আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বর্ণবাদ ধারণায় ভয়ংকর এক কালো ধারণা || এম.আর.বাবু

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০১-২৭ ২১:১৩:২৪

লাল, নীল, কালো সবই লাগে ভালো। কিন্তু বর্ণবাদের কথা আসলে বলি, কালো তুমি অন্ধকার, তোমাকে দেখতে লাগে ভয়, না জানি তুমি কতো ঝামেলাময়।

বর্ণবাদের পক্ষে নই, তবু কখন যে কিভাবে বর্ণবাদীদের পক্ষের শক্তির মধ্যে পড়ে গেছি তা নিজেও জানি না। তবে কয়েকটি মারাত্মক কিছু কারণে এই বর্ণবাদের আলো আঁধারের খেলায় আসতে হল।

প্রথম আসি কিছু একটি নির্দিষ্ট জাতিকে সিলেক্ট করি, যেমন- মানুষ। মানুষের মধ্যে আছে পুরুষ এবং নারী। তারপর টার্গেট করি নারী জাতিকে। এবার নারী জাতির মধ্যে পার্থক্য করি, তাহলে দেখবো নারীদের মধ্যে কালো এবং সাদা কিংবা তথাকথিত সাদা চামড়ার সুন্দরী বলা হয়ে থাকে। যা হউক, কালো চামড়ার ব্ল্যাক বিউটিফুল জাতি নিয়ে আলোচনা করি।

আমার লেখায় এতক্ষণে বুঝতে পাচ্ছেন, ব্ল্যাক বিউটিদের টার্গেট করে লিখা। তাই বুঝতে পারছেন, আগেই বলেছিলাম যে আমি বর্ণবাদের পক্ষে। তাহলে হিসেব পরিষ্কার ব্ল্যাক বিউটিদের জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে না। তারপরও হয়তো কিছুটা নিরেপেক্ষ থাকার চেষ্টা করব। তবে লিখার শেষে অংশে চমক রয়েছে।

চাঁদ তুমি যতই সুন্দর হও না কেন
অন্ধকার ছাড়া তুমি বড়ই অর্থহীন
তারপরও অন্ধকার তুমি কালো
আর চাঁদ তোমায় দেখতে লাগে বড় ভালো।

হয়তো কবিতার ৪ লাইনের মধ্যে শেষের দু’লাইন লিখাকে প্রভাবিত করতে পারে। যদি বুঝতে সমস্যা না হয়, তাহলে মনে করতে পারেন এটাই লিখার মূলবক্তব্য। কিন্তু এই লিখা দিয়ে কী পাঠকের মনে কালো মেয়ে সম্পর্কে কিছু ধারণা দেওয়া যাবে না, তাই আরো গভীর আলোচনা করতেই হবে। না করলে যে আর পারি না।

কাব্যিক দুনিয়ায় আমার লিখা এই যে কয়েকজন পড়ছেন, তার মধ্যে হয়ত বেশিরভাগ পাঠক পুরো লিখা না পড়েই আমার ঘুরপাক লিখা দেখেই পুরো লিখা না পড়েই পালিয়েছেন। তাহা আমি যথার্থই অনুধাবন করতে পারছি। অনেকের আবার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। তারপর যে কয়েকজন পাঠক গল্পের শেষ পর্যন্ত পড়বেন, তারা হয়তো নিজেরা আওলা হবেন, নয়তো আমাকে দোষারোপ করবেন, নয়তো নিজেদের দোষারোপ করবেন। তা ভেবেই আমার হাসি পাচ্ছে। কিন্তু আসলেই লিখাটা অনেক স্পর্শকাতর বিষয়। বারবার মন না লিখতে চাইলেও লিখব বলে বায়না ধরেছি। কারণ আমার মতই কিছু মানুষ চায় কালো মেয়ে নিয়ে কিছু জানতে। যা হউক আর লিখা বাড়াব না, মূল আলোচনায় ফিরে আসছি। আশা করি ভালো অথবা খারাপ দুটো এবং বিনামূল্যে বিরক্তি উপভোগ করবেন আমার লিখায়।

কালো মেয়ে কথাটি শুনলেই অনেকেই ভয়ে পালান। আর বিয়ের সময় অনেকেই কালো যেন মেনেই নেবে না, তার যেন ফর্সা সাদা চামড়ার মেয়ে না হলেই হবে না। আরে ভাই, সমাজে কী কালো এতোই বেমানান হয়ে গেল নাকি। না তা একেবারে নয়। কিন্তু সমাজে আমরা অনেক বৈষম্য দেখে থাকি, বিয়ের সময় মেয়ে একটু কালো হলে কত কথা শুনতে হয়। আর কালো মেয়ের চেয়ে সাদা চামড়া সবাই বেশি খুঁজে। আর এর মধ্যে চামড়া একটু বেশি কালো হলেই তো আর কথাই নেই। এই কালো মেয়েকে কত কথা শুনতে হয়, যা শুনে অনেক সময় নিজেকে বলতে হয় আমরা মানুষ নাকি অন্য কিছু। এমনো হয় সমাজের কিছু লোক অতিরিক্ত কালো হওয়ার কারণে মেয়েটাকে ‘পেতিœ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন আর কথায় কথায় সামান্য কারণে তাদের অপয়া অলক্ষী আরো কতকিছু বলা হয় তা প্রকাশ করলে কালো মেয়েদের দুঃখ বাড়বেই বরং কমবে না।

অনেক কালো মেয়ের সংসারজীবনে শুধু এই গায়ের রঙ কালো হওয়ার কারণেই অনেক কিছুই শুনতে হয়। যা হউক বিস্তারিত বর্ণনা দিতে হবে না। কেননা বর্তমান সমাজে কালো আর সাদা চামড়ার বৈষম্য আপনারা নিজেরাও জানেন। আপনারা নিজেও এরকম বৈষম্যের অনেক ঘটনার সাক্ষী। আর এমন ঘটনা হয়তো দেখেছেন যে কালো রংয়ের মেয়ে অনেক সময় অনেক স্বামীর পছন্দ হয় না। পরবর্তীকালে স্বামী আরেকটি সুন্দর মেয়ে বিয়ে করেছেন সাদা চামড়ার। এরকম ঘটনা অহরহ উদাহরণ রয়েছে প্রচলিত সমাজে।

তাহলে কী সমাজে কালো মেয়ে কী খুবই বেমানান। নাকি কালো হয়ে জন্ম নেওয়াটাই অপরাধ। এবার আরেকটু বলি যারা কালো দেখলেই ঘৃণা করেন তাদের উদ্দেশ্যে করেই বলছি। মানুষ হিসেবে আরেকজন মানুষকে দেখুন ঐ কালো মেয়েটাকে অনেক সুন্দর লাগবে শুধু দেখার মধ্যে পার্থক্য করা বদলালেই দেখবেন সবকিছুই সুন্দর হয়ে যাবে।

হিসেব করলেই দেখবেন, কালো মেয়েরা সংসার এবং পরিবারকে অনেক বেশি ভালোবাসে। আর সেদিক থেকে সাদা চামড়ার মেয়েরা ব্ল্যাক বিউটিদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। হয়তো কালো মেয়েরা তাদের চেহেরা কালো থাকায় সহজে সকলের মন জয় কারতে পারে না। তাই হয়তো সকলের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য জন্য সকলের প্রিয় হবার জন্য সবার সাথে মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করে যে কারণেই বলা হয় “জাতের মেয়ে কালো ভালো”।

তবে লিখার শুরুতে পাঠকরে যা বুঝেছেন অনেকের ধারণা এখন বদলে গেছে। হ্যাঁ, আপনার ধারণা বদলাতে পারে। আমি কিন্তু প্রথম দিকে লিখায় ইঙ্গিত দিয়েছিলাম নিরেপেক্ষ লিখার চেষ্টা করব। কিন্তু কী করব ব্ল্যাক বিউটিদের জীবনে এত বৈষম্য দেখে আমার লিখায় তাদের নিয়ে আরো বৈষম্য করতে বিবেকে বাঁধলো, তাই আর বৈষম্য করতে পারলাম না।

তবে ব্যক্তিগত কারণে কিছু অভিজ্ঞতার আলোকে কালো মেয়েদের সম্পর্কে কিছু লিখতে হয় যে কারণে কালো দেখলেই বলি আমায় ক্ষমা করে দাও।

কালোকে কালো দেখতেই সুন্দর যখন ব্ল্যাক বিউটি কুইনরা নিজের কালো চেহেরাকে ঢাকতে যেয়ে উজ্বলতা বৃদ্ধির চেষ্টা করে মেকআপ নিয়ে বাহিরে বের হন তখন খুবই খারাপ লাগে। এখন হয়তো অনেক সময় মেকআপের আড়ালে চেনা যায় না কে কালো আর কে সাদা। এখন মেকআপের যুগে সবাই সমান।

তবে সাদা চামড়ার মেয়েরা যদি সাজতে পারে তবে তাদের কী সাজতে মানা। কালো মেয়েদেরতো স্বাদ আহ্লাদ আছে। তাদেরও ইচ্ছে করে একটু সাজুগুজো করতে।

তবে খারাপ লাগে, তখন যখন ভাবে তারা শুধু গায়ের রং কালো বলে নিজেকে ছোট মনে করে আর চরম লজ্জা আর মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে ফর্সা হবার সাময়িক চেষ্টা করে। তখন খুব খারাপ লাগে। তখন সৃষ্টিকর্তাকে প্রশ্ন করতে খুব ইচ্ছে করে। কালো আর সাদা দিয়া কী বুঝাইলা প্রভু।

আরো খারাপ লাগে, যখন দেখি কোন কালো মেয়ের মধ্যে অহংকার আর দেমাগের সুর। তখন মনে হয় পৃথিবীর সব রাগ দিয়ে কালো উঠিয়ে দেই। তবে সেটা নিতান্ত আমার ভুল ধারণা। কারণ সাদা চামড়ার অনেক মেয়েরা অনেক সময় অহংকারী হয় আর হাতের সব আঙুল সমান হয় না। তাই স্বাভাবিক কারণেই কালো মেয়েদের মধ্যে কেউ অহংকার কিংবা দেমাগের সুরে কথা বললে কালো বলে আমরা ভাবি, দেখছো কালো মেয়ের কী দেমাগ!

তবে কালো মেয়েদের যতই আমি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রশংসা করি না কেন, আমি কিন্তু কালো মেয়েদের বোকাদের তালিকায় রেখেছি। তাদের সহজ সরলতাই তাদের বোকার দলে ভিড়িয়েছে। তাই সে কারণে আমকে দোষারোপ করার কোন সুযোগ নেই। কারণ কালো মেয়েরা বেশিরভাগ বোকা একমাত্র তাদের সহজ সরলতা গুণের কারণে।

তবে যারা আমার লিখার প্রথমদিকের ভালো করে পড়েছেন, তারা বুঝতেই পারছেন প্রথম দিকের লিখা আর শেষের দিকের লিখার মধ্যে অনেক পার্থক্য। ঠিক সেভাবে কালো মেয়ে আর সাদা চামড়ার মেয়ের মধ্যে পার্থক্য।

তাই কবিতায় কবি বলেছেন- “রাতের তারা তুই আলোকময়/অন্ধকার ছাড়া তুই শূন্যময়”। 

তাই আসুন মানুষকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করি। মানুষের মধ্যে মানুষকে খুঁজি। মানুষের মধ্যে পার্থক্য না করে সমাজকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাই। যতদিন বেঁচে আছি যেন মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকি। মানুষ হিসবে মানুষকে ভালোবাসি মানুষকে সম্মান করি।

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন