আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং
বিপ্লব কুমার পোদ্দার :: দেশ এবং জাতি হিসেবে অামাদের ত্যাগ অথবা অামাদের সম্পর্কের গভীরতা পৃথিবীব্যাপী স্বীকৃত। কিন্তু,তা সত্বেও অামাদের বর্তমান সরকার যখন গর্বের সাথে ঘোষনা করে ভারতের সাথে অামাদের সম্পর্ক যে কোন সময়ের চেয়ে গভীর, তখন অামার উদ্বেগ বেড়ে যায় অনেকখানি। অনেক অাগেই অামি অামার লেখায় রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলাম। তা যেন অাজ দুর্ভাগ্যজনকভাবে সত্য হতে চলেছে। কারন, বার্মা কিছুতেই তার অামার দেশে অাশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সন্মানজনকভাবে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। সেটা করছে তারা পদে পদে ইস্যু তৈরী করে। ব্রিটেন এবং রাশিয়ার মধ্যে যখন কুটনৈতিক যুদ্ধ ব্যাপক অাকার ধারন করে,তখন কিন্তু ব্রিটেনের বিশ্বস্ত বন্ধুরা যুক্তরাষ্ট্র অষ্ট্রেলিয়া সহ বিভিন্ন দেশ ব্রিটেনের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছে। কূটনৈতিক যুদ্ধে অংশ নিয়ে বন্ধুত্বের প্রমান দিচ্ছে। কিন্তু, হায়রে অামার পোড়া কপাল। অামার দেশের গভীরতম বন্ধুটি কোন সহযোগীতাই করলো না রোহিঙ্গা ইস্যুতে। বরং একটু গভীরে গেলে লক্ষ করা যায়,তারা যেন অামার দেশের এ সমস্যাকে তারা উপভোগই করছে। তাই,অামাদের পররাষ্ট্রনীতি কি বলবৎ থাকবে নাকি নতুন করে ঢেলে সাজানো হবে,এ প্রশ্ন এখন সরকারের কাছে।
খবরে দেখলাম,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শরীর ভালো নেই। অামার অনুরোধ, অাপনি শরীরের প্রতি যত্ন নেবেন। কারন সামনে অনেক গুরুত্বপুর্ন কাজ যা অাপনাকেই সমাধান করতে হবে। অাপা,অাপনি নিশ্চই বুঝতে পারেন,অসুস্থতা মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে। অার এ পরিনতি বোঝার জন্য,বড় কোন স্পেশালিষ্ট হবার দরকার অাছে বলে অামি মনে করি না। তাই অাপনার প্রতি অনুরোধ, সমস্ত রাগ ক্ষোভ অার দুঃখ বেদনা ভুলে গিয়ে অন্তত মানবধর্ম পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসেবে মেনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতাকে সহমর্মিতা এবং অাপনাদের পূর্বের দু পরিবারের ঘনিষ্টতাকে সন্মান জানাবেন। এবং অার কোন দেরী না করে,তাঁর দ্রুত মুক্তি ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। এখানে কোন রাজনৈতিক শর্ত বিবেচনায় না রাখাই অাপনার জন্য এবং দেশের জন্য মঙ্গল হবে। অামি যে বেগম খালেদা জিয়াকে চিনি,তার সামনে যদি শর্তযুক্ত মুক্তি অথবা মৃত্যুর প্রস্তাব রাখা হয়, তবে কিন্তু তিনি নিঃসংকোচে এবং নির্দিধায়,মৃত্যুকেই বেছে নেবেন।
সরকার তার পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে যাচ্ছে নির্বাচনের মহাসড়কে। কিন্তু, বিএনপি যেন কিছুতেই তার নিজস্ব কর্মসুচী ঠিক করতে পারছে না। অার এই না পারাটা কিন্তু বিএনপির অাগামীদিন অনিশ্চিত পথের দিকে ধাবিত করছে। তবে এর মধ্যে দলটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের সাম্প্রতিক দুয়েকটি কর্মকান্ড বিগত দিনের তার নেতিবাচক ভাবমুর্তি থেকে ইতিবাচক পথে ফিরিয়ে অানছে। যেমন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সাথে তার নিয়মিত যোগাযোগ এবং অাক্রান্ত ও গ্রেফতারকৃত কর্মীদের স্বজনদের সাথে অন্তত যোগাযোগটুকু। তবে এক্ষেত্রে একটু অনধিকার চর্চা করে অাপনাকে অনুরোধ করে বলতে চাই, অাপনি অাপনার বিগত কয়েক দিনের সিদ্বান্তের দিকে তাকিয়ে দেখুন। অাপনার অাশেপাশের লোকগুলো কিভাবে ভূল পথে পরিচালিত করতে চায়,কিন্তু ভাগ্যবশত ক্ষমতাহীন দুয়েকজনের কথা শুনে যে সিদ্বান্ত গ্রহন করছেন সে সিদ্বান্তগুলো কেমন হলো নিজেই বিচার করুন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে লন্ডনে দেয়া অাপনার ২৬ শে মার্চের বক্তব্য খুব সময়োপযোগী হয়েছে বলে অামি মনে করি না।অামার দৃষ্টিতে অাপনার বক্তব্য হওয়া উচিত ছিলো, পনেরো মিনিটের মধ্যে। যা জুড়ে থাকবার কথা ছিলো স্বাধীনতা,গনতন্ত্র বাচাঁনোর তাগিদে স্থবিরতায় পড়া সাংগঠনিক শক্তির প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুক্তির জন্য কিছু কর্মপরিকল্পনার নিরিখে কর্মসুচী ঘোষনা করা।
অনুরোধ অাপনার কাছে, শুনলাম বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাকি যুক্তরাজ্যে অাসছেন শিগগির। এবার গতানুগতিক কালো পট্টির জুতো,ঝাড়ু, ডিমের প্রতিবাদে নতুন কিছু করুন। যে প্রতিবাদটি বিশ্বের কাছে গ্রহনযোগ্য হয়,অার অাপনার ভাবমুর্তিও বাড়ে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে না যাওয়াটাই সরকারের জন্য বিএনপির একটি বার্তা হিসেবে কাজ করতে পারে। ভেবে দেখবেন। দল যদি সুসংগঠিত থাকে তবে মৃত্যু অথবা সন্ত্রাস কোন কিছুই অান্দোলনকে পদদলিত করতে পারে না। কারন,অাহত সৈনিকও চিকিৎসারত অবস্থায় ডাক্তারকে বলে, অামি কখন যুদ্ধের ময়দানে ফিরতে পারব। চেয়ে দেখুন,প্যালেষ্টাইনের দিকে।
খবরে দেখলাম, কংগ্রেসের পরে বিজেপিও অামন্ত্রন জানিয়েছে অাওয়ামীলীগ কে। তাই অামার কাছে মনে হয়, তথাকথিত লবিষ্ট বাদ দিয়ে নতুন মোড়কে বৈশাখের শুভলগ্নে ঘোষনা হোক স্বাধীনতা,গনতন্ত্রের নবধারার জয়গান।
অামি ব্যাক্তিজীবনে সংঘহীন,তবু সঙ্গীবিহীন নই। এ পরবাসেও হাজারো মানুষের দোয়া অার ভালবাসায় যেভাবে পথ চলছি,সেটাই জীবনের পরম পাওয়া।
বৈশাখ অাসছে সামনে। প্রার্থনা করি,বৈশাখী কোন ঝড় এসে উড়িয়ে নিক অামাদের সমাজ,রাজনীতি অার রাষ্ট্রের অাকাশে জমা সব কালো মেঘ।
লেখক: বিপ্লব কুমার পোদ্দার, লন্ডনে কর্মরত অাইনজীবি।