আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং
দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মোতালেব। গ্রামের দক্ষিণে নদীবিধৌত বালুচরে তার ১০ একর ফসলি জমি। যার কোনো দৃশ্যমান অস্তিত্বই এখন নেই।
খাসিয়ামারা নদীগর্ভে একমাত্র ফসলি জমি হারিয়ে এখন দুঃস্বপ্ন দেখছেন তিনি। সম্প্রতি নতুন করে আবারও নদীভাঙ্গন দেখা দিলে শেষ সম্বল একমাত্র ফসলি জমিটুকু নিয়েও ভরসা করতে পারছেননা ওই প্রান্তিক চাষী।
একই গ্রামের মুদি দোকানি সিরাজ মিয়া। ভয়াবহ নদীভাঙ্গন তার দোকানভিটটিও স্পর্শ করেছে। ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা চালিয়ে আসলেও শেষমেষ নদীপারের ওই দোকানটি অন্যত্র স্থানান্তর করতে বাধ্য হন তিনি। টেংরাটিলা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল করিম। তার বসতবাড়ির অধিকাংশই এখন নদীগর্ভে। বাকিটুকুও টিকবে কি না হতাশায় ভূগছেন তিনি।
অব্যাহত নদীভাঙ্গনে অসহায় হয়ে যাওয়া এই করুন দশা শুধু আলীপুরের আব্দুল মোতালিব, সিরাজ মিয়া, টেংরাটিলার আব্দুল করিমের বেলাতেই নয়।
উপজেলার লক্ষীপুর ও সুরমা ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহমান খাসিয়ামারা নদীটি আলীপুর, টেংরাটিলা, নূরপুর, আজবপুর, টিলাগাঁও, নন্দীগ্রাম, বক্তারপুর, লক্ষীপুর ও পশ্চিম বাংলাবাজারসহ নদী বিধৌত আশপাশের ১০-১২টি গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য এখন অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা যায়, গত তিন বছর আগেও নদী ভাঙ্গন স্বাভাবিক ছিল। গত দুবছর ধরে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে খাসিয়ামারা নদীর বালুমহাল ইজারা দেয়া হয়। ফলে অবাধে বালু উত্তোলন করায় নদীর স্বাভাবিক ভারসাম্য মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হচ্ছে। নদীর দুই পাশের তীরবর্তী জায়গা থেকে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে হেমন্তেও অব্যাহত নদীভাঙ্গন দেখা গেছে। চলতি বছরের বর্ষা শুরু না হতেই যেভাবে নদীভাঙ্গন দেখা দিয়েছে, তাতে পুনরায় বালু উত্তোলন করা হলে আগামিতে নদীবিধৌত বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তাই নদী ভাঙ্গনরোধে খাসিয়ামারা নদীর বালুমহাল ইজারা বন্ধ রাখার দাবি জানিয়ে গত ১৪ মে জেলা প্রশাসক বরাবরে গণস্বাক্ষর সম্বলিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
বৃহত্তর লক্ষীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান মাস্টার ও সুরমা ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মামুনূর রশীদ বলেন, ‘খাসিয়ামারা নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাই আমরা ভাঙ্গনরোধে অবিলম্বে খাসিয়ামারা নদীর বালুমহাল ইজারা বন্ধ রাখার দাবি জানাই।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা জানান, ‘খাসিয়ামারা নদীর বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে। জেলা প্রশাসক মহোদয় বিষয়টি দেখবেন।’
জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ সিলেটভিউকে জানান, ‘তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়টি দেখা হবে।’
সিলেটভিউ২৪ডটকম/৩১ মে ২০২০/টিআই/এসডি