আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বাংলার আধ্যাত্মিক সম্রাট শাহজালাল

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৭-০৯ ১৩:৪২:৪৩

আলী ফজল মোহাম্মদ কাওছার :: হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতদের মধ্যে সেসব ওলী, গাউস, কুতুব, আবদাল, মানুষকে দ্বীনের পথে দাওয়াত দিয়ে গেছেন আজীবন। জীবনের আরাম আয়েশ ত্যাগ করে যারা মানুষকে সত্যের পথে আহবান করে গেছেন আল্লাহ ও আল্লাহ পাকের হাবিব সারোওয়ারে কাওনাইন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পথে চলার পরামর্শ দিয়ে গেছেন তাদের মধ্যে এক শীর্ষ স্থানীয় আল্লাহ পাকের এক মকবুল ওলীর নাম হযরত শাহজালাল মুজরদে ইয়ামনী রহ।

নিজের দেখা স্বপ্ন ও মামা ও স্বীয় মুর্শিদ হযরত সৈয়দ আহমদ কবির (রহ) এর পরামর্শে পবিত্র ভুমি মক্কা হতে কয়েকজন সঙ্গী হাজী ইউসুফ, হাজী খলিল, হাজী দরিয়া ও চাশনী পীরকে নিয়ে যাত্রা শুরু করে যাত্রা পথে অনেকে যোগদান করেন যার সংখ্যা ৩৬০ হয়ে তাদের নিয়ে সিলেটে পদার্পণ করেন। সিলেটে এসে হিন্দু অত্যাচারী রাজা গৌড় গৌবিন্দকে পরাজিত করেন। এরপরে পথহারা বনী আদমকে দ্বীনের দাওয়াত দিতে থাকেন। ইতিহাস বলে তিনি চাইলে সিলেটের শাসনভার গ্রহণ করতে পারতেন, শাসনভার গ্রহণ করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল কিন্তু তিনি গ্রহণ করেনি। তিনি তো এসেছেন পথহারা বনী আদমকে দ্বীনের দাওয়াত দিতে সত্য সুন্দরের পথে আনতে। তাইতো ক্ষমতা কিংবা শাসনভার গ্রহণের মতো বিষয় তিনাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। তিনার জীবনে ব্রত ছিল আল্লাহ ও আল্লাহ পাকের হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সন্তুষ্টি অর্জন। হযরত শাহজালাল রহ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পথ হারা বনী আদমকে দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে গেছেন। মানুষকে সত্যের পথে আহবান করতে গিয়ে বিয়ে পর্যন্ত করেননি।

জীবন যৌবন বিসর্জন দিয়ে গেছেন দ্বীনের তরে। ৭৪৬ হিজরি সনের ১৯ শে জিলক্বদ তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। প্রায় ৭০১ বছর হয়ে গেছে তিনি চলে যাওয়ার কিন্তু এখনও অসংখ্য মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার আসন জুড়ে তিনি আছেন। এখন উনার অনেক স্মৃতি আকড়ে আছে মানুষ। উনার প্রবর্তিত লাকড়ি ভাঙ্গার উৎসব অসংখ্য মানুষ ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে পালন করে থাকে। বিভিন্ন ধর্ম বর্ণের হাজার হাজার মানুষ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে আসেন প্রিয় শাহজালাল রহ এর মাজার জিয়ারতে।

নির্বাচনী প্রচারণার শুরু হয় উনার মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধানগন সুদূর ঢাকা থেকে ছুটে এসে হযরত শাহজালাল রহ এর মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে নিজেদের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। একটা কথা প্রচলিত জাতীয় নির্বাচনে শাহজালাল রহ এর মাজার যে জায়গায় অবস্থিত সেই সিলেট-১ আসনে যে দলের প্রার্থী জয়লাভ করেন সেই দল সরকার গঠন করে যা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশে অসংখ্য আউলিয়াদের আগমন গঠেছে এবং অসংখ্য আউলিয়াদের জন্ম গ্রহণ করেছেন। সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন এসব আউলিয়াদের সম্রাট হচ্ছেন হযরত শাহজালাল মুজরদে ইয়ামনী রহ। তাই তিনার মাজার যে সিলেটে অবস্থিত সেই সিলেটকে বাংলার আধ্যাত্মিক রাজধানী বলা হয়।

আগামী ১১ ও ১২ জুলাই তিনার ইন্তেকাল বার্ষিকী উপলক্ষে ৭০১ তম উরুস হওয়ার কথা ছিল কিন্তু বৈশ্বিক মহামারীর কারণে এবছর স্থগিত করা হয়েছে। একটি বিষয় উল্লেখ করা জরুরী হযরত শাহজালাল রহ এর উরুস কিংবা বিভিন্ন ওলী আউলিয়াদের উরুস উপলক্ষে শরীয়ত বিরোধী কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে যারা মাজার জিয়ারতের মতো পবিত্র কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ কিংবা উরুসকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে তাদের প্রতিহত করার জন্য মাজার কমিটি ও মাজারে অবস্থিত মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ রইল। আমাদের সারাজীবন কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করা উচিত ওলী আউলিয়াদের যাদের ঘাম, রক্তে, শ্রমে আমরা মুসলমান হয়েছি। বিশেষ করে হযরত শাহজালাল রহ কে আমাদের কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করা উচিত, তিনার দরজা বুলন্দির জন্য মহান আল্লাহ পাকের দরবারে দোয়া করা উচিত। কারণ উনার নেতৃত্বে ৩৬০ আউলিয়ার মাধ্যমে সিলেটে ইসলাম এসেছে।

৩৬০ আউলিয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল সহ ভারতের আসাম প্রদেশে দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে গেছেন। যাদের মেহনতের কারণে আমরা মুসলমান হয়েছি। কিছু মানুষের শরীয়ত বিরোধী কর্মকান্ডের জন্য মাজার জিয়ারতকে প্রশ্নবিদ্ধ করা মাজার জিয়ারতে না যাওয়া বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। পরিশেষে আল্লাহ পাকের মকবুল ওলী বাংলার আধ্যাত্মিক সম্রাট হযরত শাহজালাল রহ এর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। আল্লাহ পাক উনার দরজা বুলন্দ করুন আমাদেরকে রুহানি দোয়া নসিব করুন।

লেখক: কলামিস্ট, সিলেট।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন