আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

মাশরাফির নির্বাচন নাকি মতের বিভাজন?

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১১-১২ ২১:৫৬:০৬

দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা মতের পার্থক্য হওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু সব জিনিসে আপনি তার দোহাই দিয়ে কখনোই পার পাবেন না। ফান্ডামেন্টাল বিষয়ে অবশ্যই আপনার নীতি-নৈতিকতা এক এবং সঠিক থাকতে হবে। যেমন বাংলাদেশের স্থপতি এবং স্বাধীনতার ঘোষক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই নিয়ে কোনো সংশয় থাকা চলেনা। যারা এর মাঝেও রাজনীতি খুঁজেন বা করেন এরা হচ্ছে সুবিধাপন্থী। কারণ তারা দেশের অস্তিত্বে বিশ্বাসী না।

আপনি পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সাবেক ক্রিকেটার ইমরানের খানের রাজনীতিতে উত্থান ও জয়ে মোহিত, কিন্তু নিজ দেশের সফল অধিনায়ক ক্লিন ইমেজ মাশরাফির রাজনীতিতে অন্তর্ভূক্তি আপনার হজম হয় না। তাতেও চুলকানি!

এই চুলকানির যুক্তি মাশরাফি অবসর নিক, তারপর রাজনীতি করুক, সে ওয়ার্ল্ড কাপে মনোনিবেশ করুক, তার খেলায় প্রভাব পড়বে কিংবা মাশরাফি নতুন দল খুলে সেখানে নেতৃত্ব দিক সেখানে আমরা হুমড়ি খেয়ে পড়বো? এই ধরনের কথা যারা বলে তারা হচ্ছে আসল ধান্দাবাজ। এরা এই একই মেকানিজমে ১৯৭৫ পরবর্তী জিয়ার নেতৃত্বে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তনের নামে এই স্বাধীনদেশে স্বাধীনতার বিরোধী যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতকে রাজনীতিতে ফের আমদানি করেছে। তাদের এই যুক্তিতেই তাদের কর্তিত লেঞ্জা বের হয়ে যায়, মূলত মাশরাফি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মত প্রাচীন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দলের হয়ে নির্বাচন করার ইচ্ছা পোষণ করায় এদের পশ্চাৎ দেশে অগ্নির সূত্রাপাত!

যদিও শ্রীলংকান কিংবদন্তী সাবেক ক্রিকেটার সনাৎ জয়সুরিয়া তার চলমান খেলার দিনগুলিতেও সক্রিয় রাজনীতিবিদ ছিলেন। ২০১০ সালে মাতারা জেলার প্রার্থী হিসেবে তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। জয়সুরিয়া মাহিন্দা রাজাপাকসা নেতৃত্বে ইউপিএফএ সরকারের উপমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া বর্তমানে রাজনীতি করেন এমন সাবেক ক্রিকেটারও কম না, ক্রিকেট ঈশ্বর খ্যাত ভারতের ক্রিকেট লিজেন্ড লিটল মাস্টার শচীন টেন্ডুলকার আর শ্রীলংকান আরেক কিংবদন্তী বিশ্বকাপ জয়ী অর্জুনা রানাতুঙ্গা অন্যতম।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের হয়ে মাশরাফির রাজনীতিতে আসায় তার ভক্তকূল পশ্চাৎদেশের মত ইতিমধ্যে ভাগ হয়ে গেছে তবে এটা নিয়ে এতোটা চিন্তার কিছু নেই। এরা হচ্ছে সেই জনগণ যারা দেশে বসে পাকিস্তানের স্তুতি গায়, এরা সেই লোক যারা ১৯৭১ এ পাকিস্তানের দালালি করে বিশ্বাস করেছিল এই দেশ কখনো স্বাধীন হবেনা, এরাই ভিন্ন মোড়কে ফেসবুকের সেইসব কু-ইউজার যারা ভাবে বাংলাদেশ কখনো উন্নতি করবেনা। এরাই উন্নয়নের ফিরিস্তি নেয় আর অন্যদেশের গোলামি করে। এরা বাংলাদেশের উন্নতি মানতে নারাজ, এই দেশের উন্নয়নে এদের পিত্ত পুড়ে যায়।

ক্রিকেট ইতিহাসে একসাথে রাজনীতি ও ক্রিকেট খেলার নজির যেহেতু আছে তাহলে মাশরাফির বেলায় বাঙালির বিভাজন কেন? মাশরাফি কেন একসাথে রাজনীতি ও ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যেতে পারবেন না? যদিও মাশরাফি আন্তর্জাতিক অঙ্গণে এখন শুধু ওডিআই খেলেন এবং বিশ্বকাপ পরবর্তী তিনি আর খেলবেন কিনা সেটা নিয়েও যথেষ্ট সংশয় আছে। আর যেহেতু ক্রিকেট-ই আমাদের একমাত্র উপলক্ষ্য যেখানে সব বিভাজনের বিসর্জন ঘটে, সেহেতু মাশরাফির রাজনীতিতে আগমণ আগামীদিনের নানা বিভাজনের সমাপ্তির ডাক দিচ্ছে বলে মনে হয়।

উপমহাদেশের রাজনীতি এবং আমেরিকান ও ইউরোপীয় রাজনীতির মূল তফাতটাই হচ্ছে গুনগত রাজনীতির পার্থক্য। আমাদের দেশের উন্নয়নে তরুণ ও ডায়নামিক নেতৃত্বের প্রয়োজন। রাজনীতিতে ভালো মানুষের পরিবর্তে শুধু ব্যবসায়ীরা আসলে দেশের উন্নতি কখনোই সম্ভব না। বরং ব্যক্তি ও দলের স্বার্থের উর্ধ্বে গিয়ে আমাদের যোগ্য প্রার্থী বাছাই এবং নির্বাচিত করাটাই সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি।

-প্রকৌশলী ফেরদৌস আব্বাস চৌধুরী

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন