আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

হবিগঞ্জে মাছের মেলায় জনস্রোত, এক বাঘাইড় এক লাখ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০১-১৫ ২০:৩৪:৫৭

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :: হবিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পইল মাছের মেলায় একটি বাঘাইড় মাছের দাম হাঁকা হয়েছে এক লাখ টাকা। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে ৩ দিনব্যাপী মাছের মেলা। মেলায় প্রায় ৪০ কেজি ওজনের এ বাঘাইড় মাছটি বাজারে এনেছেন বানিয়াচং উপজেলার বাধাউড়ি গ্রামের বাসিন্দা মাছ ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান।

প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তিতে আয়োজিত এ মেলাটি প্রায় দুইশ’ বছরের অধিক সময় ধরে চলে আসছে। একদিনের জন্য মেলা বসলেও চলবে বুধবার দুপুর পর্যন্ত। পইলসহ আশপাশের গ্রামগুলোর মানুষ এ মেলাটিকে তাদের পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য বলে ধারণ করেন। এ মেলার আয়োজন করে স্থানীয় পইল ইউনিয়ন পরিষদ।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই মাছ মেলায় দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে জনস্রোতও বাড়তে থাকে। বিকেলে মেলায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। শুধু হবিগঞ্জ জেলাই নয়, সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, ব্রাক্ষণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ মেলা দেখতে আসছেন।

মেলায় বোয়াল, বাগাই, বড় আকৃতির আইড়, চিতল, গজার, রুই, কাতলসহ নানা প্রজাতির আকর্ষণীয় মাছ নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। মেলার প্রধান আকর্ষণ মাছ হলেও এতে কৃষি উপকরণ, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, ভোগপণ্য, আখ, শিশুদের খেলনাও ছিল উল্লেখযোগ্য।

মেলায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কয়েকশ’ বিক্রেতা অংশ নিয়েছেন পইল মাছের মেলায়। বড় বড় মাছের সঙ্গে অনেকে দেশীয় নানা প্রজাতির ছোট মাছও নিয়ে এসেছেন। বেচাকেনাও চলে ব্যাপক। প্রত্যেকটি দোকানের সামনে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। মানুষজন মাছের দাম হাকাচ্ছেন, কিনছেন, আবার কেউ কেউ সেলফি তুলতেও ব্যস্ত। শুধু সেলফি তুলেই শেষ নয়। মাছ মেলার ছবি দিয়ে কেউ কেউ আবার ঝড় তুলছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও।

পইল ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মঈনুল হক আরিফ বলেন- ‘এটি আমাদের ঐতিহ্যবাহি একটি মেলা। এ মেলায় দূর দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা মেলা উপভোগ করতে আসেন। মেলায় দেশীয় বিভিন্ন ঐতিহ্য বহন করে।’

মাছ বিক্রেতা আব্দুল হামিদ বলেন- ‘বিভিন্ন নদী ও হাওর থেকে মাছ আসে এখানে। আমি প্রতিবছরই এ মেলায় বিভিন্ন ধরণের ছোট-বড় মাছ মিয়ে আসি।’ তিনি বলেন- ‘মেলাটি জেলার অন্যতম একটি মেলা। তাই এখানে প্রচুর বেচাকেনা হয়।’

তবে দর্শনার্থীদের অভিযোগ ছিল ভিন্ন। অনেকেই মেলা তার নিজস্ব ঐতিহ্য হারিয়েছে বলে দাবি করেন।

মেলা ঘুরতে আসা বানিয়াচং উপজেলা শফিক মিয়া বলেন- ‘কয়েক বছর আগে মেলার যে অবস্থা ছিলো এখন আর নেই। মেলা বিভিন্ন ধরণের বড় বড় মাছ উঠত। কিন্তু এখন আর আগের মতো বড় মাছ উঠে না।’

মেলা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সৈয়দ আহমদুল হক জানান, ‘ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বাগ্মী নেতা বিপিন চন্দ্র পালের জন্মভূমি পইল গ্রামে প্রতিবছর এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই মেলাকে ঘিরে এলাকায় উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।’

তিনি বলেন- ‘মেলায় যাতায়াতের জন্য রাস্তাটি অনুপযুক্ত। বার বার বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করেও এটি বড় করা সম্ভব হচ্ছেনা। এ ব্যাপারে সরকারের তেমন কোন সহযোগিতাও পাওয়া যাচ্ছেনা।’

এদিকে, মেলা পরিদর্শন করেছেন হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবির মুরাদসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

সিলেটভিউ/১৫ জানুয়ারি ২০১৯/কেএস/পিডি

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন