আজ মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ইং

আম-কাঠালী প্রথা বন্ধ হোক

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০৫-১৭ ১৭:২১:০৪

আলী ফজল মোহাম্মদ কাওছার :: আমাদের সমাজে যুগ যুগ ধরে চলে আসা আরেকটি প্রথা হচ্ছে আম-কাঠালী। গ্রীষ্মকালে (বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে) মেয়েদের শশুড়বাড়ীতে বিভিন্ন ফল পাঠানোকে আম-কাঠালী বলা হয়ে থাকে। এখন জৈষ্ঠ্যমাস আম, কাঠাল পাকার সময়। বছরের এই সময় আম-কাঠালী দেওয়া হবে কিংবা হচ্ছে। এই প্রথাটি ইফতারি প্রথা থেকে কোন অংশ কম নয়। গাড়ী ভরে প্রতিযোগিতা করে আম, জাম, কাঠাল, আনারস, লিচু, সহ নানান রকম ফল, এছাড়া মিষ্টান্ন জিনিস নেওয়া লাগে।

অনেক জায়গায় বর পক্ষের চাহিদা থাকে এতটি কাঠাল, এত কেজি আম, সহ ফল-ফলাদির পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। বলা হয় আমাদের আত্নীয় স্বজন বেশি, পাড়া মহল্লায় মানুষ বেশি তাদের নিয়ে খেতে হবে, না খেলে মুখ থাকবেনা। তাদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে মেয়ের বাবাকে হিমশিম খেতে হয়। আর্থিকভাবে স্বচ্ছল বাবার হয়তো চাহিদা মেটাতে কোন সমস্যা হয়না। কিন্তু গরীব বাবার জন্য এটি একটি বোঝা কিংবা কষ্টের কারণ। মেয়ের বাড়িতে আম-কাঠালী দিতে গিয়ে গরীব বাবার মানুষের কাছে হাত পাততে হয়। অনেকে ঋণ করে টাকা এনে মেয়ের শশুড়বাড়ীর চাহিদা মেটান, পরে সারা বছর সুদের ঘানি টানেন। ইফতারি, আম-কাঠালী নামক প্রথা গুলো যেন আমাদের সমাজে মারাত্মক ব্যাধি আকার ধারণ করেছে।

অনেক বলে থাকে আমরা আমাদের মেয়ে- বোনদের বাড়িতে ইফতারি আম-কাঠালী দিয়ে শান্তি পাই। আপনার সামর্থ্য আছে তাই দিতে পারছেন। কিন্তু আপনার এই দেওয়ার জন্য অন্য উপর বোঝা হয়ে যাচ্ছে কিনা সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরী নয়কি? আপনি নিজের শান্তি পাওয়ার জন্য অন্যের উপর বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছেন, তার যে কষ্ট হচ্ছে এর দ্বায়ভার কে নেবে?
জনৈক নামক প্রকাশে অনিচ্ছুক মৌলভীবাজারের একজন আমাকে বললেন তিনি তার বোনের বাড়িতে ঋণ করে ৩০হাজার টাকা দিয়ে আম-কাঠালী দিয়েছেন। আরেক বোনের বাড়িতে ঋণ করে ১০হাজার টাকা দিয়ে আম-কাঠালী দিয়েছেন। এর থেকে কি বুঝা যায়?

সামাজিক কিছু প্রথা কিছু মানুষকে অমানুষে পরিণত করছে। যার জন্য অনেককে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হচ্ছে। কেউবা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।

এই প্রথা থেকে মুক্তির উপায় কি?
আলিম-জাহিল, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবার উপর জেঁকে বসা এই কঠিন সামাজিক অনাচার বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে৷ সর্বত্র সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে৷ আজও মেয়ে জন্ম নিলে এক শ্রেণীর পিতা-মাতার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায় এসব কারণেই৷

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষিত সৌভাগ্যের বার্তাবাহী মেয়ে জাতিকে অন্ধকার যুগের অভিশাপের লিস্ট থেকে নিষ্কৃতি দিতে সকলেরই এগিয়ে আসা উচিত৷

লেখক: চাকুরীজীবি, সিলেট।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন