আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

শিক্ষার ভিন্ন আঙ্গিক

মো. জসীম উদ্দিন

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১০-০৬ ১৩:১২:৪৪

মো. জসীম উদ্দিন:: শিক্ষার শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত। হাদীসে আছে, দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত ইলম্ অন্বেষণ কর। আমরা একে অপরের কাছ থেকে, পরিবেশ থেকে, সমাজ থেকে প্রতিনিয়ত শিখছি। আমরা পাঠ্য পুস্তকের শিক্ষা, অর্থাৎ প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, উচ্চ শিক্ষা (ইউনিভার্সিটি) ইত্যাদি নিয়ে প্রতিনিয়ত বুলি আওড়াই। আমার সন্তান সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী হলে আমরা হাপ ছাড়ি।

একবারও কি আমরা গভীরভাবে ভেবেছি, এর বাইরেও কিছু রয়েছে। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই উচ্চস্বরে কাঁদতে থাকে এটাও আমরা শিখেছি। সেই সন্তান আস্তে আস্তে বেড়ে উঠে, সে চারদিক অবলোকন করে শিক্ষায় গোড়াপত্তন করে। সে কথা বলতে শিখে, হামাগুড়ি দেয়, হাঁটতে শিখে, ধরতে শিখে, বারবার আছাড় খায়-এটাও শিক্ষা। সন্তানের পরিপূর্ণ বিকাশে মা-বাবা তটস্ত থাকি। তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হাতে খড়ি অ-আ আমরা বাবা-মাই শিখাই। তারপর শুরু হয় চাপিয়ে দেয়া- পড়, পড়, পড়। বই নিয়ে স্কুলে যাও, বাসায় পড়, কোচিং কর, হোম ওয়ার্ক কর...... পড়, পড়, পড়। তোমাকে প্রথম হতে হবে-তার ভাবনায় এমনভাবে ঢুকিয়ে দেয়া হয় যেন না হলে নিস্তার নেই।
   
অভিভাবকদের বলি, সন্তানকে হাসি-আনন্দে বেড়ে উঠতে দিন এর মাঝেই সে শিখবে। আরও শুনুন ক্লাসে প্রথম কিন্তু একজনই হয়। প্রতিযোগিতার যুগে প্রতি বিষয়ে লেটার মার্ক (এ প্লাস) পেয়েও সে কিন্তু প্রথম নাও হতে পারে, এটি দোষের কিছু নয়। পড়াশুনা (পাঠ্যপুস্তকের পড়াশুনার কথা বলছি) জীবনের অন্যতম অংশমাত্র। এর বাইরেও জীবনে সত্যিকারের মানুষ হতে হলে পরিপূর্ণতায় সর্বোচ্চ মার্ক পেতে তাকে (সন্তানকে) স্বাধীনতা দিন, শুধু লক্ষ্য রাখুন তার যেন নেতিবাচক বিচ্যুতি না হয়। আর হলেও কী, এটাও জীবনের অংশ, শিক্ষার অংশ। ভুল থেকে সঠিকে আসা বরং পোক্ত শিক্ষা।

পাঠ্যপুস্তক সেতো আছেই, নির্দিষ্ট সময় মনের আনন্দে পড়বে। এর বাইরে তাকে জ্ঞানের সাগরে বিচরণ করতে দিন পুকুরে আবদ্ধ করে রাখবেন না প্লীজ। সে ইচ্ছেমত পড়বে (পাঠ্যপুস্তক), তাকে দৌড়াতে দিন, খেলতে দিন, পানিতে ঝাপ দিতে দিন, বৃষ্টিতে ভিজতে দিন, বেড়াতে নিয়ে যান, থিয়েটারে নিয়ে যান, গল্প করুন-করতে দিন, আঁকিবুকি করুক, গান করুক, ঘর বানাক, পুতুল খেলুক, মাছ ধরুক, হাসুক, কাঁদুক যা ইচ্ছে তা করুক না। বেড়ে উঠুক না প্রকৃতির সাথে, নিয়ম সে তো আছেই-থাকবেও এ জালের বাইরে বিচরণ করতে দিন। সে সুস্থ সবলভাবে বেড়ে উঠবে, শিক্ষিত মানুষ হবে, ভদ্রতা, নৈতিকতা, মানবিকতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, সে এভাবেই পরিপূর্ণ মানুষ হবে। তাতে সুখ পাবেন অনেক সুখ। আরেকটি কথা শুনুন ডাক্তার, ম্যাজিস্ট্রেট, ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ হতে হবে বলবেন না-সবার এক জায়গায় আকর্ষণ থাকেনা। তার ভাল লাগা, তার আগ্রহ, পারদর্শিতায় তার ইচ্ছেমত সে ভাল ক্রিকেটার, সাহিত্যিক হোক না তাতে ক্ষতি কী? শেষ কথা বিদ্যালয়ে পাঠাবেন, শিক্ষকগণ পড়াবেন, শেখাবেন-শিক্ষাগুরু তার। ছেড়ে দিননা শিক্ষাগুরুর উপর। ওই সময়সহ শিক্ষকরা ভাল পড়াবেন, ভাল পরামর্শ দিবেন, প্রয়োজনে শাসন করবেন (রীতিসিদ্ধভাবে) তাতে শিক্ষকের উপর চড়াও হবেন না, আপনার সন্তান ভাল করবেনা। মনে করবেন তার ধারনায় ঢুকিয়ে দিলেন শিক্ষাগুরু সঠিক নয়। অথচ তাঁর কাছে শিখছে- সে মানসিক দ্বন্দ্বে পড়বে।

শিক্ষকের প্রতি প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের চিঠির অনুবাদ (অংশ) দিয়ে শেষ করলাম-

-আমার পুত্রকে জ্ঞানার্জনের জন্য আপনার কাছে প্রেরণ করলাম। তাকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন- এটাই আপনার কাছে আমার প্রত্যাশা।

-আমার পুত্রকে অবশ্যই শিখাবেন-সব মানুষই ন্যায়পরায়ন নয়, সব মানুষই সত্যনিষ্ঠ নয়।

-আমার পুত্রকে শেখাবেন, বিদ্যালয়ে নকল করে পাশ করার চেয়ে অকৃতকার্য হওয়া অনেক বেশি সম্মানজনক।

-আমার পুত্রের প্রতি সদয় আচরণ করবেন কিন্তু সোহাগ করবেন না। কেননা আগুনে পুড়েই ইস্পাত খাঁটি হয়। সম্মানিত শিক্ষকদের এরকম চিঠি লিখুন। আর সন্তানদের বিকশিত হওয়ার বহুমাত্রিক সুযোগ দিন।

লেখক: উপজেলা নির্বাহী অফিসার,বাহুবল, হবিগঞ্জ
(শিক্ষায় বিশেষ অবদান রাখায় হবিগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ট ইউএনও)

বি:দ্র: লেখায় প্রকাশিত মতামত একান্তই লেখকের নিজস্ব। এটির সাথে সিলেটভিউ২৪ডটকমের কোন সম্পর্ক বা দায় নেই।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন