আজ বুধবার, ০৮ মে ২০২৪ ইং
মুনজের অাহমদ চৌধুরী :: সাংবাদিকতা অামার জীবনে ক্রমিকের সূত্রে দ্বিতীয় '‘প্রেম’ অার অাজীবনের ভালবাসার ঠিকানা। জীবনের প্রথম ও এ অবধি জীবনের দীর্ঘতম সময় ধরে অায়ের উৎস। এই প্রবাসে বসেও বাংলাদেশ থেকে রীতিমত বাংলাদেশের ইনকাম ট্যাক্স পরিশোধ করে বেতন অানার গর্বের পথ অামায় করে দিয়েছে সাংবাদিকতা।
সাংবাদিকতা অামাকে মানুষ হিসেবে অাত্মমর্যাদায় বাঁচতে শিখিয়েছে। সত্যের জন্য সোচ্চার হবার বোধের জন্ম দিয়েছিল বুকের ভেতরে। জানি, হয়নি কিছুই। হইনিও ‘কিছু একটা'’। সে অামার অযোগ্যতা, অপারগতা। ভাগ্যের এত উদারতা থাকার পরও নিজের জীবনের সীমাহীন অপচয়ের কারণে পৌঁছুতে পারি নি গন্তব্যে। পারবোও না জানি।
তবে সে নিয়ে দুঃখও নেই অামার। কেন জানেন? কেননা, সাংবাদিকতার পথ ধরে টুকটাক লেখালেখি অামাকে খুব কিছু সংখ্যক, খুব সাধারণ কিছু ,‘সংখ্যায় স্বল্প’ মানুষের অনন্য, অকৃত্রিম ভালবাসা পাবার অসাধারণ অার অসামান্য পথটি করে দিয়েছে। সেই ভালবাসা- জীবনে কক্ষপথের দীর্ঘসূত্রীতায় কিছুটা হলেও অামাকে ‘ধৈর্যশীল’ হতে শিখিয়েছে। এ পেশার কিছু শ্রদ্ধেয়,অনুকরণীয় অগ্রজ অার স্নেহের অালোকিত মফস্বলের অনুজের পরম ‘ভালবাসা’র বাহুডোরে ‘ভাই’ হবার পথ করে দিয়েছে। ২০০৭ সালে চার লাখ সারকুলেশনের তখনকার দৈনিক অামাদের সময়ে মফস্বল থেকে শ্রদ্বেয় নাঈমুল ইসলাম খান অার দুলাল অাহমদ চৌধুরীর তীব্র ফাস্টপেজে স্থানসংকটেও সপ্তাহে ৬ দিন ‘সিঙ্গেল বক্স’ কলামে ‘ভাজের উপর’ থাকবার পথ করে দিয়েছে এ পেশা। নওগারঁ, কুড়িগ্রামের বা লন্ডনের পাঠকের সাথে অধমের নামটির পরিচয় কখনোই এভাবে হত না। যদি না গুরু নাঈমুল ইসলাম খানের দু’লাইনেও বাইনেম না থাকত।
জীবন নিয়ে অামি সন্তুষ্ট। অায়ু অার জীবনের এত অপচয়ের পর যেটুকু সঞ্চয় অামার জীবনের, যে ‘কিছু’ মানুষের ভালবাসা তাও অাল্লাহর দান। ‘কিচ্ছু’ হতে না পারলেও জীবনে মুহুর্তের জন্য অার্থিকভাবে অসততা করিনি, টাকার কাছে কলম বিক্রি করিনি। যতটা ‘ভালো’ থাকলে নিজেকে দাঁড় করানো যায় ‘ভালো মানুষের দলে’, নিশ্চিতই জানি,অামার বসবাস তার চেয়ে বহুগুণ দূরে।
নিজের যাতনাকে সাথী করেও কাছের দু-চারজন মানুষের সমস্যায় একটু পাশে দাঁড়াবার অাজকের অভ্যাস, সেটারও জন্ম অন্তরে দিয়েছে মফস্বলে মানবিকতার, মাঠের ক্ষেতের, মেঠো পথের শুরুর দিনগুলির সাংবাদিকতা। পৌপিতার খানবাহাদুর উপাধি থাকলেও মরহুম বাবা ছিলেন সৎ একজন নিম্নবিত্ত অাইনজীবী। এই যে অামার এ দেশে এত সময় থাকবার পরও বলবার মতো কোন সম্পদ নেই। নেই দেশেও। কত্ত কিছু নেই। কিন্তু, তাতেও যে কী করে ‘খুব অানন্দে’ বাচঁতে হয় সেটাও কিন্ত শিখিয়েছে খুচরো-ভাংতি লেখালেখিরই অানন্দ। ভাগ্যিস করুণাময়, তুমি অামায় বহু কিছু হতে না লিখে, ভাগ্যে সাংবাদিকতা, টুকটাক লেখালেখির ভাগ্য লিখেছিলে। না হলে, অন্তত এ খুব অল্প পাঠকের ‘অনেক’ ও ‘অাসল’ ভালবাসায় বাচঁবার অসামান্য সুযোগটি মিলত না। স্বীকার করে বলি, এখনো নিজেকে সাংবাদিক মনে করি না, ভাবি জার্নিম্যান অফ জার্নালিজম বা সংবাদকর্মী।
ভালবাসা অাপনাদের জন্য। ভালবাসি জীবনকে। প্রাণের সৌন্দর্যে সুন্দরী অাকাঙ্খিত রমণী দেখবার পরম অানন্দের মুহুর্তের মতোন করে অারো কিছুটা কাল তোমাকে ভালবাসতে চাই; সাংবাদিকতা।
এই যে অনিয়মের জীবন ভেঙ্গে মাসের বেতনটা পাবার সংবাদ পাঠানোর চাকরি ঠিক রাখা, গান শুনবার সময় বাঁচিয়ে, কিছুটা পড়াশুনো করবার অভ্যাসের সময় বাঁচিয়ে, সে ভালবাসাও শিখিয়েছে অামায় ‘দায়বদ্ধতা’। মানুষ হয়ে সমাজে জন্ম নেবার কমিটমেন্ট থেকে।
যে কথাগুলো, অসঙ্গতিগুলো নানা সমীকরণে অনেকে লিখতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না, সেই সত্যগুলো লিখে যেতে চাই।
অামি লেখালেখি অার গানে নিজেকে হারাই, অাবার ফিরেও পাই। অামি কখনো বলি না, ‘এমন ঘটনা বা ভুল অামার জীবনে কখনো ঘটেনি’। বরং ভুলগুলোও অামার শিক্ষক। কেন জানি কমফোর্ট জোনের ভেতরে নয়, বাইরেই অামি স্বাচ্ছন্দ্য পাই। কেননা কমফোর্ট জোনের ভেতরে অনিচ্ছার অাগাছাও জন্মাতে পারে না।
জীবন প্রতিনিয়ত অামাদের অবাক করে, শেখায়, ভাবায় নতুন করে।
যদি পুনর্জন্ম বলে কিছু থাকবার থাকে, অামি করুণাময়ের কাছে ‘লেখালেখির ছাত্র’ হবার ভাগ্য নিয়ে জন্মাবার খালি চাই। নিজের মতোন করে সেলফোনের, কিপ্যাডের ডক অার ডক্সের যুক্তাক্ষর ভেঙ্গে যাবার বেদনা নিয়ে, অতটা মততা ও যাতনা নিয়ে নিয়ে ‘শুধু লিখে যেতে চাই’। অামার নিজের ভাবনা অার বিবেকের কাছে সৎ থেকে লিখে যেতে যেতে চিরকালের মতো থেমে যেতে চাই। এরপরও চাই।
হ্যাঁ, সত্যি মরবার পরও না অামার একটা চাওয়া অাছে। অামাকে অার অামার খুচরো-ভাংতি লেখালেখি যাঁরা ভালবাসেন অাসলেই হৃদয় থেকে, এমন চারজন ‘অাসল ভালবাসা’ সিক্ত মানুষের কাধে করে খাটিয়ায় চেপে ঘুমাতে চাই মাটির ঠিকানায়।
খুব নিজের কথাগুলি বলবার এ চিঠি অাসলে পাঠাবার কথা ছিলো প্রেমিকার কাছে। সে অামার ভাগ্যে নেই। সবার বোধহয় সবকিছু থাকতেও নেই। কিছু বেদনাকে প্রেরণা হয়েই বোধকরি ফিরতে হয় কলমের কাছে, মগজের ভাজে।
হঠাৎ ভাবনা হলো, অাচ্ছা তাহলে চিঠিটা কাকে পড়তে দিই?
ও অারেকটা কথা, কিছুদিন ধরে অামার লেখা প্রায় কলামগুলো নিয়মিত কলামপ্রতি টাকা দেওয়া পত্রিকা রেখে কম পুঁজির স্বপ্নবাজ বন্ধুবর দুই সম্পাদককে দিচ্ছি। তাদের পত্রিকাকে দিচ্ছি এ কারনেই যে, অামার জন্মমাটি সিলেটের অন্তত ‘সিলেটভিউ২৪ডটকম’র শাহ্ দিদার আলম নবেল অার ‘এইবেলা’র অাজিজুল ইসলামের মতো স্বপ্নবাজদের স্বপ্ন দেখবার ‘সাহস’টার বেহিসেবী সহযাত্রী হতে চাই। স্বপ্নগুলির কথা না হয় নাই বা বেচলাম পুঁজির টাকার কাছে। খবর বিক্রি তো করছিই, সে জীবিকার টানে।
জানি এ লেখাও অামি সরাসরি ফেসবুকের শরীরে ছাপলে কেউ বঞ্চিত হবেন সংখ্যায় স্বল্প কিছু পাঠকের লাইক থেকে। গুগল অার ফেসবুক থেকে অামার ব্যাক্তিগত চিঠিটা পড়বার বিনিময়ে কিছু ডলার বাংলাদেশের ইনকাম হবার সুযোগটা হাতটা করে দিক, সেটাই চাই। ছোট সস্বপ্নের সৎযাত্রী হয়ে অামৃত্যু এভাবে অানন্দে বাচঁতে চাই। কী করবো, লেখালেখির চেয়ে বেশি অানন্দের উৎস এখনো যে খুজেঁ পাইনি।
অাচ্ছা, মাঝে মাঝে ভাবি, খুব বেশিই কি চাই?
নতুন বছর সবার জীবনে বয়ে অানুক শান্তির বারতা।
লন্ডন, ১ জানুয়ারি ২০১৮।
লেখক: প্রবাসী সাংবাদিক
সদস্য,দ রাইটার্স গীল্ড অব গ্রেট ব্রিটেন।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১ জানুয়ারি ২০১৭/আরআই-কে