আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং
এম.এ রাজ্জাক, তাহিরপুর প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন হাওরে এবার বোরো ক্ষেতে ধান নেই। ফলে কম ফসলের শংকায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
খরা, বৈরি বাতাস, পোকার আক্রমন, সময়মত বৃষ্টি না হওয়ায় বোরো ধানের শীষ নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। কৃষকরা জানান, এবার বোরো ধানের ফলন ভাল হয়েছিল, যা বিগত কয়েক বছরেও এমন ফলন হয়নি। কিন্তু খরা, বৈরী বাতাস আর বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের শীষ নষ্ট হয়ে গেছে। তবুও যে পরিমাণ ধান হয়েছে তাতে কোন রকম বছরের খোরাক হয়ে যেত, কিন্তু ধান কাটার শ্রমিক নিয়ে কৃষকরা এখন পড়েছেন মহা সংকটে। শ্রমিকদের জন প্রতি ৪শ’ টাকা রোজ দিয়েও পাকা ধান গোলায় তুলতে পারছেন না কৃষকরা।
এক দিকে খরা, বৈরী বাতাস, বৃষ্টি আর হাওরের ভিতরের পানি আগেভাগে নেমে যাওয়ায় ধানের শীষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। এ অবস্থায় সরকার যে পরিমাণ ধানের মূল্য নির্ধারণ করেছেন তাতে কৃষকদের খরচের টাকা উঠবে কিনা তাতে আশংকা দেখা দিয়েছে।
মাটিয়ান হাওরে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা শ্রমিক নিয়ে ধান কাটায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। তেমনি কৃষানীরাও ধান শুকিয়ে গোলায় তুলতে কাজ করছেন। গত বছর এ উপজেলার কৃষকরা প্রায় ১২০ কোটি টাকার ধান গোলায় তুলতে পারলেও এ বছর অর্ধ কোটি টাকার ধান গোলায় তোলা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। বৈশাখের শুরু থেকেই মাটিয়ান ও শনিসহ ছোট-বড় ২৩ টি হাওরে বোরো ধান কাটা পুরোদমে শুরু হয়েছে। চলতি মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত হাওরের প্রায় ২১ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, সরকারি হিসেবে উপজেলায় এবার বোরো ধানের চাষ হয়েছে ২৪ হাজার ৫৯৫ হেক্টর জমিতে। এ উপজেলায় কৃষক পরিবারের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৩শ ৯৫ জন।
উপজেলার বড়দল গ্রামের কৃষক আশ্রাফুল ইসলাম, মাটিয়ান গ্রামের ইমাম হোসেন, কাউকান্দি গ্রামের আনিছ মিয়া,বানিয়াগাও গ্রামের সুজন মিয়া জানান, একর প্রতি (৩০ শতকে এক একর) অতীতে যেখানে ১০-১১ মনের বেশী ধান হতো এবার সেখানে কেয়ার প্রতি গড়ে ৪-৫ মন বোরো ধান পাওয়া যাবে। তারা বলেন, অনেকেই ক্ষেতে ধানের আসা বাদ দিয়ে গো খাদ্যের জন্য খড় কেটে আনছেন, যাতে বর্ষা মৌসুমে গরুর জীবন রক্ষা করা যায়।
ধান কাটার বেপারী কাজল, কামাল, উসমান মিয়া বললেন, ৩০ জন শ্রমিক নিয়ে গত ১০ বছর ধরে মাটিয়ান হাওরে ধান কাটেন, এমন অবস্থা হাওরে আগে কখনও তারা দেখেননি। এবার আগের তুলনায় হাওরে ধান খুবই কম হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, উপজেলার বোরো ক্ষেতে ভাল ফলন হলেও বিভিন্ন কারণে শীষে ধান কম হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, হাওরের পানি আগে চলে যাওয়া, তিন মাস খরা থাকা এবং বৃষ্টি সময় মত না হওয়া এ বছর এমনটা হয়েছে। তিনি বলেন, হাওরের চারদিকে এখন ফসল রক্ষা বাধঁ, যার কারণে নদীর পানি হাওরে সময় মত প্রবেশ করতে পারেনা। দ্রুত হাওরে খাল খনন করা প্রয়োজন, না হয় পানির অভাবে বোরো ফসল ব্যাপক ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৮ এপ্রিল ২০১৯/আরাস্বা/পিডি