আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং
মাহবুব আলম, ছাতক :: সুনামগঞ্জের ছাতকে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে নৌপথের চাঁদাবাজরা। একাধিকবার সংঘর্ষ, মামলা-গ্রেফতার, প্রশাসনের অভিযান সত্ত্বেও পণ্যবাহী নৌযান থেকে চাঁদা আদায় অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন সমিতির নামে চলছে চাঁদা আদায়। প্রতিদিনই এ নৌপথের ৬-৮টি স্থান থেকে ৪-৫ লাখ টাকার মতো চাঁদাবাজি হচ্ছে পাথর-বালু ও চুনাপাথরবাহী বার্জ-কার্গো ও নৌকা থেকে।
চাঁদাবাজিতে যুবলীগ ও ছাত্রদলের একাধিক নেতাকর্মী জড়িত থাকারও অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের অভিযানে মাঝেমধ্যে স্পট থেকে দুই একজনকে আটক করা হলেও ধরাছোঁয়ার বাহিরেই থেকে যান মূলহোতারা। আটককৃতরা মূলত কমিশনে অথবা বেতনভুক্ত হিসাবে চাঁদা আদায় করেন।
পর্দার আড়ালের রাগব-বোয়ালরা আবার এদের জামিন করানোর জন্য শুরু করেন তদবির। এর মধ্যেই কমিশন দেওয়ার শর্তে নদীতে নতুন চাঁদাবাজ নিয়োগ করেন তারা। ফলে কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না এসব চাঁদাবাজি।
জানা যায়, ছাতক ও কোম্পানীগঞ্জের সুরমা, চেলা এবং পিয়াইন নদী পথে বালু, পাথর, চুনাপাথর ও কয়লা নিতে আসে বাল্কহেড, বার্জ, কার্গো ও ইঞ্জিনচালিত নৌকাসহ শতাধিক বিভিন্ন ধরনের নৌযান। বর্ষা মৌসুমে এ ধরনের যান চলাচল আরও বেড়ে যায়। এসব নৌযান ভোলাগঞ্জ, শাহ আরেফিন টিলা, বিছনাকান্দি ও লোভাছড়া পাথর কোয়ারিসহ বিভিন্ন কোয়ারি থেকে পাথর সংগ্রহ করে।
এ ছাড়া ভারত থেকে চুনাপাথর, বোল্ডার-সিঙ্গেল আমদানি করেও ছাতক নৌ-বন্দর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ডাম্পিং করা হয়। এসব স্থানের ব্যবসায়ীদের নৌযানকে ছাতক ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মধ্যবর্তী নৌপথের ইছাকলস, কালারুকা ইউনিয়নের বোবরাপুর, দিগলবন্দ, চেলা নদীর মুখ, থানাঘাট, চাঁদনীঘাট, পেপারমিল ঘাট, নোয়ারাইঘাট, বারকাপন মুক্তিরগাঁও, বউলার মুখ, জামুরায়সহ কয়েকটি পয়েন্টে এ চাঁদা দিতে হয় নৌযানগুলোকে।
যাদের চাঁদা আদায়ের বৈধতা রয়েছে তারাও অতিরিক্ত চাঁদা আদায় করছেন টোল আদায়ের নামে। প্রতিদিন শ'খানেক ছোট-বড় নৌযানকে ঘাটে ঘাটে এ কারণে গড়ে চার হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হচ্ছে।
জানা গেছে, চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একাধিকবার চাঁদাবাজদের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত বছর ১৪ মে রাতে ছাতক শহরের নদীতে চাঁদাবাজি নিয়ে ফেসবুকের স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে দু'পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এতে গুলি লেগে মারা যান সাহাবুদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। এরপর পুলিশ তৎতপর হলে কিছুদিন বন্ধ থাকে চাঁদাবাজি। পুলিশি তৎপরতা স্তিমিত হয়ে এলে আবার শুরু হয় তা।
চলতি সাপ্তাহেই নৌযান থেকে চাঁদা আদায়কালে অভিযান চালিয়ে কালারুকা ইউনিয়নের দিঘলবন্দ এলাকা থেকে একটি ইঞ্জিন নৌকাসহ চারজনকে আটক করে নৌ- পুলিশ। এরপর ছাতক নৌ- পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৩জনের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় মামলা করেন।
এব্যাপারে নৌ- পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ এসআই সাইফুল ইসলাম জানান, চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশ সর্বদা তৎপর রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া বিগত দিনে উপজেলার প্রায় ২৮টি পয়েন্টে চাঁদাবাজি হতো বর্তমানে ৬-৭টিতে নেমে এসেছে বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে ছাতক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. গোলাম কবির জানান, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে প্রশাসন জিরো টলারেন্সে আছে। সরাসরি জড়িত এবং পর্দার আড়ালের সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হবে।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/৯ জুলাই ২০২০/এমএ/ডিজেএস