আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং
।। জুয়েল রাজ ।।
শিরোনামটি, বন্ধু, সহযোদ্ধা, সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিটু- ফেইসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেয়া। লাইনটি আমার মনে ধরেছে। রাজপথ আসলেই কাউকে ফেরায় না। যে যে লক্ষ্য নিয়ে পথে নামে সেই লক্ষ্যেই পৌঁছে যায়। পথ তাকে সেখানে পৌঁছে দেয়। খুব কম মানুষ আছে যারা পথ দেখায় কিংবা পথের সৃষ্টি করে।
গতকাল সিটি চত্বরের নাম ফলক বদলে দিয়ে জননেতা বদর উদ্দীন কামরানের নামে "কামরান চত্বর" নাম ফলক লাগিয়ে দিয়েছেন সিলেটের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।
সিলেট শহরে কামরানের নামে চত্বর হবে, আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায়। সেই সময়ে আবার, কাজটি আওয়ামী লীগকেই জোর করে করতে হয়েছে।
কিন্তু এই চত্বরের নাম করণের মধ্য দিয়ে, কামরানের প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসার যে নিবেদন সিলেটের আওয়ামী লীগ দেখিয়েছে, সেটি অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। রাজিনীতিতে মৃত মানুষের মূল্যায়ন খুব কম। কারণ সেই নামে কেউ বাজী ধরে না। জীবিত নেতাদের কেন্দ্রেই ঘুরপাক খায় কর্মীরা। মোহরের প্রলোভনে।
সিলেটের মাটি ও মানুষের প্রিয় মুখ, প্রিয় নেতা, জনাব বদর উদ্দীন আহামেদ কামরান, প্রকৃত জননেতার যে সংজ্ঞা হয়। কামরান ভাই ছিলেন সেই মানুষ।
কামরান ভাইয়ের রাজনৈতিক স্বর্ণালী সময়ে আমরা সিলেট শহরে বেড়ে উঠেছি। মিছিলে যাওয়ার শ্রেষ্ঠ সময়ে, মিছিলের সব পায়ের সাথে পা মিলিয়েছি। হেলাল হাফিজের কবিতার মতোই-
মিছিলের সব হাত/কণ্ঠ/পা এক নয়।
সেখানে সংসারী থাকে, সংসার বিরাগী থাকে,
কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার।
কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার
শাশ্বত শান্তির যারা তারাও যুদ্ধে আসে
অবশ্য আসতে হয় মাঝে মধ্যে
অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে।
কামরান ভাইদের মতো নেতারা রাজপথেই সংসার সাজিয়েছিলেন। মোহরের মোহে জীবনের যুদ্ধে আমরা যুদ্ধবাজ হয়েছি। যারা রাজপথে রয়ে গিয়েছিলেন রাজপথ তাঁদের বিমুখ করেনি।
কামরান ভাইয়ের অকাল প্রয়াণ, বিশাল এক শূন্যতা সৃষ্টি করেছে সিলেটের আওয়ামী লীগের রাজনীতীতে। সামনে হয়তো সেটি আরো প্রকট হয়ে দৃশ্যমান হবে। একদম সাদা চোখে বললে সিলেটের মেয়র পদে নির্বাচন করার মতো একজন প্রার্থী নিয়েই সংকটে পড়বে আওয়ামী লীগ। প্রকৃতি শূন্যস্থান পছন্দ করে না। কেউ না কেউ হয়তো হাল ধরবেন। ভোটের রাজনীতিতে কামরান ভাইয়ের চেয়ে ও সফল হবেন। কিন্তু প্রতীক হতে পারবেন কী না। সে হয়তো সময় বলে দিবে। কামরান নামটি আসলেই যেভাবে মানুষ এক নামে চিনে ফেলত "সিলেটের কামরান " অন্য পরিচয়ের আগে তাঁর এই যে সিলেটের কামরান হয়ে উঠা, সিলেট নামের সাথে তাঁর নামের যে ব্রান্ডিং বা সমার্থক প্রতীক হিসাবে মূল্যায়িত হওয়া, খুব কম মানুষের ক্ষেত্রেই এমন হয়।
বদর উদ্দীন কামরান কি ছিলেন অথবা কি ছিলেন না, তার রাজনৈতিক মেধা, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা , অথবা নির্বাচনে পরাজয় নিয়ে নানা মত নানা বিতর্কের সুযোগ আছে। থাকবেও। কিন্তু দ্বিতীয় একজন কামরান কিন্তু সিলেটে তৈরী হয় নাই। অস্বীকার করছি না, নতুন নেতৃত্বও তৈরী হচ্ছে। ছাত্রলীগের পরিক্ষীত সাবেক নেতারা, সিলেটের আওয়ামী লীগের রাজনীতির সামনের কাতারে এসে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু জনমানুষের নেতা এখনও কেউ হয়ে উঠতে পারেন নাই।
সিটি কর্পোরেশনের সামনে নির্মিত এই চত্বর তার নামে হবে সেটি ধারণ করেন না। কামরান নামটি আরো বড় কিছু ধারণ করে। দীর্ঘদিন তিনি পৌর মেয়র, সিটি মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন চাইলে যে কোন প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনার নাম ও নিজের নামে দিতে পারতেন হয়তোবা। কিন্তু যিনি মানুষের অন্তরে স্থান করে নিয়েছিলেন। সেখানে এইসব নাম করণে খুব বেশী কিছু আসে যায় না। সিলেটের আওয়ামী লীগ চাইলে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্নেহধন্য কামরানের নামে সিলেটের বড় কোন প্রতিষ্ঠান স্থাপনা করে দিবেন বলেই আমার বিশ্বাস।
বদর উদ্দীন কামরানের মৃত্যুর পর- (বর্তমান সর্বদলীয় মেয়র শুধু বিএনপির দলীয় মেয়র বলা মনে হয় ঠিক না। যারা ভোট দিয়েছেন, না হলে উনাদের আবার অপমান করা হবে)।
তাঁর কান্না, আবেগ, এবং কামরানের স্মৃতি রক্ষায় তাঁর প্রতিশ্রুতি আমাদের কে আবেগে আপ্লুত করেছিল। সম্প্রতীর রাজনীতির উদাহরণ হিসাবে তাঁকে নানা ভাবে ভুষিত করা হয়েছিল।
কিন্ত ঘটনার একমাস না যেতেই তিনি স্বরূপে আবির্ভূত হলেন। রাতের আঁধারে সিটি কর্পোরেশন সিটি পয়েন্ট চত্বর নামফলক লাগিয়ে সেটি উদ্বোধন করে নিলেন।
আর মৃত কামরান জীবিত কামরানের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠলেন। মেয়রকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে সেই নাম ফলক পাল্টে দিয়ে, তাঁদের প্রিয় নেতা বদর উদ্দীন কামরানের নামে " কামরান চত্বর " প্রতিষ্ঠা করলেন।
রাজপথ কখনো বেঈমানী করেনা। এই কথাটি কামরান ভাইয়ের ক্ষেত্রে শতভাগ সত্য প্রমাণিত হলো। রাজপথের সহযোদ্ধা, অনুসারীরা , প্রিয় কর্মীরা, তাঁদের সীমিত সাধ্যমত ত্যাগ আর ভালবাসার প্রতিদান দেয়ার চেষ্টা করেছে। সিটি কর্পোরেশনের সামনেই অমর করে রাখবে জনতার কামরান কে রাজপথের কামরান কে। রাজনীতিতে এক নতুন পথের সৃষ্টি করেছেন কামরান। মৃত্যু মানেই শেষ নয়।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট