আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

করোনাকালীন বিয়ে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৯-১৭ ২১:১৭:৪১

আলী ফজল মোহাম্মদ কাওছার :: বিয়ে মানবজীবনের অপরিহার্য বিষয়। জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে এই তিনটি বিষয় নিয়ে মানুষের জীবন। প্রায় প্রতিটি ধর্মে বিয়ের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। বিয়ের সংজ্ঞা দিতে হলে বলতে হয়, সামাজিকভাবে আমরা সকলেই বিয়ের সাথে পরিচিত। তারপরও বিভিন্ন ধর্ম কিংবা বিবাহ সংক্রান্ত বিষয়াদি থেকে যে সংজ্ঞা পাই তা সংক্ষেপে বললে অনেকটা এমন যে, বিয়ে হল একটি সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি যার মাধ্যমে দু’জন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়”।

বিয়ের মাধ্যমে বংশবিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি হয়। বিয়ের মাধ্যমে পরস্পর সম্পর্কিত পুরুষকে স্বামী এবং নারীকে স্ত্রী হিসাবে চিহ্নিত করা হয় এবং তাদের জীবনকে “দাম্পত্য জীবন” হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। করোনা পূর্ব বিয়ে নামক সামাজিক প্রথা পালন করতে গিয়ে অনেক অপচয় বেড়ে গিয়েছিল ব্যাপক আকারে। একটি বিয়ে উপলক্ষে বর-কনে পক্ষের লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে যেত। বিয়ের পূর্বে আংটি বদল অনুষ্ঠানের নামে হাজার হাজার টাকা খরচ হয়ে যেত। বিয়ে বাড়ী সাজাতে গিয়ে বাহারী রুচির পরিচয় দিতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ হত। বিয়েতে হলুদ সন্ধ্যা, মেহেদী সন্ধ্যা, ব্যাচেলর পার্টি, ফটোতুলা, ভিডিও রেকডিং, বিয়েতে অভিনয় কিংবা গানের অনুষ্ঠানের নামে খরচ হয়ে যেত অনেক টাকা। যা দিয়ে সম্মিলিত কয়েকটি পরিবারের এক মাসের সংসার খরচ দিব্যি চলে যেত। এই যে এত খরচ করা হত, এতে লাভটা কিত হত? এটি অপচয় নয় কি?

এছাড়া অনেক বর পক্ষের চাহিদা মেটাতে হত কনের বাবাকে। এতে কস্টে নীল হতে হতো কনের বাবাকে। এছাড়া বিয়েতে বরযাত্রী ৩০০-৫০০-১০০০ হওয়ার প্রচলনতো ছিলই।

এই যে এত খরচ বিলাসিতার নামে এত অপচয় যারা সামর্থ্যবান তাদের জন্য কিছুই ছিলনা। গরীব বাবার জন্য যা ছিল বিরাট কস্টের। কন্যাকে বিয়ে দিতে গিয়ে বাবার সারা জীবনের সঞ্চয় শেষ হয়ে যেত নিমিষেই। এছাড়া একজন বরকে অনেক কস্টে যোগাড় করতে হতো তার বিয়ের টাকা। অনেক যুবকের বিয়ের বয়স পেরিয়ে যেত টাকার অভাবে।

একটি বিয়েতে যে এত অপচয়ের ছড়াছড়ি এর থেকে যেন মুক্তির পথ খুজে পাচ্ছিলনা মানুষ। মধ্যবিত্ত, নিম্মবিত্ত পরিবারের অভিভাবকদের মাঝে ছিলো চাপা আর্তনাদ।

বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের সময় অনুষ্ঠিত হওয়া বিয়েগুলি যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল কিভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান করা যায়। করোনাকালীন সময়ে অসংখ্য বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং হচ্ছে। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে এই বিয়ের অনুষ্ঠান করতে গিয়ে এখন আর খরচের ছড়াছড়ি নেই। মাত্র ১০-১৫ জন মানুষের উপস্থিতিতে সম্পন্ন হচ্ছে বিয়ের অনুষ্ঠান। নেই বরযাত্রীর বহর, নেই কমিউনিটি অনুষ্ঠান ভাড়া করে অসংখ্য মানুষের খাওয়া দাওয়া। নেই বিয়ের অনুষ্ঠানের নামে আরো অনেক কিছুর নামে খরচের নামে বিলাসিতা। অনেক কম খরচে একজন পিতা তার মেয়েকে বিয়ে দিতে পারছে। একজন যুবকও বিয়ে করতে পারছে অনেক কম খরচে। এখন অনেকে চিন্তা করতেছেন এই সময় তাদের বিয়ের উপযুক্ত কন্যা-পুত্রকে বিয়ে দেওয়া যায় কিনা। কারণ এই সময় বিয়ের অনুষ্ঠান করলে অনেক খরচ থেকে মুক্তি পাবেন।

আমরা মনেপ্রাণে চাই দুর হোক বৈশ্বিক মহামারী করোনা। আগের মতো হোক এই পৃথিবী। সব কিছু হোক আগের মতো ঠিকঠাক। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সময় বিয়ের অনুষ্ঠানগুলি আমাদের যে শিক্ষা দিল সেই শিক্ষা যেন আমরা কাজে লাগাই। বিয়ের অনুষ্ঠানের নামে বন্ধ হোক অপচয়। দুর হোক মধ্যবিত্ত, নিম্মবিত্ত পরিবারের আর্তনাদ, ফুটে উঠুক হাসি। বিয়ের অনুষ্ঠান গুলি অনুষ্ঠিত হোক করোনাকালীন বিয়ের মতোন এর ফলে কস্টে অভিভাবকদের মুখ নীল হওয়া থেকে মুক্তি পাবে। আমরা যেভাবে লকডাউনে অভিভাবকদের মুখে হাসি দেখেছি এভাবে হাসি দেখতে চাই সবসময়।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী যে বিয়েতে খরচ কম সেই বিয়েতে বরকত বেশি। সেটি বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করি। পারিবারিক জীবন করি শান্তিময়। অভিভাবকদের মুখে ফুটিয়ে তুলি হাসি।

লেখক: চাকুরীজীবি ও কলামিস্ট।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন