ করে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ করে নিতে পারবেন। ছাত্র-শিক্ষকের সফল ইন্টারেকশনের জন্য যুমের চেয়ে ভালো সফটওয়্যার আর নেই। অনেকে হ্যাংআউট, স্কাইপ, ফেসবুক বা  ইউটিউবে  লাইভের কথাও বলেন। কিন্তু আসলে এসব দিয়ে কাজ হয় না। যুমের কোনও বিকল্প নেই। এ গেল ক্লাস নেয়ার বিষয়টা।

এসাইনমেন্ট কীভাবে জমা নিবেন ও মার্কিং করবেন?
সেজন্য গুগল ক্লাসরুম ব্যবহার করতে হবে। এটাও ফ্রি। এসাইনমেন্টসহ একাডেমিক ডকুমেন্ট আদান প্রদানের খুবই কার্যকর মাধ্যম হচ্ছে গুগল ক্লাসরুম। এটা পেপারবিহীন মাধ্যম। ধীরে ধীরে আমাদেরকে পেপারবিহীন কিভাবে কাজকর্ম করা যায় সেদিকে আগাতে হবে। দিস্তার দিস্তা কাগজ প্রিন্ট করা কমাতে হবে। মনে রাখতে হবে, এক পিস কাগজ মানে এক টুকরা গাছ! করোনা আসার আগে থেকেই আমি গুগল ক্লাসরুম ব্যবহার করে আসছি। আমি গতবার থেকেই সাস্ট, সিলেটে সেটা শুরু করেছি। সফলতার সাথে এসাইনমেন্ট অনলাইনে রিসিভ ও মার্কিং/গ্রেডিং করেছি একটা ব্যাচের (৩/১, ২০১৯, রিমোট সেন্সিং এন্ড জিআইএস)। যুমের মতই গুগল ক্লাসরুমে শিক্ষক একটি একাউন্ট খুলে ছাত্রছাত্রীদেরকে একটি ইমেইল ইনভাইটেশন পাঠাবেন। ছাত্রছাত্রীরা সে ইনভাইটেড লিঙ্কে ক্লিক করে গুগল ক্লাসরুমে সংযুক্ত হবে। সেখানে এসাইনমেন্ট /ডকুমেন্ট আপলোড করবে যা শিক্ষক তাঁর গুগল ক্লাস একাউন্টে পেয়ে যাবেন পিডিএফ হিসেবে। ছাত্র-শিক্ষক সেখানে কমেন্ট মেসেজের মাধ্যমে ইন্টারেকশন করতে পারবে। শিক্ষক সেখানে ক্লাস লেকচারগুলোও রাখতে পারবেন। এভাবে শিক্ষক সকল এসাইনমেন্ট পেয়ে যাবেন ও মার্কিং করে গ্রেড জানিয়ে দিবেন। কাজ হয়ে গেল! 

অস্ট্রেলিয়ায় বর্তমানে পোস্টডক রিসার্চার আমার স্ত্রী সাবিহা সুলতানা মেরিন আরও পাঁচ বছর আগে থেকেই যুম ক্লাসে এটেন্ড করে আসছে ঘরে বসে। ওদের ইউনিভার্সিটির (সেন্ট্রাল কুইন্সলেন্ড ইউনিভার্সিটি) প্রায় ১৬টি শাখা ক্যাম্পাস রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে। সে ব্রিসবেন থেকে যুক্ত হতো, যেখানে মডারেটর/টিচার যুক্ত হতেন রকহ্যাম্পটন ক্যাম্পাস থেকে। সম্প্রতি আমার ৪ বছর বয়সী বাচ্চাও রকহ্যাম্পটনে বসে যুমে সপ্তাহে একদিন ২ ঘণ্টার বাংলা ক্লাস করে! আমরা দেখছি, ছোট ও সহজ হয়ে আসছে পৃথিবী!

যুম ডাউনলোড সাইট
https://us04web.zoom.us/



লেখক : অধ্যাপক- ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগ,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট। 

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন