আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

‌ফেস অার তার বুক, সুখের অ-‌শো‌কের সত্য

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৭-১৯ ০২:২২:৪০

মুন‌জের অাহমদ চৌধুরী ::
◼এক ◼

ফেস বা বুক কোনটাই ফেসবু‌কের অা‌ছে; না‌কি নাই। এটা যত তাড়াতা‌ড়ি জানা হয়, তত সময়টা অন্যত্র খর‌চের রাস্তা মে‌লে। সময়টা খুব কম। দ্রুত চ‌লে যা‌চ্ছে। বে‌শিরভাগ কাজই ঠিকঠাক মত করা হয়‌নি কখ‌নো। না সংসার, না উপার্জন কোনটাই। এত সা‌ধের যে লেখা‌লে‌খি, প্যাশ‌নের সাংবা‌দিকতা কোনটাতেই ঠিক নি‌জেকে স‌পে দি‌তে পা‌রি নি। ম‌নে খুব কম মানুষই রা‌খে। ম‌নে রাখবার, মা‌নে রাখাবার ম‌তো লেখাগু‌লি লেখ‌তে দিল না, গান শোনা, ছ‌বি অার জীবন দেখায় সময় খর‌চের অপব্যায়,ভাতঘু‌মের অালস্য অার সুখ,দুঃ‌খের অাসা-যাওয়া জ‌নিত বিড়ম্বনায়।

তবু পর্দার বা পদ্মার ঐ পা‌রে ‌ভিন্ন গল্প ব‌লে জীবন। যেখা‌নে বে‌চেঁ থাকাটা অান‌ন্দের, ইচ্ছা ও কিছুটা সেচ্ছাচা‌রিতারও ছিল। কিন্তু কখ‌নো সে জীবন স্বার্থপরতার ছিল না। নি‌জের জন্য ভা‌বি‌নি কখ‌নো, নি‌জের জন্য ক‌রি‌নিও কিছু। কিছু দু‌রের মানু‌ষের একান্ত কা‌ছের,উ‌দোম কিছু ভালবাসা অামা‌কে ভালবাসা পাবার স্বাদ কেমন, সেটা শি‌খি‌য়ে‌ছে। যাদের জন্য কখ‌নো কিচ্ছু ক‌রি নি, করা হ‌বে না, এ জীব‌নে- দুঃসম‌য়ে তারা প্রিয়জ‌নের মমতা দি‌য়ে‌ছেন। প্র‌তি‌দিন নতুন ক‌রে জীব‌নের প্রে‌মে পড়বার প্রেরন‌া অাস‌লে জীবনই অামা‌কে জু‌গি‌য়ে যা‌চ্ছে।

তাই জীবনটা সহজ ছিল, পড়া যে‌তো দূ‌রে থে‌কেও। অাসলে খুব গু‌ছি‌য়ে কখ‌নো ভা‌বি না, জীবনটাও সঙ্গত কার‌নে অ‌গোছা‌লো, ত‌বে এলো‌মে‌লো না। জীবন‌কে এখন পর্যন্ত অাত্মার কোন সাধ বা একান্ত ইচ্ছা অপুর্ন রাখ‌তে দেই‌নি।অার এ না দেওয়া‌তেই নি‌হিত- জীব‌নের য‌াবতীয় অর্জন- বিসর্জ‌নের টা‌লি খাতা। জানা ম‌তো, অ‌ন্যের বাকীর খাতায় নি‌জের নাম‌টি নেই। ‌নি‌জের খাতায় নামগু‌লি থাকুক। সারাজীবন প্রশা‌ন্তি নি‌য়ে বাচঁ‌তে চে‌য়ে‌ছি।


◼ দুই ◼
নি‌জে থে‌মে যাবার সময় মে‌লে না কা‌রো। 'সময়' র সময় শেষ হ‌লেই যে‌তে হয়। প্রশা‌ন্তিময়, কাউ‌কে ঝা‌মেলায় না ফে‌লে চ‌লে যাওয়াটা য‌দি পেতাম...। জা‌নি না পা‌বো কি না, অা‌মি খালি অামার ক‌য়েকজ‌নের কাছ থে‌কে এখানকার দু‌নিয়ায় শেষবা‌রের ম‌তো বিদায়টা নি‌তে যেতে চাই।

জে‌নে গে‌ছি সবসময়, মানু‌ষের চে‌য়ে কোন সম্প‌র্কেই অামার কা‌ছে সম্প‌র্কের নামটা ব‌ড়ো হয়‌নি। কখ‌নো মু‌খো‌শের অাড়া‌লে নি‌জে‌কে ঢাক‌তে হয়‌নি। অানন্দময়ী, জন‌মে উচ্ছাস দি‌য়ে‌ছি‌লে, সহজাত। সেটা থা‌কে। থাকায়,কাজ দেয় খরায়, ঠেকায়।

◼ তিন◼
ত‌বে সত্যটা ব‌লি। যে‌তে চাই‌ছি, পাহা‌ড়ে, অথচ যা‌চ্ছি সমু‌দ্রে- এরকম জীবন কখ‌নো কাটাই‌নি। চুমুর অ‌পেক্ষায় গি‌য়ে ঝা‌ড়ি খাওয়ার পথটুকু পে‌রোয় নি যে, কখ‌নে‌া; তার অন্তত পেছ‌নে তাকা‌লে চ‌লে না। জীব‌নের গা‌ড়িটার যে ব্যাক গিয়ার নেই, পেছ‌নে ফিরবার পথ নেই।

জীবনটা অাস‌লে চলন্ত ট্রেন। কত যে মুখ সেখা‌নে প্র‌তি‌দিন। অন্য কামরার যাত্রীরাও কথা বল‌তে অাসে। কত যাত্রী নে‌মে যায় প‌রের ষ্টেশনে। অাবার কেউ ও‌ঠে। যাত্রী‌দের নামা ওঠার হি‌সেব কি ষ্ট্রেশনগু‌লি ঠিকঠাক রাখ‌তে পা‌রে?

বিশ্বময় রাজনী‌তির নী‌তিহীনতা কতখা‌নি নী‌তিহীনতায় যে নিম‌জ্জিত, তার জ্বলজ্ব‌লে দৃষ্টান্ত মা‌র্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রা‌ম্পেড় ভাঁড়া‌মি দেখ‌তে দেখ‌তে ম‌নে প‌ড়ে। রাজনী‌তির নামে নী‌তিহীনতা অামার এটুকু জীবনে কখ‌নে‌া জানাম‌তে ক‌রি‌নি, এটাই অাত্মার প্রশা‌ন্তির জায়গা।

এক‌ দুটি ছাড়া পৃ‌থিবীর প্রায় সম্পর্কই বি‌নিময়যুক্ত। জীবন অামা‌কে শি‌খি‌য়ে‌ছে, ভালবাসা‌তেও অংক থা‌কে, বে‌শিরভাগ ক্ষে‌ত্রে। ভদ্র‌লো‌কের সুশীল নামধা‌রি সি‌ভি‌লের এ‌টি‌কেট, অার চাছা-ছোলায় ক্রি‌মিনা‌লের রা‌জ্যে, সাধারন জীবনগু‌লো‌তে না স্বীকার করা, অং‌কের সমীকরন।

জা‌নি,আনন্দের তুলনা হয়, দুঃখের তুলনা হয় না কখনো। অামার প্রেরনা দেবারও সেভা‌বে একান্ত কোন জন নেই। কখ‌নো ছিল না সেভা‌বে। তবু সমুদ্র সৈক‌তে কখ‌নো ঝিনুক বা মুক্ত কোনটাই খু‌জিঁ নি। চিং‌ড়ি মা‌ছের শুট‌কি খে‌য়ে মাটন বি‌রিয়া‌নির ঢেকুর তুলবার যে অামা‌দের স্বভা‌বের অদ্ভুত বৈপরীত্য; সেটা সয‌ত্নে এ‌ড়ি‌য়ে চ‌লে‌ছি। না, বরং চেষ্টা ক‌রে‌ছি বলাটাই বেশি স‌ত্যি।

তবু, ষড়‌রিপুর তাড়নার তাড়া থা‌কে,অপচ‌য়ের ফর্দ বা‌ড়ে। সেটা জীব‌নের অ‌মোঘ, নি‌রেট বাস্তবতা।

ত‌বে অাপদকালীন বির‌তিগু‌লি না পেলে না হত জীবন দেখা, না হত টুকটাক লেখা‌লে‌খির অবকাশ মিলত না। সাংবা‌দিকতার চাকুরীর অাইন লেখা‌লে‌খির অবাধ ছাপাছা‌পি সী‌মিত ক‌রে‌ছে। তারও অা‌গে বা প‌রে কখ‌নে‌া, ‌কতজন পড়ল বা না পড়বে,কখ‌নো তা ভা‌বি‌নি। নি‌জের ধারায় নি‌জের স্বাতন্ত্রতা নি‌য়ে কিছুদূর, মৌ‌লিক দুর‌ত্বের গন্ত‌ব্যে লি‌খে গেছি, যা‌চ্ছি।

অতপরও লি‌খে চ‌লি প্রে‌মের গল্প। ‌লিখ‌তে হয় বেদনার দিনও, সত্যটুকু অন্তত কাউ‌কে ব‌লে যাবার অ‌ভিপ্রা‌য়ে, চাওয়া থে‌কে বলে যাই।

সত্যটুকুন য‌দি লিখ‌তে হয়, জীবন অামা‌কে অসংখ্যবা‌রের ম‌তো দি‌য়ে‌ছে- নিজে‌কে মুহু‌র্তের জন্য হ‌লেও পৃ‌থিবীর সব থে‌কে সুখী মানুষ ভাববার অনুভূ‌তি। শ্রেষ্ঠ প্রেম‌কে জিতবার, পু‌ত্রের পিতা হবার অার; শ্রেষ্ঠতম সুখ‌ানুভু‌তিটি বারবার অনূভব করবার, বারবার। অাল্লাহ, সব তোমারই কর‌ুনাধারা। তু‌মি এত এত ক‌রে দি‌য়েছ, কে‌ড়েছ অ‌নেক কম।


◼ চার ◼
অা‌মি একটু সখ‌ভোলা স্বভা‌বের মানুষ। গড়পড়তার চে‌য়ে সামান্য বে‌শিই খেয়া‌লি। লেখা‌লে‌খির পাশাপা‌শি নি‌জে‌কেও উ‌ল্টে-পা‌ল্টে দেখ‌তে ভালবা‌সি। জীব‌নের ভেতর-বা‌হির দুটো দিকই। ‌ধৈর্যচ্যুুতির কষ্ট স্বীকা‌র ক‌রি‌য়েও বরং অাজ‌কের কথাই ব‌লি।

বি‌কেল‌বেলা সকাল হবার পর বহু‌দিন পর সেভ কর‌বার সাহসী অ‌ভিপ্রায় নি‌য়ে বিছানা ছে‌ড়ে নামলাম। সব হল। পার‌ফেক্ট। শুধু গোঁফটা বাদ প‌ড়ে‌ছিল। ফলাফল, ক‌য়েক ঘন্টার ম‌ধ্যেই দু‌দি‌কের বিভক্ত রায়। একপ‌ক্ষের দ্রুত গোঁফের বনাঞ্চল ঝে‌টি‌য়ে ফেলবার। অা‌রেকদি‌কের গো‌ফের বারান্দা বড় করবার, বহালও রাখবারও।

এবং এর ফলত, অা‌মি অাস‌লে নি‌জের স্বাধীনতাটা বহাল রাখবার পথটা পাই। কারন, অাপাতত অা‌মা‌কে কোন‌টিই কর‌তে হ‌চ্ছে না। অার অা‌মি জা‌নি এখন যেটা ফেল‌তে পারব না, সপ্তাহখা‌নিক পর সেটা নি‌জেরও দেখ‌তে অার ভাল লাগ‌বে না। এই যে স্বাধীনতাটা নি‌জের ক‌র্মে কৌশ‌লে, কূশ‌লে অার ভা‌গ্যের ফে‌রে টি‌কি‌য়ে রাখবার অপার অানন্দ; সেইটাই জীবন।

বেলা বাড়‌ছে। নি‌জের বয়‌সেরও।প্রবাসী তো..., তাই ঘরে ফেরা হ‌বে না। কারন প্রবাসী‌দের বে‌শিরভাগ বাড়ীই থা‌কে। ঘর থা‌কে, অ‌নে‌কের, অ‌নে‌কের না। অামার নি‌জেরও ঘ‌রে ফির‌তে হ‌বে। সন্ধ্যা নামার অা‌গেই প্রথম প্রে‌মের কা‌ছে, প্রা‌পিকার ঠিক‌ানায় পৌছেঁ দি‌তে হ‌বে স‌ত্য অার বাস্তবতার ক‌ষ্টিপাথ‌রে পরখ করা ইর্ষনীয় জীব‌নের গল্প‌টি।

জন্ম‌দিন ম‌নে ক‌রি‌য়ে দি‌তে এসেছে জীবন থে‌কে অা‌রেকটা বছর গে‌লো। ব‌ত্রি‌শের বারান্দার সি‌ড়ি‌তে দা‌ড়ি‌য়ে ব‌লি, মোটামু‌টি তৃপ্ত, তার চে‌য়েও বে‌শি প্রশা‌ন্তিময় এখ‌নো জীবন।

অা‌রো ক‌য়েকটা বছর বাচঁ‌তে চাই। পুত্রধ‌নের ‌‌কৈশো‌রের চো‌খে- নি‌জের কে‌ান কোন বাদরা‌মিঁ, বদমা‌য়ে‌শি অার ভালবাসাবা‌সি খেলা ক‌রে, শ‌ুধু গল্পগু‌লি চো‌খের তারায় প‌ড়ে যে‌তে চাই।

না প‌ড়ে, চ‌লে গে‌লে দুঃখ থে‌কে যা‌বে, পুত্রধন তার প্রথম লেখা, ছ‌বি অাঁকা, প্রথম গানটা কা‌কে শু‌নিয়ে বে‌শি প্রশা‌ন্তি পায়। তার বাবার কৈশোরের দূ‌রের বাবা‌কে, না‌কি তার কা‌ছের ‌নি‌জের বাবাটা‌কে।

শেষবধি ফা‌কিঁঝ‌ু‌কি শে‌ষে অধ্যাবসায়,পত‌নের পি‌ঠে পাওয়া উত্থা‌নের তৃ‌প্তি নি‌য়ে বে‌চেঁ থাকাটা। তৃ‌প্ত চো‌খে ফেসবু‌কের দেওয়া‌লে অাপনা‌কে শব্দের এবং স‌ত্যের অক্ষ‌রে লেখা লেখা‌টির শেষ পর্যন্ত পড়‌তে টান‌তে যে পারা, সেই মায়‌াজা‌লে থা‌কে মহাজাগ‌তিক ই‌ন্দ্রিয়সুখ।


ধন্য অানন্দময়ী, দিনগু‌লি অাস‌লেই অান‌ন্দের। অাপনা‌কে শুধু জীবন থে‌কে সু‌খের অক্ষরগু‌লি প‌ড়ে, বু‌ঝে অার শু‌ষে নি‌তে হ‌বে। যাপ‌নের ভাঁজ খু‌লে পড়‌তে হ‌বে সুন্দর। উদযাপন কর‌তে হ‌বে জীবনটা‌কে।

জীব‌নের ফেস ও বুক দু‌টো‌কেই। একূল অার ঐ কূল একসা‌থে য‌দিও একসা‌থে অা‌সে না। কিন্তু, শেষব‌ধি করুনাময় অা‌লোর জানালা খোলাই রা‌খেন।

লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন