আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

অস্ট্রেলিয়ার সাথে বাংলাদেশের ম্যাচ নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৬-২৩ ১৯:০০:৩৭

ট্রেন্টব্রিজ ক্রিকেট মাঠ থেকে ফিরে আব্দুর রশিদ :: অস্ট্রেলিয়ার সাথে বাংলাদেশের ম্যাচ নিয়ে দর্শক এবং ক্রিকেট বোদ্ধা কারো মধ্যেই তেমন অসন্তোষ নেই। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল অনেক শক্তিশালী দল, তারা তাদের সামর্থ অনুযায়ী খেলেছে। বাংলাদেশও তাদের সামর্থ অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করেছে, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সাথে ফারাকটা ঘোচাতে পারে নাই।

আমাদের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বলে দিয়েছেন পরাজয়ের কারণ হচ্ছে ৩০/৪০টা রান আমরা বেশি দিয়েছি। আর সত্যিকার অর্থে অনাহূত এইসব রানই পার্থক্যটা গড়ে দিয়েছে।

মাঠে বসে খেলা দেখা আর টিভি পর্দায় বসে খেলা দেখার মধ্যে আসল পার্থক্য হচ্ছে, মাঠে বসে দেখলে খেলোয়াড়দের মতিগতি কিছুটা বুঝা যায়, খেলোয়াড়দের মধ্যকার রসায়ন কেমন তাও উপলব্ধি করা যায়।

বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার খেলা যারা মাঠে বসে দেখেছেন তাদের চোখে এমন কিছু ধরা পড়েছে যা টিভি স্ক্রিনে যারা খেলা দেখেছেন তাদের থেকে একটু বেশি। মাঠে উপস্থিত দর্শকদের দৃষ্টিকোণ থেকে অস্ট্রেলিয়ার সাথে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স এবং পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা যাক।

মাঠে উপস্থিত থেকে খেলা দেখেছেন সামুন আলী। ইংল্যান্ডে বসবাসকারী মিস্টার  সামুন আলী বলেন, তিনি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত প্রত্যেকটি ম্যাচ দেখেছেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সাথে অনুষ্ঠিত ঐ ম্যাচে তিনি কিছু জিনিস দেখে দারুণ অবাক হয়েছেন।

তাকে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে তা হল, মাঠে সাকিব আল হাসানের নিরব উপস্থিতি। সামুন জানান, আগের প্রত্যেকটি ম্যাচে বাংলাদেশের ফিল্ডিং সাজানো বা ওভারের মধ্যে ফিল্ডারদের অদল বদল করার ক্ষেত্রে সাকিবই অধিনায়কের সাথে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সাথে খেলায় সাকিব আল হাসান ছিলেন একদমই নিরব, যা এই দর্শকরা মেনে নিতে পারেন নি।

এমনকি আমরা যারা মাঠে বসে খেলা দেখেছি প্রায় সবার কাছেই সাকিবের চুপচাপ থাকাটা নজরে পড়েছে। সাকিব খুব মনোযোগ দিয়ে ফিল্ডিং করেছেন, বোলিং করেছেন, কিন্তু মাঠের মধ্যে তার ইন্টারেকশনটা অনুপস্থিত ছিল। নিয়মিত দর্শক হিসেবে সামুন আলীও ব্যাপারটা হজম করতে পারেন নি।

তিনি মনে করেন, কোন কারণে সাকিব সেদিন অসন্তুষ্ট ছিলেন। তার মনে হয়েছে, হয়তো টিম নির্বাচন নিয়েকোন ঝামেলা হয়েছিল। আর সাকিবের এমন নীরবতাতার পারফরমেন্সকে বাধাগ্রস্ত করেছে, যা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশ দলের উপর প্রভাব বিস্তার করে।

সামুন আলীর ধারণা বা বিশ্লেষণ হয়তো সত্যি না, আমরাও চাই এমন বিশ্লেষণ যেন সত্যি না হয়। তবে মাঠের মধ্যে সাকিবের এমন হঠাৎ নিরবতা পালন সত্যি উদ্বেগের।

২০০ মাইল দূর থেকে খেলা দেখতে আসা, খেলা পাগল বাদশা মিয়াও সাকিব আল হাসানের এমন নিরবতার কারণ খুঁজে পাননি! পূর্বেকার খেলা এবং অস্ট্রেলিয়ারসাথে খেলার মধ্যে সাকিবের এমন পার্থক্য রহস্যজনকই লেগেছে বাদশা মিয়ার কাছে। তিনিও এমন প্রশ্নের জবাব খঁজছেন। বাংলাদেশ দলের সেরাখেলোওয়ারের এমন নিভৃতচারিতা সবার মনেই জিজ্ঞাসার জন্ম দিতে পারে।

বাংলাদেশের খেলা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বাদশা মিয়া বলেন, বাংলাদেশ ২০/৩০টা রান তাদের অতি স্লো ‘রানিং দ্যা বিটুইন উইকেটে’র জন্যে নিতে পারে নাই। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে বুঝাপাড়াটা ভালো ছিলনা ঐদিন।

তিনি মনে করেন, বিশ্বকাপের মতো বড়মঞ্চে যেখানে ব্যাটসম্যানকে এক রানের জায়গায় দুইরান বের করার কৌশল খুঁজতে হয়; সেখানেবাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা দুই রানের জায়গায় একরান নিয়েছেন। সেদিন মাঠে উপস্থিত হাজার হাজার দর্শক বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের এমন ধীর গতির ‘রানিং দ্যা বিটুইন উইকেট’ দেখে চরম হতাশ হয়েছেন।

এমনকি সৌম্য সরকারের আউটাও ছিল তার আয়েসি মুভমেন্টের খেসারত। এমন টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়ার মত দলের সাথে একটু হেলাফেলা করার ফলাফল কেমন হয় তা সৌম্য সরকার ভালো বুঝেছেন। পুরো ম্যাচ জুড়ে বাংলাদেশের খেলোয়ারদের সাদামাটা শরীরী ভাষা দর্শকরা মেনে নিতে পারেননি।

আমরা মাঠে বসে স্পষ্টই দেখেছি, ফিল্ডিংয়ের সময়বাংলাদেশের ফিল্ডাররা আরেকটু সচেতন হলে কিছু রান তারা বাচাঁতে পারতেন। এক সময় তো মনে হয়েছে বাংলাদেশের কিছু খেলোওয়াড় অনেক ক্লান্ত হয়েগেছেন ! তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ছিল ‘আমরা আর পারিনা’ এমন একটা মনোভাবের। আমাদের সেরাব্যাটসম্যানদের একজন তামিম ইকবাল মনে হয় শুধু ব্যাটিং করার জন্যেই অপেক্ষা করেন! ফিল্ডিংও যে খেলার অংশ তা মনে হয় মাঝেমাঝে তামিম ইকবাল ভুলে যান। তামিম ইকবালের সেদিনের ফিল্ডিংয়ের মান কোনভাবেই পাস মার্ক পাবেনা। আবার আমাদের কিছুফিল্ডার শেষ পর্যন্ত তাদের সামর্থের সাক্ষর রেখেগেছেন পুরো মাঠ জুড়ে। বড় ম্যাচে বোলিং ব্যাটিংয়ের পাশাপাশী ফিল্ডিংও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেখেছি অস্ট্রেলিয়া তাদের উন্নতমানের ফিল্ডিং দিয়ে অনেকগুলো রান সেইভ করেছে, যা কি রকম প্রভাব ফেলেছে আমাদের ব্যাটসম্যানদের উপর!

মাঠে কিছু দর্শক ছিলেন যারা মাশরাফি কে আওয়ামী লীগের এমপি হওয়াটা মেনে নিতে পারেন নাই, তারা সব সময় মাশরাফির ফিটনেস নিয়ে নেতিবাচক কথা বলেছেন। আবার বেশির ভাগ দর্শকমনে করেন, মাশরাফি আমাদের সম্পদ, তার মাঠে থাকাটাই মূল কথা। মাশরাফিই গোটা দলটার মধ্যে একটা সিম্ফনি তৈরী করে দেন যা দলটাকে জয়ের দিকে নিয়ে যায়, যদিও সেদিন মাশরাফী এমনটি করতে কোনো এক অজানা কারণে ব্যর্থ  হয়েছেন।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আমাদের হারের অনেক কারণ রয়েছে। তারমধ্যে অন্যতম হল অজি ব্যাটসম্যানরা তাদের টেম্পারমেন্ট দেখিয়েছেন। ৩৮১ রান অতিক্রম করা মিশেল স্টার্ক এবং প্যাট কামিন্সদের বিরুদ্ধে মোটেও সহজ কথা নয়। রানের পাহাড় টপকাতে না পারলেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের পাহাড় অতিক্রমের অদম্য মনোভাব আগামী ম্যাচগুলোর জন্যে রসদ যোগাবে ঠিকই।

প্রত্যেক পরাজয়ই নানা ধরণের প্রশ্ন উত্থাপন করে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পরাজয়ের ফলে সৃষ্ট প্রশ্নগুলো যেন নির্জীব জিজ্ঞাসাই শুধু হয়ে থাকে। সোমবার (২৪ জুন) আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলায় যেন উজ্জীবিত একবাংলাদেশকে দেখতে পাই।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ২৩ জুন ২০১৯/এআর/এক

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন

সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য খবর

  •   ফিলিস্তিনে হামলার প্রতিবাদে ব্রিটেনে বিক্ষোভ
  •   রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে ইউরোপের ১১ দেশের প্রবাসী নাগরিক সমাজের বিবৃতি
  •   রয়েল টাইগার স্পোর্টস ক্লাবের স্পনসরশিপের এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত
  •   টাওয়ার হ্যামলেটসের আবারো স্পিকার হলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আহবাব
  •   যুক্তরাজ্যের নর্থাম্পটনে পাঁচ বাঙালি কাউন্সিলর নির্বাচিত
  •   সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের নি:শ্বর্ত মুক্তির দাবীতে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের মানবন্ধন
  •   রো‌জিনার মু‌ক্তির দাবী‌তে লন্ড‌নে সাংবা‌দিক‌রা রাজপ‌থে
  •   ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে ব্রিটেনের নর্থাম্পটনে বিক্ষোভ
  •   ২২দিনে দৌঁড়ে লন্ডনে পৌঁছালেন আফরোজ মিয়া
  •   ৩১৩ কিলোমিটার দৌড়ে ৮ মে লন্ডন পৌঁছাবেন সিলেটের আফরোজ মিয়া