আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

দুরন্ত কামরান হয়ে ওঠেন কমিশনার থেকে সিটি মেয়র

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৬-২৪ ১২:১৯:০৯

সুয়েবুর রহমান  সুয়েব :: সরকারি কর্মকর্তা পিতার আদরের সন্তান বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান। মা-বাবার অতি আরাধনার সাত রাজারদন, হীরার টুকরো ছিলেন কামরান। ছোট বেলা থেকেই তিনি ছিলেন চঞ্চল, দুষ্ট ও ডানপিটে। সিলেট সরকারি পাইলট স্কুলে পড়ালেখা শুরু করেন এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে জড়িয়ে পরেন। নানী তাঁর আদরের নাতি কামরানকে মুজিব কোট বানিয়ে দেন। কাপড় ১০০ এবং বানানো ১৫ মোট ১১৫ টাকা খরচ হয়। স্কুলের ছাত্র অবস্থায় আওয়ামীলীগের মিছিল-মিটিংয়ে কামরান ছিল সবার শীর্ষে। পাড়ার বন্ধুদের নিয়ে গান বাজনা, খেলাধুলা ও সুরমা নদীতে সাঁতার কেটেই কেটেছে  তাঁর দুরন্ত শৈশব ও কৈশর। মুরারি চাঁদ কলেজে ১৯৭২ সালে উচ্চমাধ্যমিকে অধ্যয়নকালে বন্ধু-বান্ধব ও লোকজনের অনুরোধে কামরান সিলেট পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হন। সবচাইতে  কনিষ্ঠতম কমিশনার। ছাত্র -শিক্ষক , বন্ধু -বান্ধব  এবং মুরুব্বীরা কমিশনার সাব বলেই  ডাকেন। তাঁর তখন লজ্জা লাগত। পরে একই কলেজে স্নাতকে ভর্তি হন। জনপ্রতিনিধি হওয়াতে প্রায় সময় কলেজ কামাই করতে হতো। সর্বশেষ মদনমোহন কলেজ থেকে ১৯৭৬ সালে গ্রেজুয়শন ডিগ্রি  অর্জন করেন।

প্রচুর জনপ্রিয়তার কারণে তিনি ১৯৯৪ সালে সিলেট পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০০০ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রথম মেয়র ও মেয়াদ শেষে পুনরায় মেয়র  নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে শতকরা আশি ভাগের বেশি ভোট পেয়ে কারাগারে থেকে মেয়র নির্বাচিত হন। অন্য সকল প্রার্থীদের নমিনেশনের টাকা বাজেয়াফত হয়েছিল। অনেক চড়াই-উৎরাই  পেরিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন কমিশনার সাব থেকে মেয়র সাব, নগর পিতা, জননন্দিত নেতা, গণমানুষের নেতা, জনতার কামরান, নগরবাসীর প্রিয় নাম বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, বর্ষিয়ান নেতা, মাটি ও মানুষের নেতা। সিলেটের প্রতিটি মানুষের সাথে তাঁর ছিল আত্মার সম্পর্ক। অতি আপনজন  কামরান ভাই।

২০০৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-১ আসনে ধরমপাশা জনসভায় ভাষণ দেওয়ার  জন্য অনুরোধ  করি এবং নির্বাচনি শেষ জনসভায় ভাষণ দেবেন। এলাকায় মাইকিং এবং প্রচারণা শুরু হয় জননন্দিত মেয়র কামরান ভাই আসবেন। আমি মেয়র সাবের সাথে লেগে থাকলাম। গাড়ি  রেডি সব কিছু ঠিক আছে। আগের দিন সিলেট-১ আসনের শ্রদ্ধাভাজন আবুল মাল আব্দুল মুহিত এর জনসভা শেষ হয় রাত অনুমান ২টায়। মেয়র সাব বলেন, আগামীকাল শেষ জনসভা হিসেবে সিলেটে আরও অনেক জনসভায় ভাষণ দিতে হবে। হাওর এলাকায় সহজে আসা যাবেনা। আমি স্পীড বোর্ড রেডি রাখলাম কিন্তু মেয়র সাব স্পীড বোর্ডে চড়বেননা ভয় পান। তিনি মোবাইলে বক্তৃতা দিবেন। আমি গাড়ি নিয়ে হোটেল গুলশান থেকে রাত অনুমান ২টার পর রওনা দিয়ে সকাল ১১টায় ধরমপাশায় জনসভায় পৌছলাম। শুধু মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি মহোদয়কে বললাম অন্য কাউকে নয়। জনসভা চলছে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয় বক্তব্য দিবেন গণমানুষের নেতা মেয়র কামরান। আমি কামরান ভাইকে মেবাইল সংয়োগ করে দেই। জনতার কামরান বক্তৃতা  দিলেন। লোকে লোকারণ্য হয়েছিল, তিল ধারনের জায়গা ছিলনা। যেন জনসমুদ্র। মানুষ স্লোগান দিয়েছেন; কি দেখাইলা রতন ভাই, ধরমপাশায় জায়গা নাই। তাঁর অশ্রুভরা বক্তব্যে সকল মানুষ কেঁদে ছিল। মানুষের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছিল কামরান ভাই। বিপুল ভোটে অনুমান ১,৩০,০০০ বেশি ভোটে নৌকার বিজয় হয়। মোয়াজ্জেম হোসেন রতন  ভাইকে বিজয়ী  ঘোষণা  করা হয়। সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনই বিজয়ী করতে তিনি সর্বাত্মক ভূমিকা রাখেন। তিনি বিজয়ী ১৯জন এমপি মহোদয়গণকে সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সংবর্ধিত করেন। জাতীয় নির্বাচন থেকে স্থানীয় নির্বাচনে তিনি গুরুত্ববহন করেছেন।

আমি মদনমোহন কলেজের ছাত্র, এ জন্য নেতাকে দেখে উজ্জীবিত  হতাম। ছাত্রলীগ থেকে আওয়ামীলীগের একজন কর্মী এবং শিক্ষক হিসেবে সবসময় তাঁর কাছ থেকে উৎসাহ ও উদ্দীপনা পেয়ছি। মিছিলে, মিটিংয়ে, জনসভায়, উৎসবে এবং জনসংযোগে তাঁর সংস্পর্শে থাকি এবং আমাদেকে সাহস যোগোয়েছেন। নেতার রোগ মুক্তি কামনা করে হযরত শাহ্জালাল জামে মসজিদে ১৪ জুন বাদ আসর দোয়া আমি উপস্থি থেকে ইমাম হুজুর দোয়া করেন। পরদিন ঘুম থেকে উঠে আমাদের নেতার দুঃসংবাদ। আমি বিছানায় হাউ মাউ করে কাঁদি। নিরবে নিবৃত্তে কেঁদে চোখের জলে ভেসছি। জানাজায় যাওয়ার জ্ন্য রওনা দেই, কয়েকজন নেতা বলল প্রশাসনের মাধ্যমে ১২জন লোকে জানাজার নামাজ পড়বে। আরও কষ্ট লাগল।

২৩ জুন বাদ যোহর প্রিয় নেতা কামরান ভাইর কবর জিয়ারত করে দোয়া করলাম, আল্লাহু যেন  বেহেশতের সর্বোচ্চস্থানে রাখেন।       

বদর উদ্দিন আহমদ কামরান সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সম্মানীত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি আমাদের মাঝে ছিলেন/ আছেন। গণমানুষের হৃদয়ের মাঝে বেঁচে থাকবেন তাঁর কর্মের মাধ্যমে অনন্তকাল। তাঁর কর্মকে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার শক্তি যোগাবে। সুয়েব তাঁর পরিবার, সুনামগঞ্জ জেলা, সিলেট মদনমোহন কলেজ এবং প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে গণমানুষের নেতা, সিলেটবাসীর প্রিয় নাম বদর উদ্দিন  আহমেদ কামরান, জনতার কামরান, মেয়র সাবের জান্নাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের এবং ভক্ত ও শুভাকাঙ্খীদের গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।

লেখক: সিলেট মদনমোহন কলেজের হিসাববিঞ্জান বিভাগের প্রভাষক


শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন