আজ শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং
নিজস্ব প্রতিবেদক :: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তবর্তী বাগলী ও মধ্যনগরের বাঙ্গালভিটা সড়কটির ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ইটের সড়কটি দুই বছর যেতে না যেতেই চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইট উঠে ভেঙে চুরমার হয়ে এদিক সেদিকে পড়ে রয়েছে।
কাজ অসম্পন্ন রেখেই ঠিকাদার চুড়ান্ত বিল নিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে চাপ প্রয়োগ করা অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা, দূর্গাপুর উপজেলাবাসীর সঙ্গে সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার যোগাযোগ জন্য এবং সীমান্তের বিজিবির নিয়মিত টহলের জন্য ২০১৯ সালে বাগলী-বাঙ্গালভিটার একমাত্র সড়কটির ১৫ শ’ মিটার (প্রায় দেড় কিলোমিটার) জায়গায় ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে ইটসলিংয়ের কাজ করা হয়। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস এই কাজের তদারকি করেন। কাজের শুরুতেই হক এন্টারপ্রাইজ নামের একটি মাত্র ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিয়ে কাজ শুরু করে।
তাহিরপুর উপজেলার হক এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি এই কাজ করার সময়ে নিম্নমানের ইট এবং ইটের নীচে শর্ত মোতাবেক বালু দেয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। সড়কের দুই পাশে মাটিও ঠিকমত দেয়া হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, সীমান্তের পাহাড়ী ঢল এবং হাওরের ঢেউ ঠেকাতে সড়কের দুই পাশে বাঁশের আড় ও প্যালাসেটিং প্রাক্কলন অনুযায়ী করা হয়নি। এ কারণে সড়কটির অনেক অংশই ভেঙে চলাচল অনুযোগী হয়ে পড়েছে ।
বাগলী গ্রামের বাসিন্দা নূর ইসলাম জানান, সীমান্তের মানুষের স্বপ্নের সড়ক এটি। সড়কের কাজ করার সময় নিম্ন মানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। ইটের নীচে পরিমান মত বালু দেয়া হয়নি। দুই পাশে দুর্বা লাগানোর কথা ছিল, তাও করা হয়নি। সড়কের অনেক স্থানে মাটি কম দেয়া হয়েছে। বাঁশ এবং আড়ের প্যালাসেটিংও দুর্বল হয়েছে। এ কারণে সড়কটি নির্মাণের পরই ভেঙে গেছে।
একই গ্রামের মহিউদ্দিন মানিক বলেন, কয়েকদিন যানবাহন চলার পরই সড়কটি চলাচল অনুপযোগি হয়ে পড়েছে ।
বাগলী গ্রামের বাসিন্দা ইউসুফ আলী বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের অনেক ইট পাউডার হয়ে গেছে। বর্ষায় এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলা দূরের কথা, পায়ে হেটে চলাচল করা দায়।
হক এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার মঈনুল হক বলেন, এই কাজে আমার সঙ্গে তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর খোকনও রয়েছেন। যেহেতু এটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দুই পাশে মাটি দেয়ার জন্য আমাদের অতিরিক্ত টাকা দেয়া হয়েছে। একবছর সড়কটিকে নানাভাবে সংস্কার করে ভাল রেখেছি আমরা। বন্যায় সড়কের ক্ষতি হওয়ায় আমরা সংস্কার করে দিয়েছি। এখনও সড়কটি ভালই আছে, যে কেউ সরেজমিনে এসে দেখে যেতে পারেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর খোকন বলেন, সড়কে কোন অনিয়ম হয়নি। রাজনৈতিক প্রতিহিসায় আমার দলেরই কেউ কেউ এই সড়ককে কাজে লাগিয়ে আমাদের আর্থিক হয়রানি করার চেষ্টা করছে। আমরা কাজ ভাল করেছি। সড়কের ভাঙাচোরা অংশ মেরামত করে দিয়েছি।
তাহিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে যথাযত প্রক্রিয়ায় দরপত্র আহ্বান শেষে এই কাজের ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে। সড়কটি করার পর বন্যা হয়েছে। বন্যায় সড়কের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা সেটি মেরামত করে দেবার জন্য বলেছি।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ বলেন, এই সড়কের যে ক্ষতি হয়েছে, বা যে অংশ ভেঙেছে, সেটি মেরামত করে না দিলে জামানতের টাকা ছাড় দেওয়া হবে না।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্দু চৌধুরী বাবুল বলেন, উন্নয়ন কাজে অনিয়ম হলে মেনে নেয়া যাবে না। অনিয়ম হলে চূড়ান্ত বিলের টাকা ছাড় দেয়া হবে না।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/এমএআর/এসডি-৭