আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়ে মরতে চান তাইবুর রহমান

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০১-০৮ ১৯:৫৭:২৭

শহীদ নূর আহমেদ, সুনামগঞ্জ :: মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাঙ্গালী জাতীয় জীবনে একটি চেতনা ও অর্জনের নাম। স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা জীবন বাজি রেখে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদেরকে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বলে আখ্যায়িত করা হয়। যা মুক্তিযোদ্ধাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের এই বীরত্বগাঁথা সংগ্রামে ইতিহাস যেমন জাতিকে গর্বিত করে তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বঞ্চনা আর যথাযত সম্মান না পাওয়ার বিষয়টি ব্যাতিত করে।

স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও পত্রিকার পাতায় শিরোনাম হতে শুনা যায় ৯ মাস যুদ্ধ করেও স্বীকৃতি না পাওয়ার আক্ষেপ। সুযোগ সন্ধানি কিছু স্বার্থপর মানুষ যুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অর্šÍভূক্তি হয়েছেন। তাই ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার হালনাগাদ হলেও মামু, দোলাভাই, তদবীর না থাকায় তালিকায় আসেনা না অনেক সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধার নাম। অবহেলা অযতনে পরে থাকে সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধার গল্প।

তেমনি ৭১’র এক সম্মুখ যোদ্ধা তাইবুর রহমান। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পূর্ববীরগাও ইউনিয়নের বীরগাঁও গ্রামে। তাইবুর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধে ৫ নম্বর সেক্টরের অধীনে ক্যাপ্টেন হেলাল সেলা সাবসেক্টরের কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার খুরশেদ আলমের অধীন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তাইবুর রহমান কর্ণেল এম এ জি ওসমানির সাক্ষরিত সনদপত্র লাভ করেন।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ পূর্ববীরগাঁও ইউনিয়নের তালিকায় নাম উঠে আসে তাঁর। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধা বাচাইয়ে সাক্ষাতকার না দেয়ায় তাইবুর রহমানের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়। দীর্ঘদিন যাবৎ অনেক চেষ্টা তদবীর করার পরও মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকায় তাঁর নাম লিপিবদ্ধ হয়নি । নাম অর্ন্তভুক্তি না হওয়ায় তাইবুর রহমান বঞ্চিত রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে। প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েও তালিকায় নাম না থাকায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিতে পারছেন না তিনি। গায়ের মানুষ মুক্তিযোদ্ধা বলে ডাকলেও কাগজে কলমে তাঁর নাম নেই। ৭৩ বছর বয়সি তাইবুর রহমান এখন ভোগছেন মরণব্যাধী রোগে। মৃত্যুর আগে পেতে চান মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। এই আকাঙক্ষায় দিন গুনছেন মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় না পাওয়া তাইবুর রহমান।

তাইবুর রহামানের সাথে আলাপকালে জানা যায়, ১৯৭১ সাল যখন মুক্তিযোদ্ধের দামামা বাজে তখন পাক হানাদারদের দখলে দেশের প্রতিটি অঞ্চল। চলছে ইতিহাসের সবচেয়ে করুণ হত্যাযজ্ঞের হুলি খেলা। দেশ মাতৃকার টানে স্বজনদের অগোচরে পাক সৈন্যদের প্রতিহত করতে ভারতের শরণার্থী শিবিরে ছুটেছেন অৎ¯্র অল্প বয়সী তরুণেরা। তেমনি ২২ জন তরুণের দলে ৭১’র আগস্টে যোগ দিয়েছিলো দক্ষিণ সুনামগঞ্জ পূর্ববীরগাঁও ইউনিয়নের একটি দল। তাদের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন ২২ বছর বয়সী তরুণ তাইবুর রহমান। তিনি বীরগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের তৃতীয় সন্তান।

তাইবুর রহমান টেকেরঘাট হয়ে ইন্ডিয়ান বালাট ইন্ডিয়ান শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন। শরণার্থী শিবিরে ২ রাত কাটানোর পর পাথরঘাট মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় স্থান ইয়ুথ ক্যাম্পে অবস্থান করেন। ক্যাম্পে ৫ দিন অবস্থানের পর গাড়ী করে সিলং ইকো ওয়ান ২৮ এর প্রশিক্ষণ করে সেলা সাবসেক্টর অধীন সেকশন কমান্ডার হিসেবে বিভিন্ন মিশনে এফ এফ হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। ছাতক, বুগলাই, টেংরা, আদাটিলা, বাঁশতলাসহ কয়েকটি স্থানে সম্মুখ যুদ্ধ করেন তিনি।

টেংরাটিলা সম্মুখ যুদ্ধে সাথে থাকা ৬ জন শহীদ হলেও প্রাণে বেঁচে যান তিনিসহ বাকিরা। যুদ্ধের কথা স্মরণ করলে এখনও গা শিউরে উঠে তাঁর। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর ২২ বছরের টগবগে যুবক এখন বয়সের ভারে ন্যূজ। কমেনি দেশপ্রেমিক যুদ্ধার যুদ্ধকালীন তেজ। যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে তাইবুর রহমান বলেন, আমি দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করেছি। পাক হানাদারের বুলেটের ভয় করিনি। ৪৭ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি পাইনি। অনেক চেষ্টা তদবির করে আজ আমি ক্লান্ত। ভোগছি মরণব্যাধী রোগে। কবে অপারে চলে যাব তার ঠিক নেই। মরার আগে শুধু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি চাই।

তাইবুর রহমানের ব্যাপারে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার আতাউর রহমান বলেন, তাইবুর রহমানের নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নাই। তবে তার যুদ্ধে অংশগ্রহণের ব্যাপারে অনেকের কাছ থেকে শুনেছি। নাম অর্ন্তভুক্তিকরণের জন্য তিনি অনেকবার আমার কাছে এসেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা হাল নাগাদের বিষয়ে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করা হয়েছিল। এখন তা বন্ধ আছে। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার ও মুক্তিযোদ্ধা বাচাই কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন,যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে থাকলে স্বীকৃতি পাওয়াটা একজন মুক্তিযোদ্ধার প্রাপ্য অধিকার। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অর্ন্তভুক্তি করতে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ করা হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাক্ষ্যগ্রহণ ও যাচাই-বাচাই প্রক্রিয়া চলমান অবস্থায় ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির জন্য আদালতে মামলা হওয়ায় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তাইবুর রহমানের ব্যাপারে তিনি বলেন, তাইবুর রহামানের ব্যাপারটি দুঃখজনক। নতুন করে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করা হলে তিনি যদি নিয়মতান্ত্রিক আবেদন করেন তাহলে তালিকায় অর্ন্তভুক্তিতে আসতে পারবেন।

মুক্তিযুদ্ধ চর্চা ও গভেষণা কেন্দ্রের আহবায়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু বলেন,তাইবুর রহমানের স্বীকৃতি না পাওয়াটি দুঃখজনক। মুক্তিযোদ্ধা হালনাগাদে ব্যাপক দুর্নীতি হওয়ায় প্রক্রিয়াটি বাতিল হয়ে যায়। এখন আর নতুন করে তালিকা প্রনয়ণ হবে কি না জানি না। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে স্বীকৃতিস্বরূপ যথাযত সম্মান প্রদর্শন করতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/০৮ জানুয়ারি ২০১৮/এসএনএ/ডিজেএস

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন

সাম্প্রতিক সুনামগঞ্জ খবর

  •   জগন্নাথপুরের মোশাহিদের স্বপ্ন ঝড়ল ফ্রান্সের সড়কে
  •   তাহিরপুরে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
  •   দিরাইয়ে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা জাতীয় ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন
  •   দক্ষিণ সুনামগঞ্জে এসএসসি ১৪ ব্যাচের মিলনমেলা
  •   দোয়ারাবাজারে ৩শ’ টাকার জন্য সংঘর্ষে আহত ব্যক্তির মৃত্যু, আটক ২
  •   সুনামগঞ্জে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে যুবক খুন
  •   দক্ষিণ সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট'র উদ্বোধন করলেন পরিকল্পনামন্ত্রী
  •   ছাতকে ভাবির সাথে দেবরের পরকিয়া, ভাতিজা খুন
  •   দোয়ারাবাজারে হামলায় সম্ভাব্য ইউপি সদস্য প্রার্থী আহত, উত্তেজনা
  •   গ্রামে এসে নৌকা নিয়ে ঘুরলেন পরিকল্পনামন্ত্রী