আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং
শহীদনূর আহদে, সুনামগঞ্জ :: বসন্ত মানেই রক্ত পলাশ, কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে দোলা লাগা। বসন্ত বাতাসে নেশা লাগে, ফাগুলের প্রেমে মাতুওয়ারা মহুয়া বন। চিরাচয়িত সব কাব্যকে পেচনে পেলে ফাগুনের শুরুতে রক্তিম সাজে সেজেছে শিমুল বাগান।
কথায় আছে ফাগুন এলে নাকি ডালে ডালে শিমুলের আগুন জ্বলে। সিলেটের সুনামগঞ্জে গেলে কথাটি আপনাকে বিশ্বাস করতেই হবে! তাহিরপুর উপজেলার জাদুকাটা নদীর পাড়ের মানিগাঁও গ্রাম। সেখানে ১০০ বিঘারও বেশি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত আছে সারি সারি শিমুল গাছ। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা শিমুল গাছের ফাঁক দিয়ে উঁকি দেয় মেঘালয়ের পাহাড়। ওপারে ভারতের মেঘালয় মাঝে জাদুকাটা নদী আর এপারে শিমুল বন- সব মিলিয়ে একজন ভ্রমণ পিপাসুর মন জয় করতে সক্ষম এই জায়গা।
শিমুল গাছের বিস্তীর্ণ বাগান হলেও স্থানীয়রা চেনেন একে তুলা বাগান নামে। কারণ এই বাগান থেকে বিপুল পরিমাণ শিমুল তুলা সংগ্রহ করা হয়। প্রতিদিন এই শিমুল বাগান দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছেন হাজারো মানুষ। রক্তের ন্যায় লাল শিমুল বন দেখে উচ্ছোসিত ভ্রমণ পিপাষুরা। ভালো লাগা মুহুর্তগুলো বন্ধি করছের ক্যামেরার ফ্রেমে।
জানা যায়, প্রায় ১৩ বছর আগে ৩ হাজার শিমুল গাছের চারা রোপণ করেছিলেন স্থানীয় চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন। ধীরে ধীরে যা পরিণত হয়েছে বিশাল শিমুল বাগানে। ভ্রমণপ্রেমীদের প্রিয় জায়গা হিসেবেও এটির কদর বেড়েছে। বসন্ত এলেই এ বাগানে ডালে ডালে আগুন লাগে। শিমুল ফুল ফাগুনের শুরুতেই ফোটা শুরু করে বলেই এই নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখার এখনই উপযুক্ত সময়। কারণ এই সময় রক্তলাল ফুলগুলো আগুনের শিখার মতো ডালে জ্বলজ্বল করে। যেন ফাগুনে আগুন লাগে শিমুল বাগে।
শিমুল বাগানে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন শাহান নামে ভ্রমণ পিপাষু তরুণ।
শিমুল বাগানের সৌন্দের্য্যের বর্ণনা করে বলেন, আমি দেশের অনেক স্থানে ঘুরেছি। এমন সুন্দর বাগান আমি কোথাও দেখিনি পাহাড়ের কুল ঘেঁষা এই বাগানে যেন রক্ত ঝড়ছে।
সাথী আচার্য্য নামে আরেকজন বলেন, “সত্যি বলতে কি শিমুল বাগানে এসে আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আহা আজি এই বসন্তে, এতো ফুল ফোঁটে, এতো বাঁশি বাজে, এতো পাখি গায়’— এই গানের আসল সৌন্দর্য শব্দের আসল অর্থ খুঁজে পেয়েছি।”
শুধু বাগান ঘুরে ক্ষান্ত না হলে আরও আছে বারেকটিলা প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দের্য্যের লীলাভূমি এটি। পাশেই রয়েছে টেকেরঘাট নিলাদ্রি লেক। পাহাড়ঘেরা সীমান্ত এলাকায় নীল জলের লাইম স্টোন লেক এটি। স্থানীয়রা টেকেরঘাট পাথর কোয়ারি নামে চেনে। কারণ এখানে রয়েছে চুনাপাথরের পরিত্যাক্ত খনি। শিমুল বাগান থেকে মোটরসাইকেলে করে ১৫ মিনিটের রাস্তা। চাইলেই লেকের অপরূপ সৌন্দর্যে কিছুসময় ব্যয় করা যায়।
নিলাদ্রি লেকের আশপাশের জায়গাকে বাংলাদেশের কাশ্মীরও বলে থাকেন অনেকে। সাতার জানা থাকলে এই লেকে নৌকা চালিয়ে ঘুরে দেখা যায়।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে বাসে করে সুনামগঞ্জ যেতে হবে। সুনামগঞ্জ শহর থেকে অথবা ঢাকা থেকে যাওয়ার পথে সুনামগঞ্জ নতুন ব্রিজে নামতে হবে। ব্রিজ পার হয়ে ওপারেই আছে বারেকটিলা অথবা লাউগড় বাজার যাওয়ার মোটরসাইকেল। এই মোটরসাইকেলে করেই আপনি চাইলে একসাথে শিমুল বাগান, নিলাদ্রি লেক, বারেক টিলা, জাদুকাটা নদী সব ঘুরে দেখতে পারবেন। আবার চাইলে সিএনজি ও মাইক্রোও যাওয়া যায় তবে সিএনজিতে বা মাইক্রো করে গেলে লাউগড় বাজারেই নামতে হবে। সেখান থেকে জাদুকাটা নদীতে নৌকায় করে পার হয়ে হেঁটে যেতে হবে শিমুল বাগান। তবে শিমুল বাগান ছাড়া অন্যান্য জায়গা ঘুরে দেখতে মোটর সাইকেলের বিকল্প নেই।
জাদুকাটা নদীর ওপারে খাবারের দোকান তেমন নেই বললেই চলে। তাই সাথে শুকনা খাবার রাখা ভালো। খাওয়াদাওয়া করতে চাইলে লাউগড় বাজারে কয়েকটি হোটেল আছে।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০/এসএনএ/এসডি